কুষ্টিয়ায় গরু মোটাতাজাকরনে সাড়ে চার’শ কোটি টাকার বাণিজ্য হওয়ার সম্ভাবনা   কাঞ্চন কুমার, কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ কুষ্টিয়া প্রতিনিধিঃ কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কুষ্টিয়া জেলার বিভিন্ন এলাকার খামার ও কৃষক পর্যায়ে চলছে গরু মোটাতাজাকরণ। শেষ মুহুর্তে এখন ব্যস্ত সময় কাটছে খামারিদের। ঢাকায় কোরবানির পশুর হাটের গরুর একটা বড় অংশ আসে কুষ্টিয়া থেকে। এবার সাড়ে চার’শ কোটি টাকার বানিজ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কুষ্টিয়া জেলায় ৫২৩টি খামারে ও কৃষক পর্যায়ে অন্তত ৭৫ হাজার গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। বছরখানেক ধরে দেশী বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির গরু নিবিড় পরিচর্যায় প্রতিটিই এখন যথেষ্ট মোটাতাজা। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে শেষ সময়ের যত্ন-আত্তিতে ব্যস্ত খামারিরা।

খামারীরা বলছেন, শুধু বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য নয়, গরু সঠিকভাবে মোটাতাজা করাও লক্ষ্য। দেশী গরু মোটাতাজা করার কাজ শুরু হয় কোরবানির ঈদের পরপরই। প্রথমে রোগমুক্ত করার পর গরুকে খাওয়ানো হয় পুষ্টিকর খাবার।

এছাড়াও নিয়মিত চলে যত্নআত্তি। এলাকায় মোটাতাজা করা গরুর মাংসে কোনো ক্ষতিকর উপাদান নেই বলেও দাবি তাদের। প্রতিবছর ভারতীয় গরু অবাধে বাজারে আসায় ক্ষতির শিকার হচ্ছেন কৃষক ও খামারিরা।

পরপর কয়েক বছর আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে এ পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেকেই। তারপরও গরু মোটাতাজা করে কুষ্টিয়ায় অনেক পরিবার হয়েছেন স্বাবলম্বী। ভালো দাম পাওয়ার আশায় কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে কুষ্টিয়ায় গরুর খামারীরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে।

শেষ সময়ে খামারীরা গরুর পরিচর্যা ও বিভিন্ন হাটে নেওয়ার জন্য প্রস’তি নিচ্ছে। ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন হাটগুলোতে গরু উঠতে শুরু হয়েছে।

তবে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু দেশে না আসলে কুষ্টিয়ার খামারে পালিত গরুর ভালো দাম পাওয়ার আশা করছে খামারীরা। তথ্যসূত্রে জানা যায়,  মাংসের দাম ও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কুষ্টিয়ায় গরু মোটাতাজাকরণ  খামার গড়ে ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে খামারীদের। বাণিজ্যিকভাবে কয়েক হাজার গরু মোটাতাজাকরণ খামার গড়ে উঠেছে। কেউ শখের বশে, কেউ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে, কেউ সংসারে স্বচ্ছলতা আনতে এসব খামার গড়ে তুলেছে।

ঈদকে সামনে রেখে কোরবানীর পশু  বিক্রির উদ্দেশ্যে এ জেলায় কয়েক লাখ গরু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এ জেলার বড় বড় গরুর সুনাম রয়েছে চারিদিকে। জেলার ৯৮৫ টি গ্রামই এখন যেন একেকটি গো-খামারে পরিণত হয়েছে। গ্রামাঞ্চলের এমন কোন বাড়ী পাওয়া যাবে না যেখানে গরুর খামার নেই।

গরু খামারীরা জানান, এবার গো-খাদ্যের দাম বেশি। যার কারণে গরু লালন করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। পশু খাদ্যের দাম বাড়ায় গরুর পালন করতে এবার খরচও  হয়েছে অনেক বেশি। সে তুলনায় গরুর দাম ভালো না পেলে খামারীদের মাথায় হাত উঠবে। অনেক খামারী গত ঈদে চাহিদা অনুযায়ী দাম না পাওয়ার কথা জানান।

