কলকাতা বইমেলায় উদার আকাশ বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ
কলকাতা প্রতিনিধি :: ৪৩ তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা সমাপ্ত হলো সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি)।
রবিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি ফারুক আহমেদ সম্পাদিত উদার আকাশ বইমেলা ২০১৯ বিশেষ সংখ্যা “প্রান্তিক সমাজ” আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন ভাঙড়ের ভূমিকন্যা তথা বিশিষ্ট সমাজকর্মী, চিকিৎসক ও প্রান্তিক মানুষের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ নাবিলা খান ও মুর্শিদাবাদ জেলার কৃষক সুন্নত আলি, নদীয়া জেলার কৃষক আবু তালেম মন্ডল, সামিউল হক, হুজুর আমজাদ মহলদার, বাংলাদেশর কথা সাহিত্যিক সৈয়দ মাজহারুল পারভেজ, ফারুক নওয়াজ, ফায়জা সুলতানা, বাহারুল হক সহ সমাজের বেশ কয়েজন প্রান্তিক মানুষ।
ঈদ উৎসব ও মহিষাসুর স্মরণ সংখ্যার পরে বইমেলা ১৪২৫ উৎসবে আবারও এক স্মরণযোগ্য সংগ্রহযোগ্য গবেষণাধর্মী সাময়িকী ফারুক আহমেদ সম্পাদিত উদার আকাশ-এর এই বর্তমান সংখ্যা। মূল্যবান প্রবন্ধ মালায় আবারও সমৃদ্ধ হবেন মননশীল পাঠক। অসাধারণ কবিতা লিখেছেন বিশিষ্ট কবি সুবোধ সরকার, শেখ সদর নইম, আনসার উল হক, অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়, আবদুস শুকুর খান, মহম্মদ মতিউল্লাহ, তাজিমুর রহমান, সিদ্ধার্থ সিংহ, মোনালিসা রেহমান, ইভা চক্রবর্তী, দেবাশিস কোনার সহ আরো অনেকেই।
গল্প লিখেছেন প্রফুল্ল রায়, হারাধন চৌধুরী, হান্না হক প্রমুখ। অণুগল্প লিখেছেন সুখেন্দু বিকাশ মিত্র। ডা. নাবিলা খানের মূল্যবান স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত লেখাটি দাগ কাটে। বিশেষ রচনায় অসাধারণ প্রবন্ধ লিখেছেন সমাজকর্মী ও মানুষ গড়ার কারিগর নাফিসা পারভিন।
বেশ কিছু মননশীল প্রবন্ধ ও রচনায় ডালি সাজিয়ে দিয়েছেন সম্পাদক। উল্লেখযোগ্য হলো সুবীর ঘোষ, কস্তুরী রায় চ্যাটার্জী, পূর্ণিমা রায়, সেলিনা ইয়াসমিন, শামসুন নাহার, জীবন কুমার সরকার, আমানুল হক, সাইফুল্লা, সোনা বন্দ্যোপাধ্যায়, শান্তনু প্রধান, শুভেন্দু মন্ডল, রেজাউল করিম, কাজী আবু তোরাব প্রমুখ।
সম্পাদক ফারুক আহমেদ-এর কলমে শিক্ষা প্রসারে অনন্য পথিকৃৎ সমাজসচেতনতামূলক কাজের জন্য স্বনামধন্য সমাজসেবক মোস্তাক হোসেনকে নিয়ে বিশেষ আলোকপাত পাঠ করলে ভাল লাগবে এবং সমৃদ্ধ হবে মনের আকাশ।
১০ ফেব্রুয়ারি কলকাতা ব‌ইমেলায় “উদার আকাশ”  বিশেষ বিষয় : প্রান্তিক সমাজ, বইমেলা ২০১৯ আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হয়ে উপস্থিত ছিলেন কবি অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায়, লিটন রাকিব, জালালউদ্দিন আহম্মেদ, আরফিনা মন্ডল, মোনালিসা রেহমান, তনুশ্রী বড়ুয়া, মনন ঘোষ, শান্তনু সরকার সহ অনেকেই।
এদিন উদার আকাশ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হলো কবি কুশল মৈত্রের কাব্যগ্রন্থ “আজও তুমি আলেয়া”। উদ্বোধন করলেন কবি অরূপ বন্দ্যোপাধ্যায় সহ আগত অতিথিরা।
টানা ১৮ বছর উদার আকাশ সম্পাদনা করছেন ফারুক আহমেদ। কলেজ পড়ার সময় টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে  বন্ধু ও বান্ধবীদের সহযোগিতা নিয়ে ২০০২ সালে প্রথম উদার আকাশ লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন। পত্রিকার প্রথম সংখ্যাটি সকলের নজর কাড়ে। ভাব ও ভাষা সমৃদ্ধ প্রগতিশীল সাহিত্য পত্রিকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেই পাঠক মনে দাগ কাটে।
তারপর বহু সংগ্রাম করে সম্পাদক ফারুক আহমেদ তাঁর পিতা গল্পকার মো: আবেদ আলি ও গ্রামের সাধারণ মা ফজিলা বেগমের উৎসাহে পত্রিকা সম্পাদনার পাশাপাশি সমাজ কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
সাধারণ গরিব মানুষের কল্যাণে কাজ করার জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন সর্বভারতীয় নবচেতনা নামক সমাজ কল্যাণকর সামাজিক সংগঠন ও ট্রাস্ট। ইতিমধ্যেই বাংলার বহু গরিব ও দুস্থ মানুষ উপকৃত হয়েছেন এই সর্বভারতীয় নবচেতনার সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহমেদের হাত দিয়েই।
