ষ্টাফ রিপোর্টার :: সামনেই পূজা। নতুন পোশাক তো চাই-ই। আর তা হতে হবে একদম মনের মতো। এ বছর পূজার সাজগোজের ধারাটা কেমন, আগের ফ্যাশনধারাই চলবে নাকি একদম নতুন ধাঁচের কিছু দেখা যাবে, মৌসুমের প্রভাবটাই বা পোশাকে কেমন দেখা যাবে সেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা।
পূজায় পোশাকে লাল-সাদা রঙের প্রাধান্য দেখা যাচ্ছে। দুটো রঙের আলাদা তাৎপর্য আছে। লাল হলো উৎসবের রং। পূজার ধুমধাম, আনন্দের সঙ্গে যোগ হলো লাল রঙের। আর সাদাটা অনেকে মনে করেন শরতের প্রকৃতির অনুপ্রেরণায় এসেছে। এটা হলো পূজার পবিত্রতার প্রতীক যে কোনো প্রার্থনাতেই সাদা রঙের একটা প্রভাব থাকে।
অন্যবারের তুলনায় এবার ফ্যাশন হাউসগুলো বেশ মনোযোগ দিয়েছে পূজার সংগ্রহে। ঈদ আর পূজার মধ্যে সময়ের ফারাকটাও এবার বেশি নয়। কাজেই ঈদ সংগ্রহের সঙ্গে করে পূজার পোশাকও এনেছে অনেক ফ্যাশন হাউস। পূজার চার দিনের যে কোনো এক দিন অন্তত শাড়ি পরা যায় বলে মনে করেন ফ্যাশন ডিজাইনাররা। তবে চার দিনে চার পোশাক নয়, বরং চার দিনে চার লুক_ এটাই হোক পূজার ফ্যাশনধারা। উৎসবের আমেজ, আনন্দ ও নিজের ব্যক্তিত্ব এই সব কটি দিক মিলিয়েই পোশাক কেনেন সবাই। তবে এর সঙ্গে আরো একটা ব্যাপার গুরুত্বপূর্ণ তা হলো পরিবারের বাজেট।
বাজেটের মধ্যেই কীভাবে নতুন নতুন লুক আনা যায়। মার হয়তো অনেক শাড়ি পড়ে আছে আলমারিতে। সেখান থেকেই তো একটা নেয়া যায়। নতুন একটি বস্নাউজের সঙ্গে নতুন ঢঙে পরা যায় সেটি। আবার পুরনো কুর্তার সঙ্গে নতুন রঙচঙে একটা স্কার্ফ পরা যায়। একদম নতুন দেখাবে পুরনো পোশাকটিই।
আর একটা ব্যাপারে লক্ষ্য রাখা উচিত। পূজার যেসব আনুষ্ঠানিকতা এর জন্য ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরাই ভালো। যেমন, অঞ্জলি দিতে যাওয়ার সময় পরা যায় তাঁতের শাড়ি। সেখানে ফিউশন পোশাক তেমন মানানসই হবে না। আবার সন্ধ্যাবেলা বেড়াতে যাওয়ার আগে পরা যেতে পারে জিন্স, কুর্তা। তখন আবার মনের মতো যে কোনো পোশাকেই নিজেকে সাজানো যায়।
কয়েক দিনের উৎসব। মনের মতো সাজগোজের সুযোগটাও অনেক বেশি। একেক দিন একেক থিমে নিজেকে সাজানো যায়। ষষ্ঠীর দিনটা নানা কাজে কেটে যায়। এ জন্য এদিন সাদামাটা, ছিমছাম সাজাই ভালো। সাদা রঙের শাড়িই এদিন মানানসই। সপ্তমীর দিন থেকেই শুরু হবে সাজগোজের পালা। সপ্তমী থেকে দশমী পর্যন্ত চার দিনে চার রঙের পোশাক বেছে নেয়া যায়, পোশাকের উপাদানও হতে পারে একেক দিন একেক রকম।
সপ্তমীর দিন সকালে পরার জন্য লাল, সাদা, কমলা, গেরুয়া রঙগুলো মানানসই। এ রঙগুলো সব ধরনের গায়ের রঙেই মানিয়ে যায়। যে কেউ এসব রঙে নিজেকে সাজাতে পারেন। আর চুলে ফুল ব্যবহার করলে বেশ একটা সি্নগ্ধ ভাব আসবে। সপ্তমীর দিনে সুতি, হাফ সিল্ক শাড়ি চলতে পারে। রাতে পরতে পারেন অ্যান্ডি বা সিল্কের শাড়ি।
অষ্টমীর সাজটা হওয়া চাই একদম ‘ঝাক্কাস’। একদম শখ মিটিয়ে সাজা চাই এদিন। সাজে জমকালো ভাবটাও যেন ফুটে ওঠে। সাদা, লাল, কাঁচা হলুদ, গোলাপি, গেরুয়া এসব রঙের শাড়ি পরা যেতে পারে। এদিন নিজের পছন্দমতো যে কোনো পোশাক বেছে নিতে পারেন। পূজার সাজের জন্য শাড়িই প্রথম পছন্দ অনেকের কাছে। তবে কমবয়সী মেয়েরা সালোয়ার-কামিজ, কুর্তাও পরেন। কুর্তার সঙ্গে জিন্স বা লেগিংস পরাটা তো দারুণ চলতি ফ্যাশন। নবমীর সাজে শরতের আকাশের নীল, কাশফুলের সাদা, গাছপালার সবুজ এমন রঙগুলো পোশাকে ব্যবহার করতে পারেন। আর লাল-সাদা রঙের ছোঁয়া রাখতে পারেন গহনায়। যেমন, কপালে লাল টিপ, হাতে লাল-সাদা চুড়ি।
