khela-1_83493শিরোপা হাতে আনন্দের জোয়ারে ভাসছে বার্সা। এএফপিআন্দ্রেয়া পিরলো-জিয়ানলুইজি বুফনের চোখে জল টলমল। বার্লিনে চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে বার্সেলোনার বিপক্ষে ৩-১ গোলে হারের পর নিজেদের ধরে রাখতে পারলেন না জুভেন্টাসের দুই অভিজ্ঞ সেনানী। দুজনের ক্যারিয়ার গোধূলিতে। কবে আর এমন ফাইনাল খেলা হবে কে জানে! হৃদয়টা ভেঙে তাই চুরমার। কিন্তু নেইমার ওভাবে মুখ ঢেকে রাখলেন কেন? কাঁদলেন বার্সা ফরোয়ার্ড? যদি তা-ই হয়, এটি বেদনার নয়; বার্সার ঐতিহাসিক ‘ট্রেবল’ জয়ের আনন্দাশ্রু!

এক মৌসুমে ঘরোয়া লিগ, কাপ আর চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতা চাট্টিখানি ব্যাপার নয়, পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ। ক্লাব ফুটবলে এ ত্রিমুকুট জয়ের ইতিহাস ছিল মাত্র সাত বার। এ অভিজাত তালিকায় বার্সা প্রথম নাম তুলেছিল ২০০৯ সালে, পেপ গার্দিওলার অধীনে। এবার ছাড়িয়ে গেল আগের রেকর্ডও। দুবার ট্রেবল জেতা প্রথম ইউরোপিয়ান দল এখন বার্সা। পঞ্চমবারের মতো ইউরোপসেরা। অথচ কাতালান জায়ান্টদের কিনা গত মৌসুম কেটেছিল বড় কোনো শিরোপা ছাড়াই! সে আক্ষেপ কী দারুণভাবেই না ঘোচাল এনরিকের দল!

ম্যাচের আগে টেন স্পোর্টসের বিশ্লেষণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ফাইনালের স্কোরলাইন কেমন হতে পারে। একজন বললেন, বার্সা ৩-জুভেন্টাস ০, আরেকজন ২-১, অন্যজন ২-০। তিনজনের কারও অনুমান ঠিক হয়নি, আবার হয়েছেও! স্কোরলাইন ঠিক না হলেও বার্সা তো জিতেছে! আসলে এ ম্যাচের আগে স্পষ্ট ফেবারিট ছিল মেসিরাই।

স্নায়ুচাপে কিছুটা নড়বড়ে শুরু হলেও দ্রুতই মাসিমিলিয়ানো আলেগ্রির দলকে চেপে ধরে বার্সা। চতুর্থ মিনিটেই আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার পাসে দারুণ ফিনিশিংয়ে ইভান রাকিটিচের গোলে এগিয়ে যায় বার্সা। চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালের ইতিহাসে চতুর্থ দ্রুততম গোল এটি এবং বার্সার হয়ে দ্রুততম। ১৩ মিনিটে অবশ্য বক্সে নেইমারের শটে হ্যান্ডবল হয়েছিল। কিন্তু রেফারির চোখ এড়িয়ে যাওয়ায় বিপদ থেকে রক্ষা পায় জুভরা। প্রথমার্ধে নেইমার বেশ কটি সুযোগ হাতছাড়া করায় হয়তো সাময়িক আক্ষেপে পুড়তে হয়েছে বার্সা সমর্থকদের।

ম্যাচ জমে ওঠে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে। আক্রমণ-প্রতি আক্রমণে রোমাঞ্চকর এক ফাইনালের ছবি দেখা মেলে এ মুহূর্তে। বার্সা সমর্থকদের হৃৎকম্প বাড়িয়ে দেয় ৫৫ মিনিটে আলভারো মোরাতার রিবাউন্ড শটে অসাধারণ এক গোল। এই মোরাতাই সেমিফাইনালে ছুরি বসিয়েছিল রিয়ালের বুকে! পুরোনো কথা ভুলে ওই মুহূর্তে রিয়ালের সমর্থকেরাও হয়তো নেচে উঠেছিলেন মোরাতার গোলে! বার্সা সমর্থকদের ভেতরে যখন শঙ্কার চোরাস্রোত বইছে, তখন উদ্ধারকর্তা হিসেবে হাজির লুইস সুয়ারেজ। ৬৮ মিনিটে লিওনেল মেসির শটটা বুফন প্রতিহত করলে রিবাউন্ড শটে বল জালে জড়িয়েই দুই হাত প্রসারিত করে সুয়ারেজ দিলেন ছুট! যেন দুরন্ত ইগল; আটকাবে সাধ্য কার!এনরিকেকে শূন্যে ছুড়ে বাঁধনহারা উদ্যাপন তাঁর শিষ্যদের।

