বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক থেকে :: যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মৃত ব্যক্তিদের সবাই ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের বাসিন্দা। উত্তর-পশ্চিমের এ অঞ্চলে করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯ সংক্রমণের শিকড় গেড়েছে বলে আভাস দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের ফলে সৃষ্ট রোগ কোভিড-১৯–এ আক্রান্তের চিকিৎসা আগামী গ্রীষ্ম বা শরতের শুরুর দিকে সহজলভ্য হতে পারে। তবে রোগটির প্রতিষেধক টিকা আরও পরে পাওয়া যেতে পারে। তিনি বলেন, ভাইরাসটির আরও দুটি বিপজ্জনক এলাকা ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আগত যাত্রীদের শতভাগকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

মারা যাওয়া ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনই ওয়াশিংটনের সবচেয়ে জনবহুল কিং কাউন্টির (জেলার)। সেখানে সাত লাখের বেশি লোকের বাস। বাকি একজন পাশের স্নোহোমিশ কাউন্টির।

কিং কাউন্টির স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জেফ ডাচিন বলেন, ‘আমাদের সবার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। যদিও বেশির ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে অসুস্থতা ততটা গুরুতর হবে না; তবে অনেকের ক্ষেত্রে সংক্রমণের ফলে গুরুতর অসুস্থতা দেখা দিতে পারে।’

এই অঙ্গরাজ্যে নতুন করে আরও চারজন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে তিনজন একই নার্সিং হোমের। এ নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৯০–এ পৌঁছেছে। এর অর্ধেকই হয় চীনফেরত বা ভাইরাসটির বড় ধরনের আঘাতের স্থান জাপানের বন্দরে কোয়ারেন্টাইন (রোগ সংক্রমণের শঙ্কায় পৃথক রাখা) রাখা ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজের যাত্রী ছিলেন।

এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগটির চিকিৎসার বিষয়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের বলেন, এর চিকিৎসাব্যবস্থা এই গ্রীষ্ম বা শরতের শুরুতে পাওয়া যেতে পারে। তিনি সে ক্ষেত্রে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গিলিয়াডের তৈরি রেমডিসিভির ওষুধের কথা হয়তো বলতে চেয়েছেন। ওষুধটি এর মধ্যে একজন মার্কিন রোগীর ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে। এশিয়ায় ওষধুটির পরবর্তী ব্যয়বহুল চূড়ান্ত দুই ধাপের পরীক্ষা এগিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ রোগের আরও কিছু প্রতিষেধক ও চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে কাজ চলছে। তবে রেমডিসিভির বাজারে তুলনামূলক সুলভে পাওয়া যায়।

পেন্স জানান, মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো একসঙ্গে কাজ করার জন্য একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করেছে এবং এই ওষুধগুলো নিয়ে চলমান উন্নয়নকাজের তথ্য ভাগাভাগি করছে। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের সরাসরি ফ্লাইটের যাত্রীদের ইতালি ও দক্ষিণ কোরিয়ার সব কটি বিমানবন্দরে একাধিকবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হবে।

ইতালিতে এখন আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ১ হাজার ৭০০ এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪ হাজার।

নিউইয়র্কে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হওয়ায় নিউইয়র্ক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো সতর্ক করেছেন এই বলে যে ভাইরাসটির আরও ছড়িয়ে পড়া এখন ‘অনিবার্য’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, আরও লোকজন আক্রান্ত হবেন। এটা নিউইয়র্ক, আমরা বিশ্বে চলাচলের ফটক। লোকজনের ভাইরাস পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসতে যাচ্ছে। সেটা একজন, দুজন, তিনজন বা পাঁচজন নয়, অনেকের পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসবে।’

বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩ হাজার ১০০ জনের বেশি। এর বেশির ভাগই চীনের। আক্রান্ত হয়েছেন ৬০টির বেশি দেশের ৯০ হাজারের বেশি মানুষ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here