লালমনিরহাটে কমছে না তামাক চাষআসাদুজ্জামান সাজু, লালমনিরহাট প্রতিনিধি :: রংপুর আঞ্চলে যে কয়টি জেলায় তামাকের চাষ বেশি হয় তার মধ্যে লালমনিরহাট অন্যতম। সীমান্তবর্তী এ জেলার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে তামাক চাষ হচ্ছে। বছরের পর বছর তামাক চাষের কারণে এক দিকে যেমন স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে তেমনি কমছে এসব জমির উবর্রতা। সরকারী হিসাবে কত হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে এর সঠিক হিসাব জানা না গেলেও একটি তামাক ক্রয় কোম্পানী হিসাব মতে, এ বছর গোটা জেলায় প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হয়েছে। সব চেয়ে বেশি তামাক চাষ হয়েছে জেলার ভারতীয় সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়ার পাশের জমি গুলোতে। সীমান্তের কৃষকরা অনেকটা বাধ্য হয়ে তামাক চাষ করছেন।

হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী গ্রামের তামাক চাষী সাহিদুল ইসলাম, আক্কেল আলী জানান, ঋণসহ তামাক কোম্পানির দেওয়া বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার কারণে চাষিরা তামাক চাষে ঝুকে পড়েছেন।

বড়খাতা ইউনিয়নের বড় মসজিদ এলাকার সাইফুল ইসলাম জানান, সীমান্তে চোরাচালান রোধের অজুহাতে সীমান্তবর্তী এলাকা গুলোতে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি এ অঞ্চলে জনপ্রিয় ফসল ভুট্টা চাষাবাদে নিষেধ করেন।

ফলে আমরা অনেকটা বাধ্য হয়ে সীমান্তে কাঁটা তারের বেড়া এলাকার জমি গুলোতে তামাক চাষ করছি। তিনি আরো জানান, প্রত্যেক বছর ৭/৮ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করেন তিনি। তামাকের সঙ্গে অন্যান্য ফসল সামান্য চাষ করেন। তামাক চাষে পরিশ্রম বেশি হলেও দাম বেশি পান বলে জানান তিনি।

একই কথা জানালেন পাটগ্রাম উপজেলার কুচলিবাড়ী এলাকার সমসুল হক। তিনি জানান, ৪ বিঘা জমিতে তামাক চাষ করছেন তিনি। এর আগের বছরে ধান চাষ করেছিলেন। ধানের দাম বেশি না পেয়ে তামাকের চাষ করছেন তিনি। তিনি আরও জানান, তামাক কোম্পানির দেওয়া শর্ত মেনে তিনি অগ্রিম সার ও কীটনাশক পেয়েছেন। তাই তামাক চাষ করছেন।

ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো কোম্পানির একজন কর্মকর্তা নাম না প্রকাশ র্শতে জানান, জেলায় কয়েক হাজার চুক্তিবদ্ধ তামাক চাষি রয়েছেন। কোম্পানি চুক্তিবদ্ধ এসব চাষিদের কাছ থেকে তাদের উৎপাদিত তামাক ক্রয় করবে। সেই লক্ষে চাষীদের চাষাবাদের খরচের জন্য আগাম সার ও ঔষধের টাকা বাবদ ঋণ দেয়া হয়েছে।

তামাকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রমজান আলী জানান, তামাকের উচ্ছিষ্ট অংশ শরীরে ঢুকে ক্যান্সার, হৃদরোগসহ নানা ধরনের মরণব্যাধি হতে পারে। যারা তামাক চাষের সঙ্গে জড়িত বিশেষ করে তামাক শ্রমিকরা এক সময় হৃদরোগ ক্যান্সারসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হবেন। এ জন্য তামাক চাষ বন্ধ করে বিকল্প ফসলের আবাদ করার ও তামাক চাষের ক্ষতি তুলে ধরে সরকারিভাবে সভা-সমাবেশ-সেমিনার করা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

লালমনিরহাট জেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) বিধু ভূষণ রায় জানান, কৃষকদের তামাক চাষ না করতে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। ফলে এ বছর জেলায় তামাকের চাষ কমেছে। তিনি আরো জানান, তামাক চাষের ফলে জমির উর্বরতা শক্তি মারাত্মক ভাবে কমে যাচ্ছে।

একই জমিতে কয়েক বছর তামাকের চাষ করার ফলে জমিতে বিশেষ ধরনের আগাছা জন্মে। এ আগাছা জমিতে এক বার জন্মালে সে জমিতে আর কখনো অন্য ফসল চাষ করা সম্ভব হয় না। কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করতে কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নানা ধরনের কাজ করা হয় বলেও জানালেন তিনি। বিভিন্ন স্থানে কৃষকদের সঙ্গে মাঠ দিবস, পরামর্শ দানসহ বিভিন্ন সময়ে কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করা হয়ে থাকে। এর কারণে গত বছরের তুলনায় এ বছর জেলাতে তামাক চাষ অনেকটা কমেছে।

ক্ষতিকর দিক জানা সত্বেও বিভিন্ন তামাক কোম্পানির লোভনীয় প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে জেলার চাষিরা বছরের পর বছর তামাক চাষ অব্যাহত রেখেছেন। তামাক চাষ বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি, আইন প্রয়োগসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন জেলার সচেতন মানুষ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here