দেলোয়ার জাহিদ :: করোনা ভাইরাসের প্রাণঘাতী থাবা থেকে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, ইতালী, ইন্ডিয়া, জার্মানী, ইরান, স্পেন, কোরীয়া, বাংলাদেশ সহ বাদ পড়ছে না কেউ।  বিশ্বের সব জাতিগোষ্ঠী একে একে করোনার  থাবায়  যেন বিপর্যস্ত। করোনার ভয়াল থাবায় হাজার হাজার মানুষের  প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে প্রতিদিন। এ ভাইরাসটির মহামারি ঠেকাতে  বৈশ্বিক, দেশীয়, রাষ্ট্রীয়, সামাজিক এমনকি ব্যক্তিগত কার্যক্রম পর্যন্ত স্থবির ও স্থগিত।

করোনা ভাইরাসের মহামারির কবলে গোটা বিশ্বের মানুষ হতাশাগ্রস্থ। ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়েছে  এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও ছাড়িয়েছে অর্ধলাখ। বাংলাদেশ সময় (গত বৃহস্পতিবার) রাত ১২টার পরপরই  দুর্ভাগ্যজনক এই রেকর্ড অর্জন করে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এ মরণব্যাধিটি ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী,  প্রতিদিন সংক্রমিতের  হার গড়ে ৫০ থেকে ৫৫ হাজার আর মানুষ মৃতের হার প্রায় তিন হাজার। করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে গত এক সপ্তাহের মধ্যে।  আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা এত দ্রুত বাড়ছে যে, কোনো সংস্থাই এ নিয়ে কোন পূর্বাভাস দিতে পারছে না। পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে আগামী দিনগুলোতে তা কারোই জানা নেই।

করোনা ভাইরাসকে যথাযথ গুরুত্ব দেয়নি বাংলাদেশ প্রশাসন এমন অভিযোগ সরকার বিরোধীদের। করোনায় আক্রান্ত বা মৃতের তথ্য উপাত্ত নিয়েও সন্দেহভাজন কেউ কেউ। টেস্ট কিট, ভেনটিলেটর, পিপিই, মাস্কসহ প্রয়োজনীয় উপকরণের যথেষ্ট মজুত আছে কিনা তা এখন ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে।

সর্বশেষ প্রতিবেদনের পর থেকে কানাডার আলবার্টায় সিওভিড -১৯-এর অতিরিক্ত ৯৭ টি কেইস নিশ্চিত হওয়া গেছে, যা নিয়ে প্রদেশের মোট কেইস’র সংখ্যা দাড়ায়-৯৬৮। এখানে দুটি অতিরিক্ত মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, একটি ক্যালগেরী জোনে এবং অন্যটি উত্তর অঞ্চলে।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় এক পরিসংখ্যানে জানিয়েছে ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী এ করোনা ভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ১৬ হাজার ৭২১ জনে দাঁড়িয়েছে.

বাংলাদেশ সংক্রমনের হারে ধীর গতির প্রকৃত কারন পর্যবেক্ষনের দাবি রাখে। দৈনিক মানবজমিনের (২রা এপ্রিল)একটি সংবাদ সূত্রে জানা যায় যে, “দুনিয়াজুড়ে প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে মৃতের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। দেশে দেশে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশি এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অনেকে এরইমধ্যে অনাকাঙ্খিত ওই মৃত্যু মিছিলে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন। গত ২৪ ঘন্টায় কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই মারা গেছেন ১৮ বাংলাদেশি। যার মধ্য দিয়ে দেশটিতে বাংলাদেশি মৃতের সংখ্যা ৫৩ তে  দাঁড়িয়েছে। বৃটেনে গত ৪৮ ঘন্টায় আরও ৮ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছেন। সব মিলে এ পর্যন্ত দেশটিতে ১৯ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মারা গেছেন।

“এদিকে দায়িত্বশীল কূটনৈতিক সূত্র, প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটি, স্থানীয় সাংবাদিক, বাংলাদেশ মিশন এবং অনানুষ্ঠানিক সরকারি সূত্র বলছে,  যুক্তরাষ্ট্রে ৫৩ এবং বৃটেনে ১৯ জন সহ সারাবিশ্বে মোট ৮৩ জন বাংলাদেশির প্রাণ কেড়ে নিয়েছে করোনা।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ১৬ হাজার ৭২১ জনে দাঁড়িয়েছে বলে বৃহস্পতিবার দুপুর নাগাদ দেওয়া পরিসংখ্যানে জানিয়েছে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়। ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই থেকে ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী এ করোনা ভাইরাস যার বিস্তার এখন বৈশ্বিক।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে আশার বাণী শুনিয়েছেন নোবেলজয়ী জীববিজ্ঞানী মাইকেল লেভিট। এ ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে দেয়া পূর্বাভাসে লেভিট বলেছেন, কভিড-১৯ মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর ধরে ছড়িয়ে পড়বে না। এতে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুও ঘটবে না। লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘সবার আগে আমাদের  ভীতি দূর করতে হবে। তাহলে সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে।’

 

 

 

 

 

লেখক: বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, কানাডা ইউনিট কমান্ড, নির্বাহী ও সভাপতি, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ, এবং ডাইভার্স এডমন্টনের সম্পাদক। কানাডার এডমন্টন প্রবাসী গবেষক,  বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষনা ফেলো। ইমেইল: jdelwar@gmail.com

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here