কমিটি ছাড়াই চলছে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপি !

জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: কোনো কমিটি ছাড়াই চলছে লক্ষ্মীপুর জেলা বিএনপি। এক সময়কার বিএনপির ‘ঘাঁটি’ হিসেবে পরিচিত লক্ষ্মীপুরে গত চার মাস ধরে দলটির কোনো কমিটি নেই। এর আগে গত ৯ মার্চ রাতে কেন্দ্রীয় বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। তখন ৩০ এপ্রিলের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কথা বলা হয়। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কথা থাকলেও গত চার মাসেও কমিটি গঠন করতে পারেনি কেন্দ্র। ফলে স’বির হয়ে পড়েছে দলটির সকল কার্যক্রম। পালিত হচ্ছেনা কোন কর্মসূচি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সর্বশেষ ২০০৯ সালে জেলা বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হয়। এতে আবুল খায়ের ভূঁইয়াকে সভাপতি ও সাহাব উদ্দিন সাবুকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫১ সদস্যর কমিটি করা হয়। দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দুই বছর পর পর সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ ১০ বছরে দলের কোন সম্মেলন হয়নি। দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ২০১৫ সালের ৯ আগষ্ট চিঠি দিয়ে ওই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সম্মেলন করার নির্দেশ দেন। কিন’ তার পরেও সম্মেলন করা হয়নি। এ ছাড়া বেশ কয়েকবার সম্মেলনের জন্য বলা হলেও সম্মেলন করা হয়নি।

পরে বাধ্য হয়ে কেন্দ্র থেকে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। এরই মধ্যে গত দুই বছর ধরে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং তাঁদের অনুসারীরা বিভক্ত হয়ে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিলো। তবে সভাপতি বেশির ভাগ সময় এলাকায় থাকেন না। তাই দলীয় কর্মসূচি পালনে এগিয়ে রয়েছেন সাধারণ সম্পাদক সাহাব উদ্দিন সাবু। তিনি দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে শহরের উত্তর তেমুহনী নিজ বাড়িতে ও প্রেসক্লাব এলাকায় দলের প্রতিটি কর্মসূচি পালন করে আসছেন।

জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে খালেদা জিয়া জেলে। দলটির এমন অবস’ায়ও জেলার নেতারা প্রকাশ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পাল্টা-পাল্টি সভা, সমাবেশ, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনেও তাঁরা এক হতে পারেননি। দলের কোনো কার্যালয় নেই। দলের যেটুকু কার্যক্রম চলছে, তা নেতারা ব্যক্তিগত কার্যালয় ও বাসায় বসে পরিচালনা করছেন। গত জাতীয় নির্বাচনে কেন্দ্রর নির্দিশে কিছু সময়ের জন্য তারা এক সাথে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করলেও পরে আবার আলাদা হয়ে যান। বিরোধ এতটাই প্রকাশ্যে যে এক গ্রুপ অপর গ্রুপের ছায়াও দেখতে পারেনা। যার ফলে দলের তৃনমূল পর্যায়েও তাদের এ গ্রুপিং ছড়িয়ে পড়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জেলা বিএনপির কয়েক জন নেতা জানান, জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতাদের দ্বন্দ্বের কারণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জনসমর্থন থাকলেও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিসহ অন্যান্য আন্দোলন-সংগ্রামে নেতাকর্মীরা তেমন একটা মাঠে নামেননি। সিনিয়র নেতারা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে আঁতাত করে নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। নেতাদের ত্যাগ-শ্রম মূল্যায়ন করে যদি নতুন কমিটি করা হয়, তাহলে পুরনো ঘাঁটিতে বিএনপি আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

সম্ভাব্য সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী এডভোকেট হাছিবুর রহমান বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সমন্বয় করে কমিটি ঘোষণা করার কথা রয়েছে। আমরা প্রত্যাশা রাখছি তিনি ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের নিয়ে নতুন কমিটি উপহার দিবেন।
সম্ভাব্য সভাপতি প্রার্থী সাহাব উদ্দিন সাবু বলেন, নেতা-কর্মীদের দাবির প্রেক্ষিতে তারেক রহমান কমিটি বিলুপ্তির নির্দেশ দিয়েছেন। সংগঠনকে আরো গতিশীল করতে অচিরেই তিনি কমিটি ঘোষনা করবেন। এতে তৃনমূলের নেতাকর্মীদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটলে, জেলা বিএনপি আগের চেয়েও আরো বেশী শক্তিশালী হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here