বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, মৃত্যুর দিক থেকে গত এক সপ্তাহে প্রথম অবস্থানে রয়েছে ব্রাজিল, দ্বিতীয় স্থানে ভারত। নতুন রোগী শনাক্তের দিক থেকে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১২তম।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, যেভাবে নতুন রোগী বাড়ছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ৭ থেকে ১০ দিন পর হাসপাতালে শয্যা খালি পাওয়া যাবে না। পরিস্থিতি করুণ হয়ে যাবে।

অবশ্য নতুন রোগী শনাক্তের রেকর্ড হলেও গত কয়েক দিনের তুলনায় সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্তের হার কিছুটা কমেছে। নমুনা পরীক্ষাও অনেক বেড়েছে। এই সময়ে মোট ৪০ হাজার ১৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়, যা এক দিনে সর্বোচ্চ। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ছিল ২৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। টানা পাঁচ দিন পর রোগী শনাক্তের হার ৩০ শতাংশের নিচে নামল। গত পাঁচ দিনের মধ্যে চার দিনই রোগী শনাক্তের হার ৩১ শতাংশের বেশি ছিল।

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, সংক্রমণের গতি ধীর করতে সরকারের দেওয়া বিধিনিষেধের প্রভাব চলতি সপ্তাহ থেকে দেখা যেতে পারে। এই সপ্তাহে রোগী শনাক্তের হার কমতে পারে। তবে মৃত্যু আরও সপ্তাহ দুয়েক বাড়তির দিকেই থাকবে।

গতকাল স্বাস্থ্য বুলেটিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র রোবেদ আমিন বলেন, সারা দেশেই সংক্রমণ বেড়েছে। খুলনা, ঢাকা, চট্টগ্রামে রোগীর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। শনাক্তের হার ৩১-৩২ শতাংশ। এভাবে চলতে থাকলে দৈনিক শনাক্ত ১৫ হাজারে পৌঁছাতে বেশি সময় লাগবে না। যে হারে রোগী বাড়ছে, তা অব্যাহত থাকলে আগামী ৭-১০ দিনের মধ্যে হাসপাতালে শয্যা, আইসিইউ খালি থাকবে না। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। কিন্তু অনেককে জরুরি প্রয়োজন ছাড়াও বাইরে বের হতে দেখা যাচ্ছে।

দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। চলতি বছরের মার্চ থেকে দেশে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ৫ এপ্রিল থেকে লকডাউন ঘোষণা করেছিল সরকার। লকডাউনের প্রভাবে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে সংক্রমণ কমতে শুরু করেছিল। মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে সংক্রমণে আবার ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা তৈরি হয়। জুনের মাঝামাঝি থেকে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। ঈদুল ফিতরের পর সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে পরিস্থিতি খারাপ হতে শুরু করে। পরে দেশের সব জেলাতেই সংক্রমণ বাড়তে দেখা যায়।

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ১ জুলাই থেকে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করেছে সরকার। তবে দিন দিন বাইরে মানুষের যাতায়াত বাড়ছে। ২১ জুলাই পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদকেন্দ্রিক যাতায়াত, কোরবানির পশুর হাটে লোকসমাগম বাড়লে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা আছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত দেশে মোট ১০ লাখ ২১ হাজার ১৮৯ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৮ লাখ ৭৪ হাজার ৫০১ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১৬ হাজার ৪১৯ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে খুলনা বিভাগে। ঢাকা বিভাগে মৃত্যু হয়েছে ৫৬ জনের। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ৩৯ জন, রাজশাহীতে ২৬ জন এবং রংপুরে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা অন্যান্য বিভাগের বাসিন্দা।

জনস্বাস্থ্যবিদেরা বলছেন, শুধু লকডাউন বা বিধিনিষেধ জারি করে সংক্রমণ সাময়িক ধীর করা যাবে। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে না। এ জন্য লকডাউনের পাশাপাশি রোগী ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। পরীক্ষা বাড়িয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইসোলেশন (বিচ্ছিন্ন রাখা), আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসাদের চিহ্নিত করে কোয়ারেন্টিন (সঙ্গনিরোধ) করা, স্বাস্থ্যবিধি বিশেষত শতভাগ মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here