নিজস্ব প্রতিবেদক: সামাজিক নানা বাধা পেয়েছি, পুরুষদের সঙ্গে সমানতালে এগিয়ে যাওয়ার গল্প তৈরি করেছেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারীরা। আর সেই গল্প শুনিয়েছেন “সামাজিক সুরক্ষাসহ নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে উইমেন বিজনেস সেন্টারের ভূমিকা” বিষয়ে আয়োজিত এক জ্ঞানভিত্তিক কর্মশালায়। যেখানে গোপালগঞ্জ, জামালপুর, খুলনা ও বাগেরহাট এলাকার পঞ্চাশজন নারী উদ্যোক্তা অংশ নেন।

গতকাল গোপালগঞ্জ টুঙ্গিপাড়া উপজেলা অডিটোরিয়ামে দিনব্যাপী এই কর্মশালার আয়োজন করে দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন এবং ইউনাইটেড পারপাজ। জামালপুর থেকে আসা দিপালি বাড়ৈ বলেন, এক সময় আমাদের কেউ চিনতো না। আর এখন নাম ধরে ডাকে৷ সামাজিকভাবে আগেও যেমন আচরণ পেতাম এখন অনেকটাই বদলেছে। সবাই সম্মান করে প্রশংসা করে। কারণ আমরা এখন উপার্জন করি, স্বাবলম্বী। অন্যদের উদ্যোক্তা হতে উৎসাহিত করছি।

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা থেকে আসা নিপ্রাণ মন্ডল বলেন, আগে স্বামীর কাছে থেকে টাকা নিতাম এখন টাকা স্বামীকে দিই। কৃষিকাজ থেকে শুরু করে মুদি দোকান সবখানে এখন আমাদের ভালো ব্যবসা চলছে। পুরুষের সঙ্গে আমারাও মাঠে ফসল ফলাচ্ছি। তিনি জানান, ঘরের বাইরে কাজ করায় অনেকে আমাদের নিয়ে হাসিঠাট্টা করতো, কটু কথাও বলতো। আর এখন তারাই আমাদের কাছ থেকে তরিতরকারি মাছ বীজ কিনে নেয়।

আয়োজকরা জানান, এই কর্মশালার উদ্দেশ্য ছিল নারীর ক্ষমতায়নে উইমেন বিজনেস সেন্টারের ভূমিকা তুলে ধরা। পাশাপাশি, সমাজের উন্নয়নে নারী উদ্যোক্তাদের অবদানের কথা তুলে ধরাও এর লক্ষ্য ছিল।

কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, “দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে উন্নত একটি দেশে পরিণত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ। দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন ও ইউনাইটেড পারপাজের উইমেন বিজনেস সেন্টারের মতো যৌথ উদ্যোগ মানুষের পূর্ণ সম্ভাবনাকে বের করে আনতে সাহায্য করে। এ ধরনের প্রোগ্রাম ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমাদের গ্রামীণ ও প্রান্তিক নারীরা নিজেদের ক্ষমতায়ন করতে পারেন। পরিবারের পাশাপাশি আর্থিক-সামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখতে পারেন। এই নারীরা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবও রাখছেন।”

বিশেষ অতিথি ছিলেন টুঙ্গিপাড়ার ইউএনও মোঃ আল-মামুন। উইমেন বিজনেস সেন্টারের উদ্যোক্তা এবং স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্যানেল আলোচনার মাধ্যমে এই কর্মশালা পরিচালিত হয়। সভায় অংশগ্রহণকারীরা গ্রামাঞ্চলে নারীর ক্ষমতায়নে উইমেন বিজনেস সেন্টারের ভূমিকা নিয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেন।

২০১০ সালে ফাইভ বাই টুয়েন্টি নামে একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ ঘোষণা করে কোকা-কোলা কোম্পানি। এই উদ্যোগের লক্ষ্য ছিল ২০২০ সালের মধ্যে ভ্যালু চেইন জুড়ে ৫০ লক্ষ নারী উদ্যোক্তার অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন। বৈশ্বিক প্রতিজ্ঞার সাথে মিল রেখে ইউনাইটেড পারপাজের সহযোগিতায় গ্রামাঞ্চলে উইমেন বিজনেস সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন। গ্রামীণ ও প্রান্তিক নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নই এর উদ্দেশ্য।

উদ্যোগটির প্রথম পর্যায়ে জামালপুর, খুলনা ও বাগেরহাট জেলায় ৭০টি ডব্লিউবিসি ১ লক্ষ নারীর জীবনে প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলে। আর পরোক্ষভাবে উপকৃত হন ৪ লক্ষ মানুষ। বর্তমানে সুনামগঞ্জ ও গোপালগঞ্জ জেলায় ৩০টি ডব্লিউবিসি নিয়ে এর দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়েছে। এই পর্যায়ের লক্ষ্য ৪০,০০০ নারী উদ্যোক্তার ক্ষমতায়ন। এসব বিজনেস সেন্টারের মাধ্যমে গ্রামাঞ্চল ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নারীরা ব্যবসা ব্যবস্থাপনা, তথ্যপ্রযুক্তি, হাঁস-মুরগির খামার এবং নিজেদের দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। শুধু প্রশিক্ষণ দিয়েই উইমেন বিজনেস সেন্টারগুলো নিজেদের দায়িত্ব শেষ করে না। নারী উদ্যোক্তাদের ঋণ, ব্যবসা পরিচালনার জায়গা, এমনকি ডব্লিউবিসি থেকে তাদের পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করে দিয়েও তারা সহায়তা করে।

দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট সাদিয়া ম্যাডসবার্গ বলেন, “ইউনাইটেড পারপাজের মাধ্যমে নারীদের ক্যারিয়ার, সম্পদ ও আত্মনির্ভরশীল জীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ক্ষমতায়ন হচ্ছে। মানুষের উন্নতি ও সাফল্য অর্জন করার মতো একটি পরিবেশ তৈরি করাই সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগ।”

জাতিসংঘের নির্ধারিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে কোকা-কোলা সিস্টেম বাংলাদেশ এবং দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন। এ লক্ষ্যে ওয়াটার স্টুয়ার্ডশিপ ও ওয়ার্ল্ড উইদাউট ওয়েস্ট (বর্জ্যমুক্ত পৃথিবী)-এর মতো কোম্পানিটির বৈশ্বিক উদ্যোগের দেশীয় সংস্করণগুলো দেশজুড়ে সমাজ উন্নয়নে কাজ করছে।

দ্য কোকা-কোলা ফাউন্ডেশন হলো দ্য কোকা-কোলা কোম্পানির বৈশ্বিক জনহিতকর (ফিল্যানথ্রোপিক) অঙ্গসংগঠন। পরিবেশ সুরক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং মানুষ ও কমিউনিটির সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য এ পর্যন্ত তারা বিশ্ব জুড়ে ১.২ বিলিয়ন ইউএস ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here