উদার আকাশ বিশেষ বিষয় : প্রান্তিক সমাজ বইমেলা ২০১৯ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন মুর্শিদাবাদ জেলার জলঙ্গী গ্রামের এক প্রান্তিক কৃষক সুন্নত আলি তিনি জানালেন, ফারুক আহমেদ ভাই আমাদের মতো গরিব কৃষকদেরকে সম্মানিত করলেন, ‘আমাদের হাত দিয়ে উদার আকাশ উদ্বোধন করলেন এটা খুবই ভালো লাগল। তবে জানেন, কৃষকদের তৈরি ফসল ও কাঁচামাল কত কম টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। সেই সব ফসল ও কাঁচামাল কয়েক দফা হাত বদল হয়। হাত বদলকারীরা লাভবান হয় বেশি। কৃষক হয় ক্ষতির শিকার।
মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ে অনেক কথা হয়। তাদের নিয়ন্ত্রণ, অবৈধ মুনাফা রোধ করা হবে। অনেক দিন থেকেই এমন কথা শুনে আসছি। আজো কৃষকের দুঃখ দূর করার ব্যবস্থা হয়নি। বাড়তি আয়ের জন্য যারা সবজি চাষ করেছিলেন। তাদের অবস্থা আরো শোচনীয়। এই মৌসুমে আবার ধান বিক্রি করেও কৃষকের লাভ হয়নি। এমন হলে কৃষক বাঁচবে কিভাবে? দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য আধুনিক গুদামের দরকার। তাও করা হচ্ছে না। কৃষক না বাঁচলে কৃষির উন্নতি হবে না। সামান্য লাভ হলেই খেটেখাওয়া কৃষক খুশি হয়। তাদের মুখে হাসি ফুটে। কৃষক সবজির সঠিক মূল্য থেকে বঞ্চিত হন। প্রতি বছরই এ ঘটনা ঘটে। এটা নতুন নয়। তবে এ সমস্যা দূর করতে কোনো ব্যবস্থা নেই।’
নদীয়ার কৃষক সামিউল হক ও আবু তালেম মন্ডল বললেন, ‘দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য আধুনিক গুদামের দরকার। তাও করা হচ্ছে না। কৃষক না বাঁচলে কৃষির উন্নতি আহবে কীভাবে? আমাদের বিজ্ঞানীরা সবজির আধুনিক চাষাবাদ, জাত উদ্ভাবন করেছেন। ধানেরও নতুন জাত এসেছে। কৃষিতে নতুন যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়েছে। তবে দুঃখজনক হলো, কৃষকের জীবনে পরিবর্তন কমই এসেছে। বন্যা, ঝড়, খরা প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যখন তখন হানা দিচ্ছে। কিন্তু এর মোকাবিলা করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
এত কিছুর পরেও কিন্তু দেশে সবজির উৎপাদন কমেনি। ওদিকে জমি কমেছে, ধানের উৎপাদন বেড়েছে। বাজার মনিটরিংয়ে যারা কাজ করেন, তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে বাজারের এমন দশা হওয়ার কথা ছিল না। প্রতিদিন কৃষকরা সঠিক দাম না পেয়ে মৃত্যুবরণ করছেন। লোকসভা  নির্বাচন আসন্ন, যে দল ক্ষমতায় আসুক তারা দয়া করে কৃষকদের কথা একটু ভাববেন। ফসলের ন্যায্য মূল্য পাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। এটাই প্রত্যাশা করছি। কারণ কৃষক বাঁচলেই আমাদের দেশ বাঁচবে। কৃষকরাই দেশের প্রাণ। সমস্ত রাজ্যে কৃষক ঋণ মুকুব করা হোক এই আর্জি জানালাম।’
উদার আকাশ-এর ১৮২ নম্বর টেবিলের সামনে ৫ টার সময় রবিবার লিটল ম্যাগাজিন জোনে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলায় “উদার আকাশ” প্রকাশনের গ্রন্থপ্রকাশ ও উদার আকাশ পত্রিকার বিশেষ প্রকাশ অনুষ্ঠানে সবার আসার জন্য সাদর আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সম্পাদক ফারুক আহমেদ।
গত বছর বইমেলায় সামশুল আলম-এর লেখা “জবালা পুত্র” (উপন্যাস) এবং “মাটির সিতান মাটির পৈথান” (গল্পগ্রন্থ)। মো: আবেদ আলি’র লেখা “অন্য গাঁয়ের আখ্যান” (গল্পগ্রন্থ)। লেখক গীতা সরকার প্রামাণিক-এর লেখা “নীহারিকার সংগ্রাম” (উপন্যাস)। লেখক মইনুল হাসান-এর লেখা “ইসলামী আইন : বিবাহ তালাক উত্তরাধিকার” (প্রবন্ধ)। অধ্যাপিকা ড. আমিনা খাতুন-এর সম্পাদনা “প্রবন্ধ সংগ্রহ : ভাবনার নানা দিক” (প্রবন্ধ) প্রকাশ হয়েছিল।
গ্রন্থকার এ টি এম রফিকুল হাসান রচিত ” বিশ্বনবী মুহাম্মদ স.” গ্রন্থের আলোচনা ‘মাহানবীচর্চায় এক মূল্যবান সংযোজন’ এই পত্রিকায় স্থান পেয়েছে। আলোচনা করেছেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক শেখ একরামূল হক।
“উদার আকাশ” পত্রিকা  এবং  উদার আকাশ প্রকাশনের সমস্ত গ্রন্থ পাওয়া জন্য কল করুন এই নম্বরে 7003821298 ।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here