'গৃহিনী সম্মানী ভাতা' প্রদানের প্রস্তাব স্টাফ রিপোর্টার ::গৃহিনীদের কাজের রাষ্ট্রীয় সম্মানসূচক স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে, পর্যায়ক্রমে গৃহিনী সম্মানী ভাতা প্রদানের প্রস্তাব করেছে আমার মা ফাউন্ডেশন।

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে সংযুক্তির জন্য আমার মা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে এ প্রস্তাবনা দেয়া হয়।

বুধবার (৫ ডিসেম্বর) রাতে ফেসবুক লাইভে এসে আমার মা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জি এম কামরুল হাসান ‘গৃহিনী সম্মানী ভাতা’সহ ১০টি প্রস্তাবনাগুলো তুলে ধরেন।

এ সময় তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন সকল দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ন ও অংশগ্রহণ মূলক হবে এটা নিশ্চিত বলে মনে করছি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই রাজনৈতিক দল ও জোট সমুহের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষিত হতে যাচ্ছে।জনসাধারনের কল্যাণ বয়ে আনতে দলগুলোর ইশতেহারে আমাদের প্রস্তাবনাগুলো সংযুক্ত করার জন্য বিনিত অনুরোধ জ্ঞাপন করছি।

প্রস্তাবনা সমূহ হচ্ছে-
১. রাষ্ট্রীয় সম্মানসুচক গৃহিনী সম্মানী ভাতা প্রদানঃ

রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও জাতী গঠনে নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য ।রাষ্ট্র তথা সমাজের একক ইউনিট বা কেন্দ্রবৃন্দ হলো পরিবার। একটি পরিবারের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় যিনি সবর্দা অবদান রেখে থাকেন তিনি একজন গৃহিনী বা গৃহকর্তী। অথচ আমাদের প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থায় পরিবারের যিনি উর্পাজন করেন আমরা তাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকি। একজন মা বা গৃহিনী বা গৃহকর্তী যার কাজের আর্থিক মূল্যে মূল্যায়ন করা হয় না, বিধায় তার সাংসারিক কাজের যাবতীয় স্বীকৃতি অনুপ্রস্থিত।সামাজিক ভারসাম্র রক্ষার্থে পরিবার প্রথা রক্ষায় মানবিক মূল্যবোধ সৃষ্টির সুতিকাগার, পরিবারেকে রক্ষার স্বার্থে গৃহিনীদের কাজের রাষ্ট্রীয় সম্মানসূচক স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে, প্রযায়ক্রমে গৃহিনী সম্মানী ভাতা প্রদানের প্রস্তাব পেশ করছি। এটা করা গেলে যুগের পর যুগ অবহেলিত গৃহিনী মায়েদের কাজের প্রতি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করা হবে বলে মনে করছি।

২.ধর্মীয় সম্মানী ভাতাঃ

ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখার ক্ষেত্রে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এর পরিচালনা কারী যেমন, মসজিদের ইমাম মোয়াজ্জ্বিন ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী দের ধর্ম গুরুগণ অপরিসীম অবদান রেখে তাকেন। অথচ, তারাই কিনা সমাজের অবহেলিত ও অনগ্রসর জীবন যাপন করে আসছেন। বাংলাদেশ যেহেতু মুসলিম প্রধান দেশ তাই সকল মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জ্বিনকে ধর্মীয় সম্মানী ভাতা প্রদানের প্রস্তাব পেশ করছি।অন্যান্য ধর্ম উপসনালয়ের ক্ষেত্রে একই পদ্ধতি অনুসরণ করার প্রস্তাব রাখছি। এটা করা হলে দেশের মধ্যে সামাজিক সম্প্রিতি ও মানবিক মূল্যবোধ গড়ে উঠতে সহায়তা করবে।

৩.নিরাপদ গৃহকর্মী নিয়োগঃ

সমাজসেবা মন্ত্রনালয়ের অধীনে নিরাপদ গৃহকর্মী নিবন্ধন, প্রশিক্ষন ও নিয়োগ ব্যবস্থা চালু করা গেলে অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে । যদি সরকারী ব্যবস্থাপনায় গৃহকর্মী নিবন্ধন ও নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা যায় তবে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতায় সমাজের ছিন্নমূল ও অসহায় লোকের দুঃখ ও কষ্ট লাগব হবে।এই ক্ষেত্রে নিয়োগকারী পরিবার যে পরিমান টাকা বেতন প্রদান করবেন সরকার ঠিক একই পরিমান অর্থ উক্ত গৃহকর্মীর ব্যাংক হিসাবে পেনশন পদ্ধতিতে জমা করার মাধ্যমে নিরাপদ গৃহকর্মী নিয়োগ নিশ্চিত করতে পারেন।এতে দেশে থেকে দারীদ্রতা দূরীভূত হবে।

