জুঁই জেসমিন
জুঁই জেসমিন

 

জুঁই জেসমিন :: গুজব নয় যেন গজব, এই ছেলেধরার ভয় সারা দেশের মানুষের আতংক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আতংকিত শিশুসহ, বড় ছোটো সবাই। আজ ছেলেধরার ভয়ে পাশের বাড়ির সুমনা ও শামীম দুই ভাই বোন প্রচণ্ড চিন্তিত, ভয়ে খাওয়াদাওয়া ছেড়ে দিয়েছে। সুমনার বাবা ক্যান্সার রোগে মারা যায় গত আশ্বিনে। সংসারের অভাব পূরণে সুমনার মা গার্মেন্টসে যায় কাজ করতে। রাস্তার ওপারে একলা তাদের টিনের বাড়ি আর কোনো বাড়ি নেই। গতকাল দুই ভাইবোন মাকে কেঁদেকেঁদে ফোন দেয়- যাতে মা বাড়ি আসে।

কাদের কাছে নাকি শুনেছে ধনতলা নামের এক গ্রামে রাতের বেলায় ঘরের বেড়া কেটে ছেলেধরারা, দুই বাপ ছেলের মাথা কেটে নিয়ে গেছে। আর যেখানে সেখানে থোকা থোকা লোকজনের ভিড়, শুধু ছেলে ধরার আলাপ। এসব শুনার পর ভাই বোনের বিষম চিন্তা -কি করে একলা টিনের ঘরে থাকবে? কি করে স্কুলে যাবে? চাচাদের বাড়িতে গিয়ে থাকলে ঘরের সব জিনিসপত্র যদি চুরি হয়ে যায়?

ভারী ভাবনা। পদ্মা সেতুতে নিষ্পাপ শিশুর তাজা রক্ত ও মুণ্ড লাগবে এটি গুজব হলেও ছেলেধরা ভেবে সন্দেহজনিত কারণে গণপিটুনিতে নির্দোষ মানুষের প্রাণ যাচ্ছে! যেমন গেল বাড্ডায় গণপিটুনিতে রেনুর প্রাণ। আরও অনেকের। রেনুর মেয়ে তাসমিন ও চার বছরের ছেলেটি কোনো খাবার মুখে দিচ্ছেনা, কখন আসবে তাদের মা! কি করুণ অবস্থা এই শিশু দুটির!

যখনই কোনো সেতু নির্মাণ হয় তখনই ছেলেধরা নামে গুজবে তোলপাড় সারাদেশ। এবারও তাই, তবে এবারের মতো গণপিটুনিতে কারও প্রাণ যায়নি কোনো কাল। গুজবেই ছিলো মাত্র। এবার পদ্মা সেতু নিয়েই গুজব- নিষ্পাপ শিশুর অসংখ্য মাথা আর তাজা রক্ত না দিলে নাকি পদ্মায় জল উঠবেনা? তাই সরকার অসংখ্য ছেলেধরা সারা দেশে ছেড়েছেন। অথচ পদ্মার জল ভাঙ্গনে হাজারো মানুষ পানিবন্দী। জনগণ কোনো ক্রমই মেনে নিতে চায়না এ শুধু মাত্র গুজব।

পদ্মা সেতুতে কোনো শিশুর মাথা লাগেনা, তা কোনো ক্রমই মানতে চায়না। মানতে চায়না জনগণ, সরকার ছেলেধরা ছাড়েনি। আজ এই আতংকে না পারছে বাবা মা নিজ কর্মসংস্থানে গিয়ে নিশ্চিন্তভাবে কাজ করতে, না পারছে শিশু বা কিশোর কিশোরীরা একাএকা স্কুলে যেতে। শিক্ষার্থীর বাবা মায়েরা মহামারি ভাবনায় দিন কাটছে। বেতার টেলিভিশনে প্রধান শিরোনাম ছেলেধরার সন্দেহে গণপিটুনিতে মৃত্যু বেশ কিছু এলাকায়। এখন কি করবে মানুষ? চলবে কোন নিরাপত্তায়?

গতকাল বাজার থেকে ফিরার সময় শুনি, তিনদিন নাকি বিদ্যুৎ থাকবেনা, রাতের অন্ধকারে ছেলেধরারা মাথা কেটে নিয়ে যাবে, খানিকটা হাসি পেলেও মানুষের চোখে মুখে হতাশার ছাপ দেখে খুব খারাপ লাগে। জিজ্ঞেস করি, কে বলছে বিদ্যুৎ থাকবেনা? উত্তর- মানুষজন বলছে! কেন এই গুজবের পিঠে গুজব, বুঝনা।

গুজবে প্রাণ যাচ্ছে, এর শেষ পরিণতি কোথায়? সরকার তথা প্রশাসন সন্দেহ জনিত কাউকে মারার নিষেধ দিয়েছেন, চলছে এ বিষয়ে মাইকিং কাউকে ছেলেধরা মনে হলে পুলিশের কাছে যেন তুলে দেয়। এ ব্যাপারে গ্রামের মানুষের সন্দেহ আরও বেড়ে চলেছে। পুলিশের হাতে তুলে দিলেই নাকি পুলিশ তাদের ছেড়ে দেবে। কারণ ‘ছেলেধরা’ নাকি সরকারের লোক।

রাজশাহীতে গলা কাটার ব্যাপার থেকে ছেলেধরার গুজব সারা দেশে তাল তবলা বাজছে। গুজব যে আজ গজব তথা মৃত্যু, তাসলিমা রেনুর মতোসহ বোবা,পাগল, অসহায় মানুষেরা গণপিটুনিতে মারা যাচ্ছে – এর সমাধান কোথায়?

সমাধান একটাই -স্কুল, কলেজ মাদ্রাসা, মন্দির, বাজার থেকে শুরু করে সব স্তরের জনগণকে বুঝানোর যথাযথ গণপ্রচারমূলক সন্দেহ ভাঙ্গন ব্যবস্থা নিতে হবে-তবেই হয়তো গুজব মুছবে। কম বেশি সবার হাতে হাতে স্মার্ট ফোন, ডিজিটাল প্লাটফরমে থাকা সত্তেও মন মানসিকতা ভাবনা, মান্ধাতার আমলের মতো, গুজবে বিশ্বাসী, চিল নিয়েছে কানে। ছেলেধরা মূলত গুজব মাত্র, ঠিক দেলোয়ার হোসেন সায়েদীকে চাঁদে দেখার মতো, আর কিছু নয় !

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here