Bappi Shaha

 

কবিবাড়ি
————– বাপ্পি সাহা 

কবিবাড়ি যাওয়া হয়নি কখনো। অনেকদিন ভেবেছিলাম যাবো।১৭ই মার্চ ২০১৮ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। কবিসংসদ বাংলাদেশ এর আয়োজনে বঙ্গবন্ধু কবিতা উৎসব।

উৎসবের প্রধান অতিথি ছিলেন কবি নির্মলেন্দু গুণ।উদ্ধোধন করবেন শিশু সাহিত্যিক রফিকুল হক দাদু ভাই।বিশেষ অতিথি কবি রাজু আলীম, কবি আরিফ মঈনুদ্দীন,কবি হানিফ খান।সভাপতিত্ব করছেন কবি আব্দুল গনি মিয়া।

কবিকে আনতে হবে। দায়িত্ব পড়লো অামার উপর।যখন কনক ভাই অামাকে বললো- যাও, তুমি। কিছুক্ষন নিশ্চুপ ছিলাম অার ভাবছিলাম- এখুনি কবিবাড়ি যাবার মোক্ষম সময়। কিছুক্ষন পর গাড়ি চলে এলো,অবশ্য গাড়ি পাঠালো সংগঠনের সভাপতি কবি রাজু আলীম,চ্যানেল আই এর গাড়ি, অামি গাড়িতে উঠলাম, সাথে গবেষক ও কবি স্বপন রেজা। অামি কবিবাড়ি চিনি না,তারা ড্রাইভারকে কবি’র ফোন নাম্বার দিয়ে বাড়ির ঠিকানা বলে দিলো। অত:পর গাড়ি রওনা হলো কবিবাড়ির দিকে, সেই কামরাঙ্গিরচর।

ছুটির দিন, রাস্তায় অতোটা জ্যাম ছিলো না। শাঁ-শাঁ শব্দে গাড়ি ছুটছে। দু’পাশের জানালা খুলে দিলাম। বাতাসের দোলায় অামাদের শরীরমন জুড়িয়ে গেল। অামরা কথাবার্তা, হাসি-ঠাট্টার ফাঁকে কখন যে পোঁছে গেলাম বুঝতেই পারিনি।কবি’র বাড়ির পাশে গিয়ে একজন পথচারিকে জিজ্ঞেস করলাম- কবিবাড়ি কই? মানে কবি নির্মলেন্দু গুণ দা’র বাড়ি কই। তখন লোকটি দেখিয়ে বললো- এই পথ দিয়ে যেতে হবে। গাড়ি অাবার ছুটছে। বলে দিয়েছিল বুড়িগঙ্গা ভবন পেলাম খুঁজে বুড়িগঙ্গা সিটি।সিটির পাশে দাড়িয়ে কবিকে ফোন দেয়া হলো। তখন কবি জানালো বুড়িগঙ্গা সিটি নয় বাদশা স্কুলের সামনে এসো। গাড়ি নিয়ে যখন সামনে এগুবো তখন আবার এক লোককে জিজ্ঞেস  করলাম-  কবি নির্মলেন্দু গুণ দা’র বাড়ি কোথায়? তখন লোকটি বললো আসেন আমার সাথে।যেন চিনতে অসুবিধে না হয় তাই লোকটিকে গাড়িতে উঠিয়ে নিলাম।

Kobi Nirmolendu gun

চলে এলাম বাড়ির কাছাকাছি।রাস্তার প্রশস্ত কম।তাই গাড়ি আর ভেতরে নেইনি।হেঁটেই সামনে এগিয়ে গেলাম। বুড়িগঙ্গা তীর ঘেষে বেড়ে উঠা কবির বাড়িটি।বাড়িটির নাম “বুড়িগঙ্গা”।