৭২ মিনিটে জুভদের কোমর ভাঙার চূড়ান্ত সুযোগ পেয়েছিলেন নেইমার। দারুণ এক হেডে বল জড়াতে চেয়েছিলেন জালে। কিন্তু মাথা ছুঁয়ে বল লেগেছিল হাতে। উদ্যাপন করতে গিয়ে স্বপ্নভঙ্গ হলো। কিন্তু বিধাতা ঠিক করেছিলেন, নেইমারকে দিয়ে গোল করাবেনই। ৯০ মিনিটের অতিরিক্ত সময়ের অন্তিম মুহূর্তে জুভদের কফিনে তাই শেষ পেরেকটা ঠুকলেন নেইমারই। এবার বাঁধনহারা উদ্যাপন ঠেকায় কে! গ্যালারির কাছে গিয়ে জার্সি-টার্সি খুলে উপভোগ্য এক উদ্যাপন বার্সার ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ডের। রচিত হলো বার্সার ঐতিহাসিক মুহূর্ত আর জুভেন্টাসের বেদনাবিধূর এক অধ্যায়!

আজকের ফাইনালটা মেসির জন্য ভিন্নই হলো। রোমে ২০০৯-এর চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে গোল পেয়েছিলেন। পেয়েছিলেন ওয়েম্বলিতে ২০১১-এর ফাইনালেও। পেলেন না বার্লিনের ফাইনালে। অবশ্য তিনটি গোলের উৎস ছিলেন আর্জেন্টিনা ফরোয়ার্ড।  অন্যদিকে মেসির জাতীয় দলের সতীর্থ, জুভেন্টাস স্ট্রাইকার কার্লোস তেভেজও পাননি গোলের দেখা।

চোটের কারণে ছিটকে পড়া ডিফেন্ডার জর্জো কিয়োলিনের অভাব ভালোই টের পেল জুভরা। রক্ষণভাগের ফাটলে পুরো ঝড় সামলাতে হলো বুফনকেই। সর্বোচ্চ ঢেলেও দিয়েছিলেন। ১৫ মিনিটে দানি আলভেজ, ৪৯ মিনিটে সুয়ারেজ ও ৬৮ মিনিটে মেসির শট যেভাবে প্রতিহত করলেন, অসাধারণ! হয়তো তাঁর আফসোসটা এখানেই, দারুণ খেলার পরও মাঠ ছাড়তে হলো পরাজয়ের হতাশা নিয়ে। এই বার্লিনে ২০০৬-এ ইতালির হয়ে বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দে ভেসেছিলেন বুফন। অথচ আজ কাঁদতে হলো পরাজয়ের যন্ত্রণায়। সময় কত নির্মম! এদিক দিয়ে বরং সৌভাগ্যবান জাভি হার্নান্দেজ। বার্সার হয়ে শেষটা হলো রঙিন। উয়েফা সভাপতির কাছ থেকে চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপাটা নেওয়ার দায়িত্ব বর্তাল তাঁর ওপর। দুবার ট্রেবল জিতে ক্যারিয়ার শেষ করার এমন সৌভাগ্য হয় কজন ফুটবলারের!

আরেকজনের কথা বলতেই হবে লুইস এনরিকে। ২০০৮-০৯ মৌসুমে গ্রহান্তরের ফুটবল খেলা বার্সাকে ট্রেবল জিতিয়ে সপ্তম স্বর্গে তুলে দিয়েছিলেন গার্দিওলা। সেটিকে আরেক মাত্রা দিলেন এনরিকে। গার্দিওলা কি এদিন জার্মানিতে ছিলেন? তিনি নিশ্চয় জানেন, সুন্দর ফুটবলের জয় দেখে মন খারাপ করতে নেই। সেমিফাইনালে এই বার্সার হাতে স্বপ্ন খুন হওয়ার কষ্ট চাপা দিয়ে তাঁর পুরোনো ক্লাবের সাফল্যে নিশ্চয় মন খারাপ করেননি বায়ার্ন মিউনিখ কোচ!
– See more at: http://www.sheershanewsbd.com/2015/06/07/83493#sthash.6aqT1ZD8.dpuf

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here