৪.ব্যাংক ড্রাফট বিহিন চাকুরির আবেদন করার সুযোগ প্রদানঃ

আমাদের দেশে একজন শিক্ষার্থী লেখাপড়া জীবন শেষে চাকুরীর আবেদন করার ক্ষেত্রে হাজার হাজার টাকার ব্রাংক ড্রাফট নামক এক মহামারী চক্করে নিমজ্জিত হন। এ যেন মরার উপর খারার গা অবস্থা। এই অবস্থা থেকে উত্তোরনের জন্য চাকুরীর আবেদন এর ক্ষেত্রে বিদ্যমান যে ব্যাংক ড্রাফ্ট পদ্ধতি বহাল আছে তা বাতিল করে, সম্পূর্ন ফ্রি আবেদন করার সুযোগ প্রদানের প্রস্তাব করছি।

৫.সরকারী অর্থ সহায়তায় বিদেশে লোকবল প্রেরণঃ

আমাদের দেশের অতি দরিদ্র ও অভাবী পরিবারের কর্মক্ষম বেকার যুব পুরুষ ও মহিলাদের ট্রেড ভিত্তিক প্রশিক্ষন এর আওতায় এনে সম্পূর্ন সরকারী নিয়ন্ত্রনে, সরকারী অর্থ সহায়তায় বিদেশে লোকবল প্রেরণ করা গেলে দেশের অর্থণীতিতে আরো অধিক বৈদিশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।অবশ্য সরকার যে অর্থ সহায়তা দিয়ে যাদের কে বিদেশে পাঠাবেন তাদের কাছ ২-৫ বছরের মধ্যে সুদ বিহিন মূল খরচ ফেরত নিতে পারবেন।এই পদ্ধতিতে বিদেশে লোক পাঠাতে নানা রকম প্রতারনার হাত থেকে দেশবাসী মুক্তি পাবে এবং বেকার সমস্যার সমাধানে সহায়তা করবে।

৬.সরকারী চাকরিতে বয়স প্রথার অবসানঃ

সরকারী চাকরি প্রার্থীর ক্ষেত্রে বয়স সীমার যে বাধ্যবাধকতা বিদ্যমান আছে তা রহিত করার মাধ্যমে যে কোন বাংলাদেশী তার মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে যে কোন বয়সে সরকারী চাকুরীতে প্রবেশের সুপারিশ করছি। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার অভিজ্ঞতা দিয়ে দেশের কল্যানে অবদান রাখতে সক্ষম হবেন।

৭.বেসরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে পেনশন পদ্ধতি চালু করাঃ

দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করে থাকেন। যাদের অধিকাংশই কর্মজীবন শেষে শূন্য হাতে ঘরে ফিরতে হয়।যা একটি রাষ্ট্রের সামাজিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় ধরনের একটি হুমকি স্বরুপ।দীর্ঘদিন যাবত চলে আসা এই বর্তমান পদ্ধতির অবসান ঘটিয়ে সকল বেসরকারী কর্মর্জীবীদের জন্য পেনশন পদ্ধতি চালু করার জোর সুপারিশ করছি। কেননা বেসরকারী কর্মজীবিরাও এ দেশের নাগরীক, দেশ গঠনে তাদের অবদান কম নয়, তাই এই দাবিটি ইশতেহারে অন্তর্ভক্ত করার অনুরোধ করছি।

৮.মোবাইল ও ইন্টারনেট চার্জ কমানোঃ

আপামর জনসাধারনের আর্থসামজিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে মোবাইল ও ইন্টারনেটের বর্তমান রেট অর্ধেক কমিয়ে আনার প্রস্তাবনা ইশতেহারে অন্তভূক্তি করার প্রস্তাব করছি।কারন এদেশে নেটওয়ার্ক কোম্পানী গুলো একচেটিয়া ব্যাবসা করে যাচ্ছে।

৯.নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনাঃ

দেশের প্রতিনিয়ত সড়ক দূঘটনা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এই প্রকোপ থেকে জাতিকে কিছুটা স্বস্তি দিতে নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা করা আব্যশক।প্রতিদিন সংবাদের একটা বড় অংশ জুড়েই থাকে এই সড়ক দূর্ঘটনার খবর,যা সত্যিই মর্মান্তিক! সড়ক ব্যাবস্থাপনা নিরাপদ করার লক্ষ্যে শিশু নারী ও শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা বাস সার্ভিস চালু করার প্রস্তাব ইশতেহারে অন্তভুক্ত করার সুপারিশ করছি। এছাড়া শিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক নাগরীক ও নারীদের জন্য হাপ ভাড়া পদ্ধতি চালু করার ও প্রস্তাবনা উপস্থাপন করছি।

১০.বিনীয়োগ বৃদ্ধি ও কর্ম সংস্থানে ব্যাংক ঋনে উৎসাহ সুদ প্রদানঃ

দেশে ব্যাপক ভাবে কর্মসংস্থান সৃস্টি করতে অধিক বিনিয়োগ দারকার। আর এই লক্ষে যেসব দেশীয় প্রতিস্ঠান যত বেশি লোকবল নিয়োগ করবে এবং বেশি মূলধন বিনিয়োগ করবে সেই সমস্থ প্রতিস্ঠানের ব্যাংক ঋণের ক্ষত্রে বিশেষ উৎসাহ দেওয়ার জন্য নাম মাত্র বা অল্প সুদে ঋন প্রদান করার প্রস্তাব ইশতেহারে সংযুক্তির অনুরোধ করছি।

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here