কুড়িগ্রাম : ঘনকুয়াশা আর প্রচন্ড শীতের চাদরে ঢাকা কুড়িগ্রামের মানুষ থরথর করে কাপছে।

রাত ভর বৃষ্টির মত কুয়াশা পড়ে। টানা ক’দিনের শীতে কুড়িগ্রামে শীতজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েই চলছে। নিউমোনিয়া, আমাশয়, সর্দি কাশি, ডায়রিয়া, রোগে আক্রান্ত হয়ে ৬ শশুসহ ৩ বৃদ্ধ মারা ঘেছে। কুড়িগ্রাম সদরের পাঠানপাড়ায় নিয়ামত আলী ও কলেজ পাড়া এলাকার হাসিমুদ্দিনসহ এযাবৎ ৯ জন মারা যাওয়ার খবর পাওয়া ঘেছে।

প্রচন্ড শীতের সাথে পালস্নাদিয়ে যোগ হয়েছে হিমেল হাওয়া। ভারতের সীমান্ত লাগেয়া উত্তরপূর্ব কোনে হিমালয়ের কাছাকাছি কুড়িগ্রাম-লালমনিরহাট জুড়ে শুরু হয়েছে ভয়াবহ শৈত প্রবাহ। ফলে এ এলাকার মানুষ কাহিল হয়ে পড়েছে। জন-জীবন বিপর্যস্ত হয়ে কাজকর্ম স্থবির হয়ে পড়েছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কেয়ই ঘরের বাইরে বেরুচ্ছে না।

গত ক’দিন থেকে সূর্যের আলো বঞ্চিত কুড়িগ্রামের শীতার্থ মানুষজন থর-থর করে কাপছে। দুঃস্থ শীতার্থ জনতার শীত নিবারনের গড়ম কাপড় আশু প্রয়োজন। শীতের হিমেল ঠান্ডায় আক্রন্ত শীত জনিত রোগির সংখ্যা বেড়েই চলছে। বেশী সমস্যায় পড়েছে সদ্য-ভুমিষ্ট শিশু, প্রসুতি মা ও বয়োবৃদ্ধ রোগাক্রান্ত এবং অপর্যাপ্ত শীত বস্ত্রহীন মানুষজন। শীতের তীব্রতার কারনে কুড়িগ্রাম বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুলসহ অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।

সুর্যের আলো বঞ্চিত কুড়িগ্রামের প্রায় ২২ লক্ষাধিক মানুষের বেশীরভাগ খেটে খাওয়া শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ হওয়ায় সামান্য আয়রোজগার দিয়ে চাহিদামত শীত বস্ত্র ও নিত্য প্রয়োজনীয় কাপড় কেনাও সম্ভব হয় না। তার ওপর প্রতিবছর নদ-নদীর ভাঙ্গনের শিকার স্বহায় স্বম্বলহীন মানুষ যোগ হয় ফি-বছর। এদের অনেকেই শুধুমাত্র কৃষি জীবি হওয়ায় তাদের আর কোন পেশা জানা না থাকার কারনে ওরাও নিদারম্নন কষ্টে শীত কাটাচ্ছে। ওইসব পরিবারের অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। তবে তারা কোথায় গেছেন কে তার খোজ রাখেন। অভাবের তারোনায় অনেক নিকটতম প্রতিবেশীর খোজও জানেন না অনেক পরিবার।

বেচেঁ থাকার তাগিদে খাদ্য বস্ত্র ও বাসস্থানের খোজে দরিদ্র শ্রেণীর মানুষজন আজ দিশে হারা হয়ে পড়েছে। তার চেয়ে আরো বেশী দিক-বিদিক ছুটছেন সামান্য আয়ের বড় পরিবারের লোকজন। দুঃস্থ অসহায় শ্রেণীর মানুষজনের পাশাপাশি ওইসব মানুষদেরও শীত বস্ত্রসহ বিভিন্ন রকমের সাহায্য প্রয়োজন। সব মিলে শীতে কাপা লোকজনের শীতের গড়ম কাপড় এতটাই প্রয়োজন যে, সরেজমিনে না দেখলে তা অনুমান করা বা অনুধাবন করা খুবই কঠিন। এ অবস্থায় সরকারী সাহায্যের পাশাপাশি বে-সরকারী বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যাক্তিদেরকে এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন। অন্যথায় শীতার্থ মানুষের কষ্ট আরো বারাড়বে।

কুড়িগ্রাম সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ নজরুল ইসলাম জানান, শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা বেড়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ মিশু। আউটডোরে শীতজনিত রোগের চিকিৎসা নিয়েছেন প্রচুর রোগি। এর অধিকাংশ শিশু ও বৃদ্ধ। সিভিল সার্জন ডাঃ লোকমান হাকিম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কন্ট্রোল রম্নম খোলা হয়েছে। চিকিৎসা বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করে সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে। সেই সাথে মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে গঠন করা হয়েছে মেডিকেল টিম। তারা মাঠে কাজ করছে।

জেলা প্রশাসক এ,বি,এম আজাদ জানান, শীত মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ইতি মধ্যে ৭ হাজার ৬৪২টি কম্বল সরকারি ভাবে ৯ উপজেলায় বিতরন করা হয়েছে। এ ছাড়া জরুরী ভিত্তিতে আরো ১০ হাজার কম্বল চেয়ে ঢাকায় ফ্যাক্স বার্তা পাঠানো হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মুঠোফোনের সাহায্যে খোজনিয়ে জানা গেছে কুড়িগ্রামের সর্বত্রই ঠান্ডা বাড়ছে। এ কারনে ঠান্ডাজনিত রোগির সংখ্যা বাড়ছে। ফলে শীত আক্রানত্ম মানুষ থর-থর করে কাপছে।

বেসরকারীভাবে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ কুড়িগ্রাম শাখার উদ্দোগে শীতার্থ মানুষের মাঝে কম্বল ও চাদর বিতরণ করা হয়েছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলুনায় অনেক কম।

মোস্তাফিজুর রহমান/

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here