খামারীদের মতে গরু মোটাতাজাকরণ খামার করতে যে ধরনের টাকার প্রয়োজন সে ধরনের অর্থ অনেকেরই নেই। টাকার অভাবেই অনেকের সাধ থাকলেও অর্থের অভাবে তারা গরু খাওয়াতে পারছে না। ফলে ঈদ আসার আগেই অনেকেই গরু বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা পেলে গো-খামার করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে কুষ্টিয়ার বেকার যুবক।

বিগত কয়েক বছর গরু খামার করে অনেকেই ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছে। বেকার যুবক ও দরিদ্ররা খামার করে একদিকে যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অপরদিকে খামারের গোবর থেকে বায়োগ্যাস করে সংসারে জ্বালানীর সাশ্রয় করছে। এবার গরুর ভালো দাম পেলে আগামীতেও তারা গরু মোটাতাজারণ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখবে বলে অভিমত প্রকাশ করে।

গরু মোটাতাজাকরণ প্রসঙ্গে কুষ্টিয়া জেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা ডা: আশাদুল হক জানান, কুষ্টিয়া অঞ্চলের গরু মোটাতাজাকরণে মানব দেহে ক্ষতিকর কোন ওষুধ ব্যবহার হয়না বলে জানান প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা । জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকে নানা সহায়তা দেয়া হয়ে থাকে খামারী এবং কৃষকদের। আরো  জানান, খামারীরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে পশুকে পরিচর্যা ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ায় না। ফলে আমাদের খামারীদের পশু সঠিকভাবে বেড়ে ওঠেনা।

গ্রামাঞ্চলের অনেক খামারী গরু দ্রুত মোটা করার জন্য ভারতীয় নিম্নমানের ওষুধ খাওয়ায়।

এগুলো খাওয়ানো ঠিক না। এতে পশুর চামড়ার নিচে পানি জমে মোটা দেখালেও কার্যত মাংস বৃদ্ধি হয়না। এতে পশুর বিভিন্ন সমস্যা হয়। এসব এড়াতে কুষ্টিয়ার খামারীদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের পক্ষ থেকে নানা সহায়তা দেয়া হয়ে থাকে খামারী এবং কৃষকদের বলে জানান কর্মকর্তারা।

এদিকে কোরবানীর পূর্ব মুহুর্তে পশুকে পরিচর্যার কাজে ব্যস্ত খামারীরা। চোখে পড়ার মত গরু গুলো জেলার চাহিদাপূরণ করে বাইরে বিক্রির জন্য ঢাকাসহ বিভিন্ন হাটে নেওয়া হবে। প্রতি বছর ভারত থেকে গরু আসায় দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস’ হয় খামারীরা। ভারত থেকে গরু না আসলে এ অঞ্চলের গরুর দামর আরো ভালো পাওয়ার আশা খামারীদের। গত বছর ভারতীয় গরু আমদানীর কারণে গরুর বাজারে বিরূপ প্রভাব পড়ে ফলে এ জেলার হাজার হাজার গরু ফেরত আসে। ঈদের এখনো ১২দিন বাকী।

কুষ্টিয়ার গৃহে পালিত খামারে লালিত চোখ জুড়ানো পশু জেলার বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রির জন্য কোরবানীর পশু বাজারগুলোতে নেওয়ার প্রস’তি নিচ্ছে সকলে। অনেক খামারীরা জেলার বাইরে ঢাকা, চিটাগাং গরু বিক্রি করবেন এ পরিকল্পনা নিয়ে পরিবহন ঠিকও করে ফেলেছেন। ইতিমধ্যেই জেলার বিভিন্ন হাটগুলোও জমতে শুরু করেছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here