ডেস্ক রিপোর্টঃঃ  যানজটে নাকাল রাজধানী মিরপুরবাসীর দুর্ভোগের অন্যতম নাম কালশী মোড়। এ মোড়ের জটলা কখনো মিরপুর সাংবাদিক কলোনি, কখনো ডিওএইচএস আবার কখনো ইসিবি চত্বর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তো। মিরপুর থেকে খিলক্ষেত আবার গুলশান-বনানী থেকে মিরপুরের পল্লবী যেতে প্রায় এক ঘণ্টা সময় লাগতো। অফিস শুরু ও শেষে কালশী মোড়ে প্রায় জট লেগেই থাকতো। তবে ফ্লাইওভার উদ্বোধনের পর এ পথে চলাচলকারীদের দুর্ভোগ লাঘব হয়েছে। দুর্ভোগের সেই কালশী মোড় এখন মাত্র দুই মিনিটেই পাড়ি দেওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি মিরপুর-খিলক্ষেত ও বনানী-পল্লবী রুটে যাতায়াতেও সময় কমেছে।

সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) ওই এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

 

কালশী ফ্লাইওভার নির্মাণের ফলে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এই পথে যাতায়াতকারীরা। মিরপুর থেকে বনানী, গুলশান এলাকার অফিসগামীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ফ্লাইওভার নির্মাণে।

মিরপুর পল্লবীতে বসবাস করেন আরিফুর রহমান। তিনি জানান, চাকরির সুবাদে তাকে প্রতিদিন গুলশানে যেতে হয়। সকালে অফিস যাওয়ার পথে কালশী মোড়ে অনেক সময় অপেক্ষা করতে হতো। কিন্তু এখন সেই দুর্ভোগ কমেছে।

 

 

আরিফুর রহমান বলেন, ‘কালশী মোড়ে অফিস টাইমে জটলা লেগেই থাকতো। বাড়তি সময় নিয়ে বাসা থেকে অফিসের উদ্দেশে বের হতাম। তবে ফ্লাইওভার চালু হওয়ায় চোখের পলকে কালশী মোড় পার হচ্ছি।’

কালশী মোড়ে স্বস্তি, দুই মিনিটেই পাড়ি দুর্ভোগের পথ

ইসিবি চত্বর থেকে কালশী ফ্লাইওভার পার হয়ে সাংবাদিক কলোনিতে নামা যায়। কিন্তু এখানে ঘন ঘন ইউটার্ন থাকায় সড়কের যানজট অনেক সময় ফ্লাইওভারে গিয়ে পড়ে। ফলে কালশী মোড় থেকে পল্লবী পর্যন্ত সড়কের ইউটার্ন তুলে দেওয়ার দাবি করেছেন অনেকে।

সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক আতাউর রহমান। কালশী মোড় থেকে শুরু করে ওই এলাকায় অটোরিকশা চালান তিনি। ফ্লাইওভার নির্মাণে স্বস্তি প্রকাশ করে আতাউর রহমান বলেন, ‘কালশী মোড়ে সবসময় যানজট লেগে থাকতো। ফ্লাইওভার হওয়াতে সুবিধা হয়েছে। কালশী মোড় পার হতে এখন এক থেকে দেড় মিনিট লাগে। উঠতে যা সময়, নামতে সময় লাগে না।’

তবে ফ্লাইওভার থেকে নেমে সড়কে ঘন ঘন ইউটার্ন রয়েছে। ইউটার্নের ফলে কিছু জটলা পড়ে বলে জানান তিনি। এসব ইউটার্ন বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আতাউর রহমান বলেন, ‘ফ্লাইওভার থেকে নেমে সড়কে সমস্যায় পড়তে হয়। সাংবাদিক কলোনির কাছে একটা কাটা (ইউটার্ন) আছে, এই কাটা না থাকলে আমরা সহজেই যাতায়াত করতে পারি। ফ্লাইওভারে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু রাস্তার কিছু সমস্যা আছে। অনেকে রাস্তা পারাপার হন। মূল সড়কে কিছু কাটা আছে, সব জায়গায় ইউটার্ন, এ কারণে সমস্যা।’

 

কালশী মোড়ে রিকশা চালান ফখরুল ইসলাম (৪৬)। ফ্লাইওভার চালু হওয়ায় তিনি স্বস্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘এখন কালশি মোড় ভালো, জামজুম (যানজট) নাই। আগে অনেক যানজট ছিল, এখন খুব ভালো হয়েছে। আমি মিরপুর এক নম্বর, দুই নম্বর ভাড়া মারি। সহজে সব জায়গায় যাওয়া যায়।’

কালশী মোড়ে স্বস্তি, দুই মিনিটেই পাড়ি দুর্ভোগের পথ

 

ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ, উন্নয়ন ও কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। এর আওতায় কালশী থেকে মাটিকাটার ইসিবি চত্বরে যাওয়ার রাস্তাটি আগের চেয়ে প্রশস্ত হয়েছে। উপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে উড়ালসড়ক।

উড়ালসড়কটি নির্মাণ হওয়ার আগে মিরপুরের বাউনিয়াবাঁধ, কালশী, মানিকদি, মাটিকাটাসহ বেশকিছু এলাকা একরকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। এসব এলাকায় এখন যোগাযোগের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।

 

প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, ৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি ১২২ ফুট প্রশস্ত। লেন রয়েছে আটটি। এর মধ্যে দুটি লেন অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্য। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১২ কোটি ১১ লাখ টাকা। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড এটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করেছে।

রোববার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে কালশী ফ্লাইওভার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী কালশী মোড়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান থেকে উড়ালসড়কটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পর এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here