নিউজ ডেস্ক : কলকাতার প্রাণকেন্দ্র পার্ক স্ট্রীটে আবারও চলন্ত গাড়ীতে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।

ফুটপাথবাসী এক ১৩ বছরের কিশোরীকে চলন্ত ট্যাক্সিতে রাতভর ধর্ষণ করে দুই যুবক।

পুলিশ মূল অভিযু্ক্তকে গ্রেপ্তার করেছে আর কলকাতার একটি আদালত মঙ্গলবার তাকে ৩১শে ডিসেম্বর অবধি পুলিশী হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

কলকাতার পুলিশ বলছে, পার্ক স্ট্রীট সংলগ্ন একটি রাস্তা থেকে ওই কিশোরীকে ট্যাক্সিতে তুলে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণ করে যে দুজন – তাদের একজন কিশোরীটির পরিচিত।

ফুটপাথবাসিনী ওই মেয়েটি যখন রবিবার রাতে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার রাত্রি-আবাসে ঘুমোতে যাচ্ছিল, তখনই খাবার দেওয়ার নাম করে তাকে ট্যাক্সিতে তুলে নেয় আনোয়ার নামের এক যুবক।তারপরে সে এবং ট্যাক্সিতে থাকা আরেক যুবক রাতভর অত্যাচার চালায়।

সোমবার দিনের বেলা থানায় অভিযোগ জানানোর পরে রাতে গ্রেপ্তার করা হয় স্থানীয় একটি হোটেলের কর্মী মহম্মদ আনোয়ারকে। অন্য যুবক বা ট্যাক্সির খোঁজ এখনও পাওয়া যায় নি।

কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার পল্লবকান্তি ঘোষ বলছেন কিশোরীটির মেডিক্যাল টেস্ট হয়েছে এবং শিশু-কিশোর সুরক্ষা কমিটি বা চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি নিজেদের হেফাজতে রেখেছে তাকে।

তবে পুলিশের কয়েকটি সূত্র বলছে ওই কিশোরী কেন আনোয়ারের ডাকে সাড়া দিয়ে ট্যাক্সিতে উঠল তা নিয়ে যেমন প্রশ্ন আছে, তেমনই কিশোরীর বক্তব্যে বেশ কিছু অস্বচ্ছতা রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের প্রধান সুনন্দা মুখার্জী এই ঘটনায় বেশ কিছু অস্বচ্ছতার পুলিশী বক্তব্যকে সমর্থনই করেন।

তবে নারী আন্দোলনের কর্মী শ্বাশ্বতী ঘোষ বলছিলেন, মেয়েটির বক্তব্যে অসঙ্গতি রয়েছে বলে যে সব পুলিশ আধিকারিকরা জানিয়েছেন, তাঁদের এধরনের বক্তব্যে গোটা ঘটনাটাকে লঘু করে দেওয়ার আশঙ্কা তৈরী হচ্ছে। এ ব্যাপারটা আমাকে সত্যিই চিন্তায় ফেলেছে।

গত বছর ফ্রেবুয়ারীতে এই পার্ক স্ট্রীট এলাকাতেই সুজেট জর্ডন নামের এক মধ্যবয়সী মহিলাকে চলন্ত গাড়ীতে গণধর্ষন করা হয়েছিল – যে ঘটনা নিয়ে গোটা রাজ্য তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল রাত পাহারার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মীদের নজর এড়িয়ে কীভাবে চলন্ত গাড়ীতে একজন গণধর্ষিতা হলেন।

এখন বড়দিন ও নববর্ষের উৎসবের মূল কেন্দ্র যেহেতু পার্ক স্ট্রীট এলাকা – তাই সেখানে রয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তার মধ্যেও রবিবার কীভাবে গণধর্ষন চলল একটি ট্যাক্সিতে – কী করছিল পুলিশ, সেই প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই উঠছে।

মহিলা কমিশনের প্রধান সুনন্দা মুখার্জী বলছিলেন, কে কোথায় লুকিয়ে থেকে কখন কী করবে – সেটার ওপরে নজর রাখা সত্যিই কঠিন। এধরনের কাজ যারা করে, তারা বিকৃত মানসিকতার থেকে করে। সেটাকে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই দুষ্কর ব্যাপার।

এর আগে পার্ক স্ট্রীটের গণধর্ষণের ঘটনার বিচার চলছে খুবই ধীর গতিতে। মূল অভিযুক্তকেও ধরা যায় নি এখনও। নারী আন্দোলনের কর্মী শ্বাশ্বতী ঘোষ বলছিলেন একের পর এক ঘটনায় বিচার বিলম্বিত হওয়ার ফলে সম্ভাব্য ধর্ষকেরা এখন ভয় পাচ্ছে না।

পুলিশ হয়তো ঘটনার পরেই গ্রেপ্তার করছে। কিন্তু তারপরে ধর্ষকেরা জামিন পেয়ে যাচ্ছে। অত্যাচারিতাকে ভয় দেখাচ্ছে। যথেষ্ট গুরুত্ব না পুলিশ, না বিচারব্যবস্থা দিচ্ছে বলে আমার ক্রমাগত মনে হচ্ছে। ফলে যে মেয়েরা অত্যাচারের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছিলেন, তাঁরা কিন্তু পিছিয়ে যাবেন, চুপ করে যাবেন। আর সেটা হলে তো বিচার আরই অধরা থেকে যাবে, মন্তব্য শ্বাশ্বতী ঘোষের।

অন্যদিকে কয়েকমাস আগে উত্তর চব্বিশ পরগণায় গণধর্ষিতা এক কিশোরী গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে।

তার পরিবারের অভিযোগ, অভিযুক্তরা ক্রমাগত মামলা তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছিল।

তারা বাড়ি বদল করে কলকাতার কাছে চলে আসতে বাধ্য হয়। সেখানেও চলছিল হুমকি। শেষমেশ নতুন বাড়ীর প্রতিবেশী কয়েকজন ওই কিশোরীকে কটুক্তি করলে মেয়েটি সোমবার গায়ে আগুন দেয়।

অত্যন্ত আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই কিশোরী এখন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এই ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here