জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: আসন্ন কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে লক্ষ্মীপুরে কামারপাড়ায় কারীগরদের ঠুন-ঠান শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে। দিন-রাত চলছে ছুরি, চাপাতি, দা ও বটিসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরী ও পুরাতন গুলিতে শান দেওয়ার কাজ। সময় নেই এখন কারীগরদের কথা বলার। আর মাত্র কয়েকদিন পর ঈদুল আজহা। আর ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে লক্ষ্মীপুরে কামারপাড়ায় জোরেসোরে চলছে পশু জবাইয়ের জন্য ছুরি, দা, বটি ও চাপাতি তৈরির কাজ। তাই ইতি মধ্যেই সরগরম হয়ে উঠেছে লক্ষ্মীপুরের কামার সম্প্রদায়ের প্রতিটি দোকান।
স্থানীয় কামররা জানান, ঈদ উপলক্ষ্যে কাজ বেড়েছে তাদের। অর্ডার অনেক বেশী। প্রতি বছরই কোরবানির ঈদে কাজের চাপ পড়ে তাদের। কষ্ট হলেও যথাসময়ে ক্রেতাদের গরু জবাই ও কাটা-কুটার সরঞ্জাম বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করেন তারা। ঈদ যতই এগিয়ে আসছে, ততই ব্যস্ততা বাড়ছে তাদের। বর্তমানে বাজারে আকার বেদে বিভিন্ন প্রকারের ছুরি ১শ’ থেকে ২শ’ টাকার মধ্যে, দা পওয়া যাচ্ছে ১শ’ পঞ্চাশ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকার মধ্যে, বটি ১শ’ পঞ্চাশ থেকে ৫শ’ টাকার মধ্যে ও চাপাতি বিক্রি হচ্ছে ৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকায় মধ্যে। এছাড়া পুরাতন বিভিন্ন সরঞ্জামে শান দেওয়ার জন্য ৫০ টাকা থেকে শুরু করে আকারের উপর ভিত্তি করে ২শ’ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে।

লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের উত্তর তেমুহনী, গোডাউন রোড, সদর উপজেলার দালাল বাজার, মান্দারী, জকসিন, বটতলী, চন্দ্রগঞ্জ, চররুহিতা, ভবানীগঞ্জসহ শহর থেকে শুরু করে গ্রামের বিভিন্ন বাজারে কামারদের দোকান রয়েছে। আর এই কোরবানির ঈদের সময় তাদের সবচেয়ে বেশি কাজ হয়। এই সময় অনেকেই বাড়িতে পশু কোরবানি দেন। পর্যাপ্ত কসাই পাওয়া যায় না বলে অনেকেই বাড়িতে নিজেরাই কোরবানির পশু কাটা-ছেঁড়া করেন। এ জন্যই দরকার পড়ে মাংস কাটার জন্য দা ও ছুরিরসহ অন্যান্য সরঞ্জামের। আর সে গুলো তৈরি করেন কামাররা। তারা দেশীয় প্রযুক্তিতে লোহা আগুনে গরম করে পিটিয়ে তৈরি করেন দা, ছুরি প্রভৃতি। লক্ষ্মীপুরে কামার শিল্প অনেক পুরানো। উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি ও সময়ের বিবর্তনে কাজের চাহিদা না থাকায় এ পেশা ত্যাগ করেছে অনেকে। এদিকে এ শিল্পের প্রধান উপকরণ লোহা, ইস্পাত ও কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় অর্থ সংকটে ভুগছেন অনেক কামার। তবে প্রতি বছর কোরবানির ঈদের মৌসুমে তাদের ব্যবসা ভাল হয়। কোরবানির ঈদের মৌসুম এলে কামাররা তাদের দোকানে অতিরিক্ত লোক খাটান, সঠিক সময়ে ক্রেতাদের চাহিদা মেটানোর জন্য। তার পরেও এই সময়ে ক্রেতাদের চাহিদা মিটাতে হিমসিম খেতে হয় এখানকার কামারদের।
পৌর শহরের গোডাউন রোড এলাকার সনজিত কামার জানান, সারা বছর ঈদুল আজহার জন্য অপেক্ষা করেন তারা। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে এ সময়টিতে কাজ বেশি হওয়ার কারণে লাভও বেশি হয় বলে জানান তিনি ।
সদর উপজেলার জকসিন বাজার এলাকার সুজন কামার জানান, কোরবানির পশু জবাই ও মাংস টুকরা করতে ধারালো অস্ত্রই একমাত্র ভরসা। এ জন্য দা, বটি, ছুরি, চাপাতি ইত্যাদি তৈরি এবং পুরাতন গুলোতে শান দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কামাররা। এ সময়ে ভাল দাম পাওয়ার আশায় রাত-দিন কাজ করছেন তারা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here