কেশবপুরে প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে ইট উৎপাদনসহ নতুন ভাটা স্থাপনের কাজ চলছেজাহিদ আবেদীন বাবু, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি :: কেশবপুরে প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে ভাটা মালিকরা ভাটায় ইট উৎপাদনসহ নতুন নতুন ভাটা স্থাপনার কাজ বহাল তবিয়াতে চালিয়ে যাচ্ছেন।

গত ২ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সকল ইটভাটা মালিকদের কাগজপত্র নিয়ে তাঁর দপ্তরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। এ সময় ১৫টি ভাটার মধ্যে মাত্র ৩ জন মালিক তাদের বৈধ কাগজপত্র জমা দেন। বাকি ভাটা মালিকরা ১ মাসের সময় নেয়।

গত ২ জানুয়ারী ১ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও কোন ভাটা মালিক তাদের বৈধ কাগজপত্র জমা দেয়নি বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। অপরদিকে, যে সমস- কৃষকরা অবৈধ ভাটা স’াপনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছিলেন ভাটা মালিকরা তাদেরকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে পুলিশসহ কতিপয় সাংবাদিক নিয়ে সাংবাদ সম্মেলনের নামে হয়রানি করে চলেছেন।

কেশবপুরে সরকারের নীতিমালা উপেক্ষা করে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ১৫টি ইটভাটা। এসব ভাটার কারণে নষ্ট করা হচ্ছে কৃষি জমি, উজাড় হচ্ছে বনভূমি। এতে ফসলহানিসহ মারাত্নকভাবে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

এরমধ্যে সাতাবাড়িয়া গ্রামের রহমান ব্রিকস ও আলম ব্রিকস এবং দোরমুটিয়া গ্রামের কেশবপুর ব্রিকস পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র এবং জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। অন্য ১২টি ভাটার কোন কাগজপত্র নেই। এসব ভাটা প্রায় ৩‘শ বিঘা কৃষি জমি জবর দখল করে গড়ে উঠেছে। এতে শস্য নীবিড়তা কমার পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে পরিবেশ।

উপজেলার বায়সা কালিবাড়ি মোড়ে ৮/১০ বছর আগে প্রায় ২৫ বিঘা কৃষি জমি দখল করে গড়ে উঠেছে গোল্ড ব্রিকস নামের একটি ইটভাটা। । এ ভাটা মালিক কৃষকের জমি দখল করে রেখেছেন ইট। ২/৩ বছর আগে এ ভাটার ১০০ গজ দূরে ১৫/১৬ বিঘা কৃষি জমি দখল করে গাজী ব্রিকস নামের আরও একটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে।

এদিকে, পৌর এলাকায় কোন ইটভাটা করার নিয়ম না থাকলেও শহরের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে ১৫/১৬ বছর ধরে অবৈধভাবে নজরুল ইসলাম খান গড়ে তুলেছেন খান ব্রিকস নামের একটি ভাটা। গত ২ বছর ধরে শহরে ভোগতীনরেন্দ্রপুর গ্রামে ৩ ফসলি জমি দখল করে জামান ব্রিকস নামের একটি ইট ভাটা স্থাপনার কাজ চলাচ্ছেন। ৪/৫ বছর আগে উপজেলার বেগমপুর গ্রামের ২ ফসলি জমি জবর দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে রিপন ব্রিকস। গত ২ বছর ধরে সাতবাড়িয়া বাজারের ১০০ গজ দূরে ঘন বসতিপূর্ণ এলাকার ৩ ফসলি কৃষি জমি দখল করে সুপার ব্রিকস নামে একটি ভাটা স্থাপনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। আগরহাটি গ্রামে কাগজপত্র ছাড়াই চলছে প্রাইম ব্রিকস।

এছাড়া সন্ন্যাসগাছা গ্রামের বিবি ব্রিকস-১ ও বিবি ব্রিকস-২ নামের দুটি ইট ভাটা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে চলছে। এভাটা ৩টি প্রশাসনের মৌখিক অনুমতি নিয়ে বছরের পর বছর ইট উৎপাদন ও বিক্রি করে চলেছেন।

এছাড়া রিপন ব্রিকসের মালিক উপজেলার বারুইহাটি মোড়ে শত শত ফলদ বৃক্ষ নিধন করে রোমান ব্রিকস নামে আরও একটি ভাটা স্থাপনার কজ চালিয়ে যাচ্ছেন। গত বছরের নভেম্বর থেকে এসব ভাটা মালিকরা পুরোদমে ভাটা স্থাপনার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ভাটা মালিকরা বিভিন্ন এলাকা থেকে কৃষি জমির টপ সোয়েল কেটে এনে ইট তৈরীর জন্যে ডিবি করে রেখেছেন এসব ভাটাগুলোতে। এ সমস- অবৈধ ভাটা স্থাপনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ফুসে উঠেছেন এলাকার কৃষকরা।

যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপনের কারণে গত ২ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাগজপত্রসহ এসব ভাটা মালিকদের তাঁর কার্যালয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। এরমধ্যে মাত্র ৩ জন ভাটা মালিক তাদের বৈধ কাগজপত্র জমা দেন। বাকি ভাটা মালিক ১ মাসের সময় নেন। গত ২ জানুয়ারী অবৈধ ভাটা মালিকদের নির্ধারিত সময় শেষ হলেও অদ্যাবধি তারা বৈধ কাগজপত্র জমা না দিয়ে ভাটা পরিচালনার জন্যে প্রশাসনের ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে দেন দরবার চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতা মিজানূর রহমান বলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যে সমস্ত ভাটা মালিক তাদের বৈধ কাগজপত্র জমা দেননি তাদের তালিকা জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনিই প্রয়োজনে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে অবৈধ ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here