জি এম কামরুল হাসান :: চলতি করোনা পরিস্থিতি হয়তো কয়েক সপ্তাহের মধ্যে স্তিমিত হয়ে আসবে। বাংলাদেশ তথা গোটা বিশ্ব এখন করোনা বির্যয়ে এক কাতারে সামিল। জীবন মৃত্যুর মাঝা- মাঝি দাঁড়িয়ে কে কখন চলে যায় তা আমরা জানিনা। তবু বিশ্ব সভ্যতা পরিবর্তিত পরিবর্ধিত হয়ে নতুন ভাবে টিকে থাকবে সেবিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। তবে সেই টিকে থাকাটা কতটা অনুকূলে বা প্রতিকূলে তা হয়তো আমরা এখনি অনুমান করার পর্যায়ে নেই।তবে কিছু বিষয়ে প্রকৃতি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছে। যেমন প্রকৃতির নিজস্ব চলার পথকে মানুষ তার নিজ স্বার্থে কিভাবে যথেচ্ছা ব্যবহার করছে।দেশে দেশে পারমানবিক গবেষণা, অস্ত্র তৈরী, পরামানু অস্ত্রের পরীক্ষা, রাসায়নিক প্রয়োগ, কৃত্তিম সব পরিসেবা, মোট কথা পৃথিবীতে বাস করে সেই পৃথিবীর স্বার্থকে আমল না দেয়া।
যাহোক, করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্বকে একটা ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে, গোটা বিশ্ব আজ গৃহ বন্ধী হয়ে গেছে,মানুষের সব ক্ষমতা মুহূর্তের মধ্যে অচল অসাড় হয়ে পড়েছে।এটা থেকেও আমরা বুঝতে পারি মানুষ প্রকৃতির দাস একথা কতটা সত্য। তাই সব কিছুর উপরে আমাদের উচিৎ মানব কল্যাণে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। বিশ্ব এখন করোনা ঘোরে ডুবে আছে, এই পরিস্থিতি কেটে গেলে দেশে দেশে অর্থনৈতিক মহামারীর সম্মূখীন হওয়াটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। যার যা আছে তার সর্বস্ব নিয়ে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় নেমে পড়েছে, কারণ জীবন বাঁচানোই এখন প্রথম লক্ষ্য। কয়েকটি পর্যায়ে কয়েকটি বিষয়ে ধাক্কা লাগবে। আসুন সেগুলি আলোচনা করা যাক।
চলমান করোনার কারনে সমস্ত মানবশক্তি অলস বসে আছে, তাদের প্রতিদিনের কর্মশক্তির অপচয় হচ্ছে, হয়তো গবেষণার এক পর্যায়ে এর অর্থ মূল্যও নিরূপিত হবে কিন্তুু সময় আর ফিরে আসবে না, আর এটাই একটা বড় ঘাটতি। যা কয়েক বছরেও পূরণ হবার নয়। যে সব প্রানহানী ঘটছে সেসব মানব সম্পদের মিলিত শ্রম ও মেধা শক্তির ঘাটতিও কোনদিন পূরনীয় নয়। কারন তারা আর ফিরে আসবেনা। ফলে এই ঘাটতির যে শূন্যতা তা একটা বড় ঘাটতি। লোকবল যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মরত ছিলেন বা আছেন, তারা আর আগের মতো সুযোগ সুবিধা পাবেন বলে মনে হয়না।
বিশেষত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গুলো তাদের ক্ষতির একটা অংশ লোকবল হ্রাস করার মাধ্যমে, সুযোগ সুবিধা হ্রাস করার মাধ্যমে কৃচ্ছতা অবলম্বন করবে ফলে বেকারত্ব বেড়ে যাবে। এর ফলে ছদ্ব বেকারত্ব ও যাবে বেড়ে। যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। তবুও এটাই ঘটবে। সরকার এ বিষয়গুলো মোকাবিলা করতে চাইলেও তার নিয়মিত কার্য পরিচালনার জন্য খুব বেশি কিছু করতে পারবে না। দেশে দেশে সরকারগুলো তাদের নিয়োমিত নিয়োগগুলো বা কর্মস্থানগুলো সাময়িক কয়েক বছরের মতো স্তমিত করে রাখতে বাধ্য হবে। ফলে এক্ষেত্রেও বড় কোন কর্মসংস্থান হবে বলে মনে হয় না।কারণ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্টের কারনে প্রতিটি দেশে ব্যাপক অর্থ ব্যায়ের মুখে পড়েছে। উৎপাদন উন্নয়নের ডামাডোলের এই থেমে যাওয়া আবার স্বাভাবিক হতে কয়েক বছর সময় লেগে যেতে পারে।
