খুলনায় চোরাচালানীরা হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য। চোরাচালানকে কেন্দ্র করে অপরাধী চক্র এখন বেসামাল। অবৈধ অর্থ নিত্য নতুন অপরাধ সংগঠিত করছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে দুর্বিত্তায়নের সুযোগ সৃষ্টি করছে এই চক্রটি। এদিকে, খুলনায় গত দু’ মাসের ব্যবধানে ১৭কোটি টাকারও বেশি মূল্যের ভারতীয় চোরাই পণ্য উদ্ধার করা হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রায় দু’ ডজন আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য বিপুল সংখ্যক দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এ সময় শুধুমাত্র চোরাচালানের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬১২ জন চোরাকারবারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এসব ঘটনায় ২ হাজার ৫৬১টি মামলা দায়ের করা হয়। বিজিবি, জেলা পুলিশ ও কোস্ট গার্ড এসব অভিযানের সফলতায় এগিয়ে রয়েছে। তবে নৌ ও স্থলপথের অভিযানে জেলা টাস্কফোর্সগুলো অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। তবু যেন থেমে নেই অপরাধ কর্মকান্ড। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মনিটরিং এর অভাব, সমন্বহীনতার অভাব, টাস্কফোর্সের নির্লিপ্ততা, রাজনৈতিক প্রভাব, স্মাগলিং রুটে সংশিষ্ট তদারকি বিভাগের জলযান ও লজিস্টিক সাপোর্টের অভাব এবং এক শ্রেণীর দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারীদের কারণে এ সকল অপরাধ কর্মকান্ডকে নির্মূল করা যাচ্ছে না। তবুও চলছে অভিযান। ধরা পড়ছে স্মাগলারদের লাইনম্যানরা কিন্তু ধরা ছোয়ার বাইরে থাকছে রাঘব বোয়ালরা। খুলনা বিভাগীয় চোরাচালান প্রতিরোধ সংক্রন্তে আঞ্চলিক টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে উলেখ করা হয় গত দু’মাসে এ অঞ্চলের সীমান্তবর্তী নৌ ও স্থল বিভিন্ন স্থানে পে্ট্েটাল, চেকপোস্ট ও রেইড নামে তিন ধরণের অভিযান চালানো হয়। এসব অভিযানে ১৭কোটি টাকারও বেশি মূল্যের ভারতীয় চোরাই পণ্য উদ্ধার করা হয়। সর্বশেষ কোচগার্ড মংলা ও র্যাব ৬খুলনার সদেস্য কিছুদিন কুরিয়ার সার্বিসের একটি কাভার্ড ভ্যানে তলাসী চালিয়ে প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় শাড়ী ও চাদর আটক করে। এ ছাড়া শুধুমাত্র পে্ট্েটাল অভিযানেই উদ্ধার করা হয় ১৩কোটি ৪২লাখ ৫৬হাজার ১২০টাকা মূল্যের পণ্য। বাকি মালামাল চেকপোস্ট ও রেইড অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত মালামালের মধ্যে রয়েছে গাজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, মদ, দাড়ি, ডিনোচার্ড স্পিরিট, আর/এস, চোলাই মদ, ভারতীয় মদ, বিয়ার, টিডিজেসিক ইনজেকশন, ভারতীয় নেশা জাতীয় ট্যাবলেট, বাংলা মদ, সিনকজেট, কীটনাশক, পাতার বিড়ি, কারেন্ট জাল, ঘড়ির ব্যাটারী, বাইসাইকেল, থায়োডিন বিষ, মোটরসাইকেল, ডায়াথিন বিষ, বালতি, ভারতীয় শাড়ী, ছাতা, মোবাইল সেট, সিমকার্ড, স্টীল সামগ্রী, কার্বনেট পাওডার, ইমিটেশন সামগ্রী, পাটের বীজ, পেয়ারেজ বীজ, গুড়া দুধ, সুন্দরী কাঠ, বাইন কাঠ, কাকড়া কাঠ, গেওয়া কাঠ, বেন্দী জাল, কাঠ চেরাই মেশিন, জয়ত্রী, গৌরী ক্রিম, আগরবাতি ও জাল টাকা। সংশিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, এসব অভিযানের ক্ষেত্রে সফল্যে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)’র খুলনা সেক্টর এগিয়ে রয়েছে। এছাড়া জেলা পুলিশ, মংলা কোস্টগার্ড, নৌ-বাহীনি, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর, কেএমপি ও রেলওয়ের সৈয়দপুর জিআরপি পুলিশও মোটামুটি সাফল্য পেয়েছে। তবে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ অন্যান্য স্থানে টাস্কফোর্স নৌ ও স্থল পথে কোন অভিযন চালায়নি। খুলনার ৩০টি পয়েন্ট এবং নৌ পথ দিয়ে বর্তমান চোরাচালানি পণ্য আসাযাওয়া করছে। এর পাশাপাশি বাস ও রেল পথেও চোরাচালের পণ্য আনা-নেয়া চলছে। সীমন্ত রক্ষি বাহিনীসহ সংশিষ্ট প্রশাসনের তৎপরতায় সামান্য ধরাও পড়ছে। একদিকে চোরাচালান যেমন এ অঞ্চলকে ঘিরে ধরেছে তেমনি এরই সম্পূরক হচ্ছে অন্যান্য অপরাধ প্রবণতা। একটি গোয়েন্দা সংস্থার উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এসব চোরাচালানের সাথে অনেক চরমপন্থী ও অস্ত্রধারীরা জড়িত। খুলনাঞ্চলে নিউবিপবী কমিউনিস্ট পার্টি ও বিপবী কমিউনিস্ট পার্টি জনযুদ্ধ এর অনেক সদস্যরা এসকল কর্মকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত। এসব সন্ত্রাসীরা ভারত থেকে মালামাল এনে সাতক্ষীরা, খুলনা ও বাগেরহাটের সড়ক ও নৌ পথ দিয়ে ঢাকা সহ বিভিন্ন স্থানে পাচার হয়। অস্ত্রধারীরা মূলত লাইনম্যান হিসাবে স্মাগলিং মালামাল পাচার করে থাকে একটি নির্দিষ্ট চুক্তির মাধ্যমে। এভাবেই অস্ত্রধারীরা বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় সদস্যদের সাথে আর্থিক লেনদেনের কারণে সখ্যতা গড়ে উঠে। এভাবেই আরও ভয়ংকর হয়ে উঠে চরমপন্থী অস্ত্রধারীরা।
ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/শিমুল খান/খুলনা