অনিমেষ চৌহান ::মাশরাফিকে আদর্শ মেনে পথ চলা তরুণদের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। এদের কেউ অকালে ঝড়ে পরেন, আবার কেউ হয়তো নিজের সামর্থ্যের শতভাগ উজাড় করে দিয়ে খেলে যান নিয়মিত। তবে শেষ পর্যন্ত মাশরাফি হওয়া হয়ে ওঠা হয় না কারোই। তবে একজনকে সবারই ব্যতিক্রম বলছেন ক্রিকেটবোদ্ধারা।

যার মাশরাফি হয়ে ওঠার ক্ষমতা তো আছে, ভাগ্য অনুকূলে থাকলে ছাড়িয়ে যেতে পারেন মাশরাফিকেও। ১৯৯৮ সালের ৭ অক্টোবর জন্ম নেওয়া এই তরুণের অভিষেক মাশরাফির মতো হঠাৎ করেই। আবার মাশরাফির সঙ্গে তার কিছু মিলও আছে। মাত্র ১৯ বছর বয়সী এই তরুণ পেসারকেও ইনজুরিতে পড়তে হয়েছে বেশ কয়েকবার। কিন্তু মাশরাফির মতোই ইনজুরি তাঁকে কখনো পিছু হটতে দেয়নি।

নোয়াখালীর প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্ম নেয়া ছেলেটির ছোটবেলা থেকেই প্যাশন ছিলো ক্রিকেটের প্রতি। পড়া ফাঁকি দিয়েও ক্রিকেট খেলতে চলে যেতেন গ্রামের মাঠে-ঘাটে। ক্রিকেটের প্রতি তার ভীষণ আগ্রহ দেখে তাঁর বাবা মাকে সাভারের বিকেএসপিতে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন গৃহশিক্ষক।
হহ

তাঁর পরামর্শেই পরবর্তীতে বিকেএসপিতে ভর্তি করা হয় তাকে। আর সেখানে ভর্তি হয়েই নিজের জাত চেনান তরুণ এই প্রতিভাবান পেসার। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট দলের হয়ে খেলার সুযোগ এখান থেকেই হয় তার। আর বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করে ছোট থেকে লালন করা স্বপ্নের দ্বারপ্রান্তেও চলে যান তিনি।

সুযোগ আসে প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপে খেলার। কিন্তু বিশ্বকাপের ঠিক আগে ইনজুরিতে পড়ে সেই স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায় তাঁর।সেই সময়েই হয়তো দাঁতে দাঁত চেপে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন নতুন উদ্যমে ফিরে আসার ঠিক যেভাবে বারবার ফিরে এসেছেন বাংলার ক্রিকেটের আইকন মাশরাফি বিন মর্তুজা।

যার সর্বশেষ উদাহরণ দেখা গেছে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) গত আসরে। ইনজুরি থেকে ফিরে গাজী গ্রুপের হয়ে খেলা অমিত সম্ভাবনার এই তরুণ প্রবল প্রতিপক্ষ আবাহনীকে রীতিমত একাই ধ্বসিয়ে দিয়েছেন। ডিপিএলে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে নেমেই ছিলেন নিজেকে প্রমাণ করে ছাড়লেন তিনি।

নাসির, মাশরাফিদের বিপক্ষে ৪০ রানে একাই ৮ উইকেট শিকার করেন এই উঠতি তরুণ। আর তাঁর এই বিধ্বংসী স্পেলে মাত্র ১১৩ রানে গুঁটিয়ে যায় শক্তিশালি আবাহনী। আর এই ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৮ উইকেট শিকার করার বিরল রেকর্ড গড়লেন নোয়াখালীর ১৯ বছর বয়সী এই তরুণ পেসার ইয়াসিন আরাফাত মিশু।

শুধু তাই নয়, বিশ্ব ক্রিকেটের অষ্টম সেরা বোলিং ফিগারের মালিকও বনে গিয়েছেন তিনি। আর তাঁর এই পারফর্মেন্সে যে মাশরাফিই ছিলেন মূল প্রেরণা তা বলাই বাহুল্য। তার কথাতেই তাই ফুটে উঠলো মাশরাফি স্তুতি। নিজের রোল মডেলকে নিয়ে তিনি বলছিলেন, ‘আমার রোল মডেল হলেন মাশরাফি ভাই। আমি ভাবি, উনি দুই হাঁটুতে সাতটা অপারেশন নিয়েও যতো সুন্দর খেলছেন, আমি কেনো পারবো না। ওনার তুলনায় আমার ইনজুরি তো কিছু না। আমি ওনাকে দেখেই স্বপ্ন দেখি।’

মূলত কোচ সালাউদ্দিনের কথা অনুযায়ী বোলিং করেই সাফল্য পেয়েছেন তিনি। তার ওপর উইকেটও ছিলো বোলিং সহায়ক। ফলে এর ফলাফলটি ভালোভাবেই পেয়েছেন তিনি। বলেন, ‘উইকেট খুব বোলিং সহায়ক ছিলো। আমরা টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলাম। আমি বাড়তি কিছু করিনি। স্যার যেমন বলেছেন, জায়গায় বল করা এবং ব্যাটসম্যানের দুর্বলতা মাথায় রেখে বল করা, সেটা করেছি। ভালো বোলিংয়ের ফল পেয়েছি।’

জিম্বাবুয়ে ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের জন্য গত ৯ সেপ্টেম্বর ঘোষিত ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ দলে চমক দেখিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন ইয়াসিন আরাফাত মিশু।

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের যে কোনো ফরম্যাটের মূল দলে ডাক পেয়েছেন মাত্র ২০ বছর বয়সী মিশু। ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার এই ডানহাতি পেসার গেল এক বছরের বেশি সময় ধরেই জাতীয় দলের নির্বাচকদের নজরে ছিলেন।

২০১৮ সালের জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের আগে ঘোষিত বাংলাদেশের ৩১ সদস্যের প্রাথমিক স্কোয়াডে ছিলেন মিশু। এছাড়া গেল মাসে ৩৫ ক্রিকেটারকে নিয়ে চারদিনের যে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করেছিল বিসিবি, সেখানেও ছিলেন তিনি।

টি-টোয়েন্টি দলে মিশুর অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি অবশ্য বেশ চমক হয়েই এসেছে। কারণ এখন পর্যন্ত ঘরোয়া পর্যায়ে কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেননি ক্রিকেটের নোয়াখাইল্যা মাশরাফি!

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here