কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে চালানো হচ্ছে মাদক ব্যবসা। সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ভারত থেকে পাচার হয়ে আসা মাদকদ্রব্য দৌলতপুরের বিভিন্ন মাদক স্পটে অবাধে বিক্রয়সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এসব মাদক স্পটের অন্যতম প্রধান ঘাটি হচ্ছে উপজেলার শিল্প এলাকা আল্লারদর্গা বাজারের পাশ্ববর্তী হিসনা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা গো-হাট পাড়া। এখানে পুলিশের ছত্রছায়ায় প্রভাবশালীরা মাদক ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্যে মাদকের জমজমাট ব্যাবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ফুটপাতের কুখ্যাত মাদক সম্রাট জ্যোতি এ ব্যবসায়ে এখন কোটিপতি বনে গেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রকাশ্য দিবালোকে অবাধে মাদক ব্যাবসা চালিয়ে আসলেও মাদক সম্রাট জ্যোতির বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যাবস্থা নেয় না। ফলে প্রতিনিয়ত ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এলাকার যুবসমাজ, সেই সঙ্গে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ও হতাশাগ্রস্থ হচ্ছে অভিভাবকরা। অভিযোগ রয়েছে পুলিশকে ঘুষ দিয়ে জ্যোতি তার মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। একাধিকবার অভিযোগ করেও জোতিসহ অন্যান্য মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। যার কারণে পুলিশের প্রতি এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ আস্থাহীন হয়ে পড়েছে।  অভিযোগে জানা গেছে, সরকার দলীয় স্থানীয় নেতাদের হাত করে ও পুলিশকে ম্যানেজ করে আল্লারদর্গা এলাকার মতি ওরফে মতি দালালের ছেলে বিভিন্ন মামলার আসামী জ্যোতি, তুষার, টিপু ও তার মা ফেলানী বেগমসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে মাদকের ব্যাবসা চালিয়ে আসছে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাদক ব্যবসায়ীসহ উঠতি বয়সের তরুণ ও যুবকরা ওই সকল মাদক ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা ও গাঁজা পাইকার ও খুচরা মূল্যে কেনার জন্য ভীড় করে থাকে। প্রতিদিন এখানে প্রায় লক্ষাধিক টাকার মাদক দ্রব্য কেনা বেচা হয় বলে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটি আরো জানায়, মাদক ব্যাবসায়ী জ্যোতি প্রতিদিন মাদক বিক্রির লাভের একটি অংশ স্থানীয় ক্ষমতাসীন  দলের নেতা ও পুলিশ প্রশাসনকে দিয়ে থাকে। যার কারণে জ্যোতি দম্ভোক্তি করে, ‘তার মাদক বিক্রির টাকা সবার পকেটে যাই, তাই কেউ তার বিরুদ্ধে কিছু করতে পারবে না’। মাদক বিক্রির অবৈধ অর্থ দিয়ে জ্যোতি জমি, মাইক্রোবাস ও একটি বিলাশ বহুল বাড়ী নির্মাণ করেছে। এছাড়াও তার নিজস্ব মাইক্রোবাস যোগে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদকের বড় বড় চালান পাচার করা হয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় জ্যোতি গং মাদক ব্যাবসা চালিয়ে গেলেও প্রকাশ্য তার বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পায়না কেউ। কারণ ইতোপূর্বে প্রতিবাদ করতে গিয়ে এলাকার অনেকেই জ্যোতির পোষ্য বাহিনীর হাতে লাঞ্চিত হয়েছেন। সূত্র আরো জানায়, মাদক সম্রাট জ্যোতি তার মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করার জন্য নিয়োগ দিয়েছে এলাকার রাজ্জাক, জিয়াসহ বেশ কয়েকজনকে। তারা প্রতিদিন আল্লারদর্গা আখ সেন্টার, গো-হাট, হাইস্কুল মাঠ ও হিসনা নদীর তীরে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে মাদক সেবীদের নিকট হেরোইন, ফেনসিডিল ও গাঁজা পোঁছে দিয়ে থাকে। ফলে সর্বশান্ত হচ্ছে মাদকসেবীসহ তার পরিবার। এছাড়া এলাকায় প্রতিদিনই ঘটছে চুরি ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকান্ড। জানা যায়, মাদকসেবীরা মাদকসেবনের টাকা সংগ্রহ করতে বিভিন্ন বাড়িতে মূল্যবান জিনিষ পত্র চুরি করে মাদক সম্রাট জ্যোতির নিকট স্বপ্ল মূল্যে বিক্রি করে মাদক সংগ্রহ করে থাকে বলেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে মাদক সম্রাট জ্যোতি নিজে মাদক ব্যবসার কথা অস্বীকার করে বলেন, তার ভাই ভাস্তিরা মাদক ব্যবসা করে থাকে। ছয় মাস জেল খেটে এক মাস আগে জামিনে বাড়ি ফিরেছি। এখন আর ওসব করেনা। এ ব্যাপারে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাছুদুল আলম জানান, আল্লারদর্গায় মাদক ব্যবসার বিষয়টি আমার নলেজে আছে এবং সেখানে অভিযান চালানো হয়েছে। তারা সোর্স মেন্টেন করে থাকে, তাই পুলিশ অভিযান চালানোর আগেই মাদক ব্যবসায়ীরা সব জেনে যায়। ফলে সেখানে অভিযান চালিয়ে কিছু পাওয়া যায় না। তবে ওই এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা কড়া নজরদারিতে রয়েছে বলে জানান। তবে তিনি মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের সংশ্লিষ্টতার অস্বীকার করেন। তবে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশের উদ্ধোর্তন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভূক্তভোগী এলাকাবাসী।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/কাঞ্চন কুমার/কুষ্টিয়া

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here