তানসেন আলম, বগুড়া

ভারত বা চিন থেকে আমদানী করা নয়। এখন বগুড়ায় গড়ে উঠেছে এ্যান্টিক গহনার বিশাল বাজার। এখানে পাইকারী ও খুচরা মিলে প্রতিমাসে প্রায় শত কোটি টাকার বাজার গড়ে উঠেছে। বগুড়ায় তৈরী এ্যান্টিক গহনা এখন দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হচ্ছে। জেলায় এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে ৫শতাধিক ব্যবসায়ী। এই এ্যান্টিক প্রসাধনী গুলো তৈরী কাজে নিয়োজিত আছে ১০ হাজার শ্রমিক। যারমধ্যে প্রায় দেড় হাজার রয়েছে নারী শ্রমিক।

বিয়ে বা যেকোন অনুষ্ঠানে মেয়েদের সাজগোচের জন্য স্বর্ণের চাহিদা চিরদিনের। বর্তমানে স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মেয়েরা বিকল্প প্রসাধনের দিকে ছুটছে। আর এর সঙ্গে সঙ্গে চাহিদা বেড়েছে এ্যান্টিক গহনার। সোনার রং ও নিখুত কারুকার্যে তৈরী এসব গহনা এখন রমনীদের সাজের কাজে ব্যবহার হচ্ছে।

বগুড়ায় এ্যান্টিক এর পাইকারী ব্যবসায়ী আবু জাকির হোসেন মিঠু জানান, ৯০এর দশক থেকে বগুড়ায় প্রথম শুরুহয় এ্যান্টিক গহনার বেচাকেনা। সেসময় বগুড়ায় ৩জন ব্যবসায়ী ভারত ও চীনথেকে কিছু মালামাল নিয়েএসে বগুড়ায় ব্যবসা করতো। সেসময় এর তেমন চাহিদা ছিলনা। পাশাপাশি কোন স্বর্ণের কারিগরও এটি সহজে বানাতে চাইতোনা। কিন্ত পর্যায়ক্রমে দেশে স্বর্ণের দাম বাড়তে থাকলে এ্যান্টিক’স এর চাহিদা বাড়ে। এখন বগুড়ায় এ্যান্টিকের বৃহৎ পাইকারী বাজার গড়ে উঠেছে। প্রায় ৫শ জন ব্যবসায়ী এরসঙ্গে জরিয়ে পড়েছে। মাসে এখানে প্রায় শত কোটি টাকার এ্যান্টিক অলংকার বিক্রি হয়। প্রতিদিন এখান থেকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাইকারী ভাবেই এ্যান্টিকস অলংকার বিক্রি হচ্ছে।

বগুড়াতেই এখন নিখুত ডিজাইনের চুড়ি, মালা, আংটি, টিকলি, বিছাসহ সব ধরনের গহনাই তৈরী হচ্ছে। তিনি আরো জানান, বর্তমানে এই অলংকারের চেন, পাথরসহ কিছু খুদ্র মালামাল ভারত থেকে নিয়ে আসতে হয়। এগুলোও আমাদের দেশে তৈরী হলে সরকারের অনেক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।

শুধু বগুড়া থেকেই মাসে প্রায় শত কোটি টাকার মাল পাইকারী বিক্রি হয়। এসময় স্বর্ণের কাজের কারিগড়রাও তাদের বেকারত্ব ঘোচাতে এ্যান্টিক’স মাল তৈরী করতে শুরু করে।
বগুড়ায় এ্যান্টিকের খুচরা ব্যবসায়ী বায়েজীদ হোসেন চাঁন জানান, বগুড়ায় থেকেই মাসে প্রায় ৫ লক্ষাধীক টাকার এ্যান্টিক গহনা খুচরা বিক্রি করে থাকি। বর্তমানে এর এত চাহিদা যে অনেক সময় গ্রাহকদের সময় মত সরবরাহ করা যায়না।

বগুড়া সদরের ধরমপুর এলাকার এ্যান্টিকের নারী শ্রমিক খুকি বেগম জানান, গত তিন বছর ধরে সে এ কাজ করছি। একাজকরে মাসে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা আয় হয়। এটাকাদিয়ে বাচ্চার প্রাইভেটের খরচ, নিজেদের কাপড় চুপুরসহ সংসারের কাজ করি। তিনি আরো জানান, এশেপাশের ৮/১০ টি গ্রামের শত শত মহিলারা নিজেদের ঘড়ের কাজের পাশাপাশি এ্যান্টিক গহনার কাজ করছে। একাজ করে অনেকেই সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে।

বগুড়া স্বর্ণ শিল্পি শ্রসিক ইউনিয়নের সভাপতি ইব্রাহীম হোসেন জানান, বগুড়ায় বৃহৎ এ্যান্টিকের বাজার গড়ে উঠায় এখানকার শ্রমিকেরা রক্ষা পেয়েছে। সোনার কাজের যা অবস’া কারিগরদের পেশা বদল ছাড়া কোন উপায় থাকতোনা। জেলায় বর্তমানে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক রয়েছে। যারমধ্যে প্রায় দেড় হাজার রয়েছে নারী শ্রমিক। এখানে একাজের মাধ্যমে নারীরাও খুজে পেয়েছে নতুন কর্মক্ষেত্র। বগুড়া শহরের কয়েকটি গ্রামে এখন ঘড়ে ঘড়ে কারখানা তৈরী হয়েছে। যেগুলোতে কাজকরে গ্রামের মেয়েরাও সাবলম্বী হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here