আর এক্ষেত্রে সেইসব দেশ বেশি সফলতার মুখ দেখবে যেসব দেশ এখনই ক্রাইসিস মোকাবেলার পাশাপাশি করোনা পরিস্থিতি পরবর্তী করনীয় পরিকল্পনা ও এর বাস্তবায়ন কিভাবে হবে তা দ্রুত ঢেলে সাজাতে সক্ষম হবে । সরকার গুলোকে অধিক কর্মসংস্থানের মহা পরিকল্পনা করতে হবে এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের সুযোগ রাখতে হবে।যেনো কোন ভাবেই তা বাধা গ্রস্থ না হয়। এই করোনা আমাদের একটি বড় শিক্ষা দিয়েছে তা হলো কৃষির প্রতি অবহেলা। তাই সবদেশেই এখন থেকে কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতির প্রতি জোর দিতে হবে। প্রতিটি এলাকায় যদি খাদ্য পন্য মজুদ থাকে তাহলে মানুষের এই হোম কয়ারেন্টিনে থেকেও না খেয়ে মরার হুমকী থেকে নিরাপদ থাকবে।
অস্ত্র কিমবা সৌখিন পন্য বা শিল্পোপণ্য নির্ভর দেশ যত বেশি হবে তত ক্রাইসিস দেখা দেবে খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে।ধরা যাক এবারের কোয়ারান্টাইন যদি কয়েক মাসের হয়ে যেতো তবে দু’দেশের চুক্তি এলসি পন্য আমদানী সব মিলিয়ে একটা লম্বা সময় লেগে যেতো এবং তখন মহমারী দেখা দিতে পারতো, খাদ্য শৃংখলা ভেঙ্গে পড়লে একটা দেশের সব সিসটেম নস্ট হয়ে বড় ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে বাধ্য।যা আমাদের বিশ্ব শান্তির বড় বিপর্যায়। মোটকথা খাদ্য নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট অর্থনীতির প্রতি জোর দিতে হবে।
বিশ্বপর্যটনকে আরও বেশি প্রনোদনা দিতে হবে। একই সাথে এই শিল্পে সরকার সমূহের অগ্রাধিকার দিয়ে পরিকল্পনা গ্রহন ও বাস্তবায়ন করতে হবে, তাহলে অর্থনীতির সন্চালনে দ্রুত সম্প্রসারণ ঘটবে। দূর্ভিক্ষ এড়াতে দেশের প্রত্যেকটি মানুষকে নিজ নিজ যোগ্যতানুযায়ী পাইলট প্রকল্পো ভিত্তিক দ্রুত কাজ দিতে হবে। তাহলে অর্থনীতি এগিয়ে যাবে। বিশ্বের অস্ত্র ও সামরিক ব্যায় হ্রাস করাটা প্রত্যেক দেশের জন্য অতি জরুরী। অস্ত্রের মহড়া আগামী কয়েক বছেরের জন্য হ্রাস করতে পারলে করোনা পরবর্তী বিশ্ব অর্থনীতির বিপর্যয় কাটিয়ে উঠা সহজ হবে। প্রভাবশালী দেশগুলোর এখনি সিদ্ধান্তে আসাটা অতিব জরুরি যে চলমান যুদ্ধ গুলো কে দ্রুত বন্ধ করতে হবে এবং নতুন কোন যুদ্ধে জড়ানোর চিন্তা থেকে সরে আসতে হবে। এটা করা সম্বব হলে নিশ্চিত ভাবে বিশ্ব অর্থনীতি স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসবে। চলমান করোনা পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে বিশ্ব অর্থনীতি সঠিক ভাবে এগিয়ে নিতে উপরুক্ত বিষয়াবলী সহযোগিতা দিতে পারে বলে আমি মনে করি।
gmkhasan@gmail.com