মিলন কর্মকার রাজু,কলাপাড়া(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি :: পূর্ণিমা তিথির এই লগ্নে বিশাল সাগরের নীল জলে পূজা অর্চণা ও ডুব দিয়ে ধুয়ে মুছে যাবে জাগতিক পাপ এ বিশ্বাস নিয়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতে হাজারো পূর্ণ্যাথীর গঙ্গাস্নানের মধ্য দিয়ে কুয়াকাটায় দুইদিন ব্যাপী রাস পূর্ণিমা উৎসব ও গঙ্গাস্নান শেষ হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ভোরে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে সাগর তীরে এ পূণ্যস্নান সম্পন্ন হয়। গত সোমবার সন্ধা থেকে কুয়াকাটা রাধা কৃষ্ণ সেবাশ্রম প্রাঙ্গনে রাস পূজা উপলক্ষ্যে নামকীর্তণ ও গীতা পাঠ শুরু হয়। রাতে রাস উৎসবের উদ্ধোধন করেন মন্দির কমিটির সভাপতি ও কলাপাড়া পৌর মেয়র বিপুল হাওলাদার। রাস উৎসবকে ঘিরে কুয়াকাটা সৈকতে বসে মেলা।

হিন্দু সম্প্রদায়ের মতে-কার্তিক মাসের পূর্ণিমাই রাসপূর্ণিমা। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে, এই দিন বৃদাবনের গোপিনী সকাশে রাধার সঙ্গে রাস উৎসবে মেতেছিলেন গোপ শ্রেষ্ঠ শ্রীকৃষ্ণ। গোপিনীদের নাচ ও শ্রীকৃষ্ণের সুমধুর বংশীধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠেছিল বৃন্দাবনের পবিত্রভূমি। পরবর্তীকালে শ্রীরাধা ও শ্রীকৃষ্ণের এই মিলন উৎসবকে শ্রীচৈতন্যদেব নাম-সঙ্কীর্তনের মধ্য দিয়ে রাস মহোৎসবে পরিণত করেন। শ্রীকৃষ্ণ বলেছিলেন, কেউ যদি তাঁকে জানতে চায়, তবে তাঁকে অবশ্যই ভক্তির আশ্রয়ে থাকতে হবে। এই দিনে তাই বৈষ্ণব ভক্তরা তাঁদের ঈশ্বরের সঙ্গে মিলিত হওয়ার আকাঙ্ক্ষায় মেতে ওঠেন রাসলীলায়।

এই বিশ্বাস নিয়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সৈকতে প্রায় পাঁচশ বছর ধরে হিন্দু সম্প্রদায়ের নর-নারীরা কুয়াকাটায় পূণ্যস্নান করছে। দীর্ঘ বছর ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা থাকলেও মূলত ১৯৯৮ সালের পর কুয়াকাটায় আড়ম্বর পরিবেশে তিন ধরে রাস উৎসব পালিত হয়। রাস উৎসবে ঘিরে মন্দিরে বসানো হয় ১৬ জোড়া রাধা কৃষ্ণের যুগল মূর্তি।

তবে এবার ঘুর্ণিঝড় বুলবুলের কারনে রাসন উৎসবে সরকারি ও বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে আউটডোরে জাঁকজমক কোন অনুৃষ্ঠান করেনি রাস উৎসব কমিটি। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল তান্ডবের পরদিন এ রাস উৎসব হওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি না থাকায় শুধু মন্দিরে ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়। কিন্তু তারপরও প্রায় দশ সজ¯্রাধিক নারী-পুরুষ এ উৎসবে অংশ নেয়। রাস উৎসবকে ঘিরে বসে মন্দিরের সামনে ও সৈকতে ভ্রাম্যমান দোকানের মেলা। এ মেলায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য নিয়ে বসলেও কেনাবেচা ছিল কম।

মঙ্গলবার ভোরে সূর্যোদয়ের আগেই সৈকতে শুরু হয় পূজা অর্চনা। হিন্দু নারী-পুরুষরা তাঁদের বিশ্বাস থেকে সৈকতে ধুপ-আগরবাতি ও মোম প্রজ্জলন করে ধর্মীয় পুস্তক পাঠ করে সাগরে গঙ্গাস্নান করে।

এছাড়া অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের পুরুষরা তাদের মৃত বাবা-মায়ের আত্মার শান্তি কামনায় সৈকতে বসে মাথা কামিয়ে মৃত স্বজনের উদ্দেশ্যে পিন্ড দান করেন।

কুয়াকাটা রাধা কৃষ্ণ সেবাশ্রমের পুরোহীত ব্রক্ষ্মচারী শিশির মহারাজ বলেন, শতশত বছর ধরে এই পূর্ণিমা তিথিতে কুয়াকাটায় গঙ্গাস্নান অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে এই তিথির ঊষালগ্নে সাগরে পূণ্যস্নান করলে জাগতিক সকল পাপ দুল হয়। মানুষের কল্যান হয়।

কুয়াকাটা রাস পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি কাজল বরন দাস বলেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারনে এ বছর অনাড়ম্বর পরিবেশে ধমীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে রাস পূজা উদযাপন হলেও হাজার হাজার পূণ্যার্থী দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কুয়াকাটায় এসে রাস পূজায় অংশ নেয়। উৎসবকে ঘিরে কুয়াকাটায় ছিল প্রশাসনের কড়া নিরাপত্তা।

কুয়াকাটায় রাস উৎসবে পূণ্যস্নান শেষে পূণ্রার্থীরা কলাপাড়া পৌর শহরের মদন মোহন সেবাশ্রমে পাঁচদিন ব্যাপী রাস উৎসব ও মেলায় অংশ নেয়। এ রাস উৎসবকে ঘিরে মন্দির প্রাঙ্গনে বসেছে মেলা। মন্দিরে স্থাপন করা হয়েছে রাধা কৃষ্ণের ১৬ জোড়া মূর্তি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here