মহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি ::

পূর্ণিমার জোয়ারে খুলনার পাইকগাছায় কপোতাক্ষ বেড়িবাঁধ ভাঙনে রাত-দিনে দুই বার ডুবছে রাড়ুলী জেলে পল্লি। এমন অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে ওই পল্লির ১৫০টি পরিবার। তাদের বসতভিটা রক্ষায় নেই কোনো টেকসই বেড়িবাঁধ। চলতি বর্ষার শুরুতে নতুন করে ভাঙনের হাত থেকে বাঁচতে দীর্ঘমেয়াদী টেকসই বেড়িবাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পরিকল্পিত নদী শাসনের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ ইউনিয়নবাসী।

জেলে পল্লির মনোরঞ্জন বিশ্বাসসহ কয়েকজন অভিযোগ করেন, পূর্বপুরুষসহ এখানে আমাদের প্রায় ২০০ বছরের বসবাস। এ পল্লিতে আমরা প্রায় ৫০০ পরিবার বসবাস করতাম, কিন্তু কপোতাক্ষের ভাঙনে ৩৫০টি পরিবার গৃহহীন হয়ে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। এদের মধ্যে কেউ রাস্তার পাশে সরকারি জমিতে আবার কেউ সরকারের আবাসনে ঠাঁই পেয়েছেন। এবার ভেঙেছে মনোরঞ্জনের ঘর।

এমতাবস্থায় পরিবার নিয়ে সরকারি রাস্তার পাশের একটি টোঙ ঘরে বসবাস করছেন। বর্তমানে ভাঙন সঙ্গী করেও ১৫০টি পরিবার এখানে বসবাস করছে। একই এলাকার বাবুরাম বিশ্বাস বলেন, কপোতাক্ষ নদের ভাঙনে আমি তিনবার ভিটা হারিয়েছি। বর্তমানে যে ঘরটিতে আছি সেটিও ভাঙনের পথে। রান্না ঘর ভেসে গেছে, থাকার ঘরটি কোনো রকম টিকে থাকলেও নদের কিনারায় ঝুঁলছে। জোয়ারের পানিতে রাত দিন দুইবার ডুবছে আমাদের ঘরবাড়ি।

এ সময় পরিবার নিয়ে ভয়ে রাত জেগে পাহারা দেই, কখন যে ঘরখানা পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। বর্তমানে পূর্ণিমার অতিরিক্ত পানি বাড়ায় আমাদের ঘরবাড়ির উঠানে থইথই পানি। ভাটা হলে দুপুরের রান্না হবে। অনেক সময় সেটাও করা যায় না। পরে শুকনা খাবার খেয়ে জীবন ধারণ করি। নদের পাশে বাড়িঘর রক্ষার বাঁধ থাকলে জোয়ারের পানি উঠতো না।

ওই এলাকার মান্দার বিশ্বাস বলেন, কপোতাক্ষের পাড়ে আমাদের পূর্বপুরুষরা বসবাস করে আসছে।

প্রায় এক কিলোমিটার জায়গা কপোতাক্ষ নদের ভাঙনে চলে গেছে। বিপরীত পাড়ে চর জেগেছে। ওইখানে যদি আমাদের জায়গা দিতো তাহলে আমরা বসবাস করতে পারতাম। ভাঙন দেখতে শুধু জনপ্রতিনিধিরা আসে কিন্তু কোনো কাজ হয় না।

স্থানীয় রাড়ুলী ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইলিয়াস হোসেন বলেন, ভাঙনরোধে সরকারের তরফ থেকে কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।

রাড়ুলী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিষয়টি নিয়ে পাইকগাছা-কয়রা সংসদ সদস্য মো. আক্তারুজ্জামান বাবুর
সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি ভাঙনের বিষয় নিয়ে উদ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছেন।

পাইকগাছা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী রাজু হাওলাদার বলেন, রাড়ুলীর কপোতাক্ষ নদের ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে এ বছরের চাহিদা পাঠিয়েছি। বরাদ্দ হলে কাজ শুরু করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, ভাঙন এলাকায় গিয়েছি, কিন্তু ভাঙনের কারনে জেলেপরিø রক্ষা বাঁধ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here