করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি, চীনকে বিনামূল্যে টিকা দিতে চায় ইইউ

ডেস্ক রিপোর্টঃঃ  চীনে ব্যাপকভাবে বেড়েছে করোনার সংক্রমণ। মূলত জিরো কোভিড নীতি বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে ভাইরাসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের মুখোমুখি হয়েছে দেশটি। প্রতিদিনই এশিয়ার এই দেশটিতে বহু মানুষ ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন।

এই পরিস্থিতিতে করোনা মোকাবিলায় চীনকে বিনামূল্যে টিকা সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। মঙ্গলবার (৩ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেইজিংয়ের জিরো কোভিড পলিসি শিথিল করার পরে দেশটিতে সংক্রমণ বেড়েছে উল্লেখ করে ইইউ নির্বাহী মঙ্গলবার বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনকে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরবরাহ করার প্রস্তাব দিয়েছে।

ইউরোপীয় কমিশনের একজন মুখপাত্র এদিন নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, চীন এখনও এই প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি। তবে ইইউ বা তাদের নির্মাতারা কী পরিমাণ ভ্যাকসিন চীনকে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন তা উল্লেখ করেননি তিনি।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই নির্বাহী বলেছেন, ‘চীনে কোভিড পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে (স্বাস্থ্য) কমিশনার স্টেলা কিরিয়াকাইডস তার চীনা সমকক্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংহতি জানানোর পাশাপাশি ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন।’

তার ভাষায়, ‘প্রস্তাবিত সহায়তার মধ্যে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি ইইউয়ের ভ্যাকসিন প্রদানও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’

এদিকে বেইজিং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রস্তাব গ্রহণ করবে কিনা জানতে চাওয়া হলে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং সরাসরি উত্তর এড়িয়ে গেছেন। তিনি রয়টার্সকে বলেছেন, চীনের টিকা দেওয়ার হার এবং চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়ছে এবং এর সরবরাহও ‘পর্যাপ্ত’ রয়েছে।

তিনি বলেন, চীন তার মহামারি সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলো আরও ভালোভাবে মোকাবিলায় ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সংহতি ও সহযোগিতা জোরদার করার’ বিষয়ে উন্মুক্ত। যদিও ‘টিকাগ্রহীতাদের চাহিদা চীন একাই পূরণ করতে পারে’।

রয়টার্স বলছে, করোনা মহামারির শুরু থেকে চীন এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র নিজেদের তৈরি ভ্যাকসিন ব্যবহার করার ওপর জোর দিয়েছে। চীনা এসব ভ্যাকসিন তার নিজস্ব জনসংখ্যার জন্য এবং তা পশ্চিমা এমআরএনএ প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়নি।

এর আগে গত মাসে জার্মান কোম্পানি এবং চীনের দূতাবাস ও কনস্যুলেট অবস্থানরত জার্মান নাগরিকদের ব্যবহারের ১১ হাজার ৫০০টি বায়োএনটেক কোভিড ভ্যাকসিন পাঠিয়েছে জার্মানি। একটি সূত্র সে সময় বলেছিল, অন্যান্য জাতীয়তার নাগরিকদের কাছে এই টিকা পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন চীনা সরকারের সাথে আলোচনা করছে।

উল্লেখ্য, জিরো কোভিড নীতি বাতিলের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের মুখোমুখি হয়েছে চীন। প্রত্যেক দিন অসংখ্য মানুষ করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় দেশটিতে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ে ব্যাপক শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এছাড়া করোনা সংক্রমণের লাগামহীন উত্থানে দেশটির হাসপাতালগুলোতে রোগীদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যাচ্ছে। করোনার উত্থানের সাথে সাথে দেশটির মরদেহ পোড়ানোর জন্য নির্ধারিত শ্মশানেও প্রচণ্ড ভিড় শুরু হয়েছে।

কিন্তু কিছু আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার ফলে কোভিড ব্যাপক নিয়ন্ত্রণহীনভাবে ছড়িয়ে পড়েছে এবং সম্ভবত চীনে প্রতিদিন লাখ লাখ লোক এই ভাইরাসে সংক্রমিত হচ্ছেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here