মোঃ শাহীন
মোঃ শাহীন :: আধুনিক যুগের সবচেয়ে ভয়াবহ মহামারী হচ্ছে করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। বলতে গেলে পৃথিবীতে এমন দেশ খুব কমই আছে যেখানে করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েনি। বাংলাদেশেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনা ভাইরাস ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।করোনা ভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিকে অভাবনীয় ক্ষতির মুখে ফেলেছে। বাংলাদেশও এ অর্থনৈতিক ক্ষতি থেকে রেহাই পায়নি। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে আমাদের দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
.
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন- কোভিড-১৯ এর কারণে পৃথিবীর অনেক দেশেরই জিডিপি ১০ শতাংশের বেশি আর্থিক ক্ষতি হবে। আমাদের যদি এর অর্ধেকও ক্ষতি হয় তাহলে ১ লাখ কোটি টাকার উপরে আর্থিক ক্ষতি হবে। আমাদের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১ লাখ কোটি টাকা কম আদায় হবে। করোনা সংকট মোকাবেলায় বিভিন্ন দেশের সরকার আর্থিক প্রণোদনা দেয়ার ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ সরকারও ইতোমধ্যে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে।
.
করোনা ভাইরাসের কারণে বৈশ্বিক বানিজ্য ব্যাপক হুমকির মুখে পড়েছে। আমাদের দেশের অর্থনীতির একটা বড় অংশ জুড়ে আছে তৈরি পোশাক বা রেডিমেড গার্মেন্টস,  কৃষিখাত, সেবা খাত ও রেমিট্যান্স।  বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের সব চেয়ে বড় বাজার যুক্তরাজ্য ও ইউরোপ। করোনা ভাইরাসের কারণে তৈরি পোশাক খাত বিশাল অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এছাড়া অন্য খাত গুলোও ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। প্রবাসী আয়ে আমাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ২১ দশমিক ৫শতাংশ যা খুবই আশানুরূপ ছিল। কিন্তু কোভিড-১৯ নামক মহামারীর কারণে প্রবাসীদের আয় কমে যাবে। এই বৈশ্বিক মহামারীর কারণে অনেক শ্রমিক তাদের কাজ হারাবে। ফলে আমাদের অর্থনীতি বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
.
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশাল চাপের মুখে পড়বে। দেশ দীর্ঘদিন লকডাউনের কবলে ছিল। মধ্যে কিছু দিনের জন্য লকডাউন শিথিল করা হলেও ৬ই জুন থেকে আবারও লকডাউন শুরু হয়। বৈদেশিক যোগাযোগ বন্ধ হওয়ায় বিমানের আয় কমে যাবে। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ বন্ধ থাকায় কলকারখানা, শপিং মল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। ফলে অনেক শ্রমিক কাজ হারাবে। দেশে বেকারত্বের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। মানুষের জীবনযাত্রার মান কমে যাবে। ব্যবসা- বানিজ্য বন্ধ থাকায় সরকারের রাজস্ব আদায় কম হবে। এতে করে আমাদের প্রবৃদ্ধি ১ বা ২ শতাংশ কমে যাবে।
.
দিন দিনই বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।  থামছে না মৃত্যুর মিছিলও। দিন যত গড়াচ্ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারের লকডাউন দেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। যদিও লকডাউনের ফলে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের দেশের অর্থনীতি। বিশ্বের যে কয়টি দেশ করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে তার মধ্যে শ্রীলঙ্কা অন্যতম। তাদের দেশে মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র ১১ জন। আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি নয়।  তাদের দেশে আক্রান্তের এক হাজারেরও কম। তাইতো তারা তাদের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। করোনা মোকাবেলায় সফল আর একটি দেশ নিউজিল্যান্ড। তাদের করোনা মোকাবেলার সাফল্য বিশ্বের প্রসংশা কুড়িয়েছে। গত ১৯ দিনে নিউজিল্যান্ডে নতুন কোন করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায় নি। নিউজিল্যান্ডে মোট আক্রান্তের সংখ্যাও বেশি নয়। মোট আক্রান্ত হয়েছে মাত্র ১৫০৪ জন। মৃত্যু হয়েছে মাত্র ২২ জনের।
.
বাংলাদেশ সরকারের জন্য বড় চ্যালেনজিং হবে করোনা পরবর্তী সময়ে অর্থনীতির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে শিল্প, সেবা ও কৃষি খাতের প্রতি নজর দেয়ার মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।সরকারের উচিত হবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া। কৃষি খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষি যন্ত্রপাতি, সার, বীজ, কীটনাশক ইত্যাদি দিয়ে কৃষকদের সহায়তা করা। যা অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ভূমিকা পালন করবে। যতটা সম্ভব বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা।  দেশের বেকার জনগোষ্ঠীকে কাজ লাগানোর মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা৷ করোনা পরবর্তী সময়ে দেশের জনগণ ও সরকারকে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে।
.
বাংলাদেশের একটি অন্যতম খাত স্বাস্থ্যসেবা খাত। এই স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিশেষ নজর দিতে হবে। আমাদের দেশে এ খাতে কিছুটা হলেও চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতি আছে।  কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসাকের ঘাটতি আছে। করোনা নামক মহামারী না আসলে আমরা বুঝতেই পারতাম না আমাদের কোথায় কোথায় ঘাটতি আছে। এসব খাতে যথেষ্ট সহায়তা বাড়াতে হবে। যাতে পরবর্তীতে কোন মহামারী আসলে তা আমরা অনায়াসে মোকাবেলা করতে পারি।
.
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, করোনায় যা অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে তা পরবর্তী দুই তিন বছরে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব সরকার ও জনগণ আন্তরিক হলে। সবাইকে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে। কেননা একবিংশ শতাব্দীতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই করোনা ভাইরাসের মতো মহামারী মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। ভবিষ্যতে আমরাও যাতে যেকোনো মহামারী আসলে তা মোকাবেলা করতে পারি তার ব্যবস্থা আগে থেকেই গ্রহণ করতে হবে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা থাকবে আমাদের অর্থনীতিকে যত দ্রুত সম্ভব আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা। আমাদের অভ্যন্তরীণসহ বৈদেশিক বাণিজ্যের সাথে সুষম উন্নয়ন আমাদের অর্থনীতিকে করোনা পরবর্তীকালে আরও শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখবে।
.
.
.
.
লেখক: শিক্ষার্থী, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here