অবশেষে কবির বাড়িতে গেলাম। সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম। দাদা দুইতলায় থাকে। ভেতর থেকে এক লোক এসে বললো, দাদা একটু বিশ্রাম নিচ্ছেন। বিকেল ৫.৩০টায় যাবেন আপনাদের সাথে।আপনারা ভেতরে এসে বসেন।আমরা বললাম,একটু ছাদে যেতে চাই ছাদে কি যাওয়া যাবে? উনি বললেন হ্যাঁ, যাওয়া যাবে।পরে ব্যাগ থেকে ক্যামেরা বের করে ছাদে গেলাম আমি আর গবেষক ও কবি স্বপন রেজা।

Bappi Saha

সূর্যের তীঘ্নতা বেশী থাকায় ছাদ থেকে নেমে নদীর পার গেলাম। মৃদু বাতাস, সুন্দর প্রকৃতি।চমৎকার পরিবেশ একটি ছোট নৌকা ছিল পাড়ে বাঁধা চেষ্ঠা করেছিলাম উঠার।কিন্তু   কাঁদা ছিলো বলে ব্যর্থ হলাম।একদিকে লাউয়ের বাগান,আরেকদিকে বড় বটগাছ। হঠাৎ একদিকে নজর পরলো কিসের যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে।ভাবলাম, হয়তো কেউ আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।প্রায় অস্তমিত সূর্যের লাল অাভা পানিতে ছুঁয়ে যাচ্ছে। কিছু নৌকা  ও লঞ্চকিছুক্ষণ পর পর কবিবাড়ির প্রায় পাশ ঘেষে চলছে।কি অপরূপ সে দৃশ্য বলে বুঝাতে পারবো না।

যাহোক,আবার কবির বাড়িতে গেলাম।সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম।একজন বলল, দাদা রেডি হয়েছে ,বের হবেন।আপনারা আসেন ভেতরে।ভেতরে ঢুকে দাদাকে নমস্কার জানালাম।দাদা বললেন, তুমি বাপ্পি না? আমি বললাম,জ্বী, দাদা কেমন আছেন? বলেলেন, ভালো।

এরপর ২০১৮ বইমেলায় প্রকাশিত আমার পঞ্চম কাব্যগ্রন্থ ‘বাপ্পি সাহা’র শত কবিতা’ এবং আমার সম্পাদিত কবিয়াল লেখক কবি বুঝিয়ে দিলাম।এরপর আমরা সবাই বের হলাম প্রোগামের উদ্দ্যেশে।চলে এলাম তোপখানা রোডের শিশু কল্যান পরিষদে।সবাই অপেক্ষা করছিলো কখন আসবে কবি, কখন আসবে কবি!

যখন নির্মলেন্দু গুণ দা-কে নিয়ে প্রবেশ করি সবার প্রতিক্ষার অবসান  ঘটল। কবিকে বরণ করে নিলেন।এরপর প্রোগাম শেষ করে কবিকে নিয়ে গেলাম কাঁটাবনে কনর্কড এ কবিতাকুঞ্জ নামে কবির অফিসে। সেখানে দেখা হলো কবি অসীম সাহা, ভারতীয় এক কবি এবং কিছু লোক বসা ছিল কবির জন্য অপেক্ষা করছিলো।কিছুক্ষণ কথা বলার শেষে কবি নির্মলেন্দু গুণ আমাদেরকে তাঁর ষড় ঋতুর কবিতা “ঋতু সমগ্র”-র একটি করে বই উপহার দিলেন অটোগ্রাফ সহ।

বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত অসাধারণ কাটলো। অগ্রজ কবিদের সান্নিধ্যে থেকে কিছুটা অর্জন নিজের জন্য রেখে দিলাম। ‘স্বাধীনতা,এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’ সেই লেখার জনকের সাথে একান্তে কিছু সময় কাটিয়ে সম্ররদ্ধ হলাম।

আসলে কবির মন আর প্রকৃতি কবিকে আজ প্রিয় মানুষ থেকে অতি প্রিয় করে তুলেছেন সকলের কাছে।আবার কারো কারো কাছে প্রিয় ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছেন।আমারো প্রিয় একজন কবি ও  মানুষ তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here