এদিন রাতে ঐতিহ্যবাহী শাড়ি পরলেই ভালো লাগবে। কোনো ভ্যালুঅ্যাড করা নয়। ঐতিহ্যবাহী তাঁত, জামদানি এসব শাড়ি পরা চাই। দশমীর দুপুরে লাল-সাদা শাড়ি পরেন অনেকে। গরদের শাড়িও পরতে পারেন। পুরনো ধাঁচের এ শাড়িই যোগ করবে ফ্যাশনের নতুন মাত্রা। এ রাতে অনেকেই আত্মীয়স্বজনের বাসায় বেড়াতে যান। বাড়িতেও নানা আয়োজন থাকে। কাতান, বেনারসি শাড়ি রাতে তাই বেশ মানাবে।
এ তো গেল পোশাকের কথা। সাজ কেমন হবে? পূজায় ঐতিহ্যবাহী সাজটা দেখতে ভালো লাগে। আর চাইলে যে কোনো দিন তো একটু অন্য রকম সাজার সুযোগটা রয়েছেই। শাড়ি যেমনই হোক, গহনাগুলো সাবেকি ধাঁচের পরলে বেশ মানাবে। শাড়ির সঙ্গে কানে ঝুমকা পরলে দারুণ দেখায়। তেমনি সব সময় পরা হয় না এমন গহনা, যেমন টিকলি, নথ এগুলোও পরা যেতে পারে। আর ফুলের সাজের আবেদন তো চিরন্তন। তবে একদমই ‘যেমন খুশি তেমন না সেজে’ আগে থেকেই একটু পরিকল্পনা করে সাজা দরকার। গহনাটা শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পরলেই ভালো। যেমন, শাড়িতে ম্যাট ভাব থাকলে পরতে পারেন কড়ি, শামুকের গহনা। আবার পাথর, জরির কাজ থাকলে পরতে পারেন পাথরের গহনা।
উৎসবে সি্নগ্ধ সাজ: পূজা আসছে। এখন শরৎকাল হলেও গরম পড়ছে বেশ। এ সময় ঘাম হয় বেশি। ব্রণ, ঘামাচি আর ঘামের অত্যাচারে ঢাকা পড়ে আমাদের স্বাভাবিক সৌন্দর্য। তাই এ সময় ত্বকের প্রতি একটু বাড়তি নজর দিতে হয়, পাশাপাশি শাসন করতে হয় বেয়ারা চুলগুলো। এই সময়টায় কেমন হবে আপনার সাজ? এ নিয়ে আমাদের আয়োজন।
প্রচ- গরমেও সজীব থাকার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হচ্ছে মুখটা সুন্দরভাবে পরিষ্কার করা। সারা দিনে বেশ কয়েকবার ঠা-া পানির ঝাপটা দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। ত্বকের ধরন অনুযায়ী পরিষ্কারক উপাদান বেছে নিন। তৈলাক্ত ত্বকের জন্য তেলমুক্ত পরিষ্কারক, শুষ্ক ত্বকে পানি ও গি্লসারিনযুক্ত পরিষ্কারক এবং স্বাভাবিক ত্বকের জন্য সাধারণ পরিষ্কারক বেছে নিন।
বাইরে বেরোনোর আগে রোদের তাপ থেকে ত্বককে বাঁচাতে অবশ্যই সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন। গরমে খুব বেশি মেকআপ করা উচিত নয়। মেকআপ খুব হালকা হতে হবে। এ ছাড়া হালকা রঙের শ্যাডো লাগাতে পারেন। আঙুল দিয়ে শ্যাডোটা খুব ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। হালকা গোলাপি বস্নাশ-অনের ছোঁয়া টানতে পারেন আপনার গালের দুই পাশে।
এতে ভালোই দেখাবে। ঠোঁটে রঙিন আভা ফুটিয়ে তুলতে হালকা রঙের লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারেন। এ সময় ম্যাট লিপস্টিক ব্যবহার করাই ভালো। এসপিএফ ১৫-এর বেশি, এমন লিপস্টিক ব্যবহার করলে ঠোঁট সুন্দর থাকবে। ঠোঁট শুষ্ক হলে ব্যবহার করতে পারেন লিপবাম।
চোখে চিকন করে আইপেনসিলের রেখা টেনে নিন। আইলাইনারও চিকন করে টেনে নিতে পারেন। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে রঙিন আই পেনসিল ব্যবহার করতে পারেন। খেয়াল রাখুন, সাজের উপাদানটি যেন পানি নিরোধক হয়, না হলে ঘামে সাজের বারোটা বাজবে।
একে তো গরম, তার ওপর ধুলাবালি। এ সময় চুল অাঁটসাঁটভাবে বেঁধে রাখলে আরাম পাবেন। সামনের দিকে ছোট চুল থাকলে ক্লিপ দিয়ে আটকে নিন। এতে অনেক সজীব দেখাবে আপনাকে। চুল আধখোলা রাখতে পারেন। এ ক্ষেত্রে ঘাড়ের দুই পাশের চুলগুলো একসঙ্গে আটকে নিন। চুল একপাশে ছেড়েও রাখতে পারেন।
পূজায় বাঙালীর ঘুরে বেড়াতে জুড়ি নেই। এ বাড়ি ও বাড়ি নানা জায়গায় এদিন বেড়াতে কার না ভালো লাগে। তাই বের হওয়ার আগে মনে করে ব্যাগে ওয়েট টিস্যু, সানস্ক্রিন লোশন ও ক্লিনজার নিন। আর বাড়ির মূল ফটক থেকে বের হয়ে মাথার ওপর মেলে ধরুন রঙিন ছাতা। একটু কষ্ট হলেও কী আর করা, সুন্দর থাকার জন্য এটুকু কষ্ট তো করতেই হবে, তাই না?