হ্যান্ডবুক অন ইমপ্লিমেন্টেশন অব দ্য সেভেন ফাইভ ইয়ার প্লানস্টাফ রিপোর্টার :: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অর্থায়ন। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির জন্য বাংলাদেশের অতিরিক্ত প্রয়োজন হবে ৭৪ লাখ ২৭ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা।

সাধারণভাবে সরকারি উন্নয়ন ব্যয়ের অতিরিক্ত হিসেবে প্রয়োজন হবে এ পরিমাণ অর্থ। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এবং জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএডিপি যৌথভাবে ‘এসডিজিস নিড অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড ফাইনান্সিং স্ট্রাটেজি, বাংলাদেশ পারসপেকটিভ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ হিসাব দেখিয়েছে।

বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে জিইডি। এছাড়া বাংলাদেশ ভলান্টারি রিভিউ-২০১৭ অন এসডিজিস এবং এ ট্রেইনিং হ্যান্ডবুক অন ইমপ্লিমেন্টেশন অব দ্য সেভেন ফাইভ ইয়ার প্লান শীর্ষক দুটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

রাজধানীর শেবেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।

পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিইডির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন, অর্থ বিভাগের সচিব মুসলিম চৌধুরী, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম এবং ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জী।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসডিজি বাস্তবায়নে মোট অর্থায়নের মধ্যে ৭৯ হাজার ৬০৯ কোটি ডলার সরকারি তহবিল থেকে যোগান দিতে হবে। অন্যদিকে ১৩ হাজার ২৩৯ কোটি ডলার বৈদেশিক সহায়তা সংগ্রহ করার কৌশল নেওয়া হয়েছে। এসডিজি বাস্তবায়নে ৫টি খাত থেকে অর্থায়ন আসবে। এর মধ্যে বেসরকারি খাত থেকে আসবে প্রতিবছর মোট অর্থায়নের ৪২ দশমিক ০৯ শতাংশ।

সরকারি তহবিল থেকে প্রতিবছর ৩৫ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) থেকে বছরে ৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ আসতে হবে। এছাড়া বৈদশিক অর্থায়নের লক্ষ্য রয়েছে বছরে ১৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং এনজিওদের কাছ থেকে ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ অর্থায়ন আসতে হবে প্রতিবছর। অর্থায়নের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কৌশলগুলোও তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এইচ টি ইমাম বলেন, দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হলে আমাদের ভোট দিতে হবে। কেননা আমরা জঙ্গিবাদ দমন করে স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছি। কিন্তু হঠাৎ করে মিয়ানমারে জেনোসাইড হওয়ায় আমাদের দেশে রোহিঙ্গাদের চাপ পড়েছে। কিন্তু আমরা এ সমস্যা সমাধান করে এগিয়ে যাব। রোহিঙ্গা ইস্যু শেখ হাসিনা যেহেতু বিশ্বায়ন করতে পেরেছেন তেমনি এসডিজি বাস্তবায়নে সফল হবে।

তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ থেকে ডাবল ডিজিটে নিয়োজিত হবে। তাছাড়া ডুইং বিজনেস পরিবেশের উন্নয়নে কাজ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্য পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অবকাঠামো খাতে আমরা অনেক এগিয়েছি। এখন শুধু বিদ্যুৎ খাতে সক্ষমতা অর্জন করতে পারলে বাংলাদেশ বিনিয়োগের আকর্ষণীয় স্থান হবে।

তিনি জানান, এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে এখন বেসরকারি অথবা বিদেশি বিনিয়োগ নেওয়া হবে। যাতে টোল আদায় করে ঋণ পরিশোধ করা যায়।

অর্থ বিভাগের সচিব মুসলিম চৌধুরী বলেন, এমডিজিতে অনেক অর্জন আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হলে শুধু সরকারি অর্থায়নের ওপর নির্ভর করলে হবে না, বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, আমাদের বৈদেশিক অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি ও অর্থছাড় বাড়ছে। আমরা সবাই মিলে কাজ করলে এমডিজির মতো এসডিজিতেও সাফল্য আসবে।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর ২০ লাখ যুবক কর্মের বাজারে প্রবেশ করছে। অথচ এমন অনেক দেশ আছে যাদের লোকসংখ্যাও এর চেয়ে কম। এই কর্মসংস্থান সৃষ্টির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। এসডিজি বাস্তবায়ন করতে হলে বেসরকারি খাতকে পুরোপুরি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। সবাইকে ওন করতে হবে এবং এসডিজির কার্যক্রমকে আলাদাভাবে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে।

ইউএনডিপির কান্ট্রি ডিরেক্টর সুদীপ্ত মুখার্জী বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে নারী-পুরুষের সমতার ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও এগিয়ে যাচ্ছে। এসডিজি বাস্তবায়নে ব্যাপক তৎপরতা রয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ উন্নয়ন ফোরামের বৈঠকে অর্থায়নের বিষয়টি তুলে ধরা হবে। আশা করছি দাতাদের সাড়া মিলবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি কর্মসংস্থানও যাতে বৃদ্ধি পায় সেদিকে নজর রাখতে হবে।

মূল প্রবন্ধে জিইডির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম জানান, ২০১৬ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী এসডিজি বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে সারা বিশ্বের উন্নয়ন টেকসই করতে ১৭টি লক্ষ্য এবং ১৬৯ টার্গেট নির্ধারণ করেছে জাতিসংঘ। এসডিজি লক্ষ্য এবং টার্গেট মূল্যায়নে রয়েছে ২৩০টি সূচক । বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ২৩০টিসহ মোট ২৪১টি সূচক নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশ সপ্তম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে এসডিজির বাস্তবায়ন শুরু করেছে। তাছাড়া এখন পর্যন্ত এসডিজি বাস্তবায়নে উদ্যোগ এবং কর্মসূচি সম্পর্কে তুলে ধরেন তিনি।

প্রতিবেদনে বৈদেশিক উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহের কৌশলে বলা হয়েছে, প্রতি অর্থবছর গড়ে বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হবে ৬৯১ কোটি ডলার। ঋণ ও অনুদান হিসাবে গড়ে দাতাদের কাছে থেকে সংগ্রহ করতে হবে ২৫৫ কোটি ডলার। প্রথম চার বছরের জন্য গড়ে এফডিআই ধরা হয়েছে ২৭৩ কোটি ডলার । এর পরের চার অর্থবছরের জন্য ৬৪৫ কোটি ডলার ও শেষ চার অর্থবছরে গড়ে ১ হাজার ৭০ কোটি ডলার এফডিআই আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ভলান্টারি ন্যাশনাল রিভিউ-২০১৭ প্রতিবেদনে এসডিজির বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান, লক্ষ্য অর্জনের পথে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, করণীয় ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

এসডিজি অর্জনের পথে অর্থায়নসহ মোটা দাগে পাঁচটি চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে। এসডিজি অর্জনে অর্থায়ন একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এছাড়া বেসরকারি খাত, এনজিওসহ বিভিন্ন পক্ষের অংশগ্রহণের নিশ্চয়তা, বিভিন্ন সূচকের সঠিক তথ্য প্রাপ্তি, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে নেওয়া সূচকগুলো স্থানীয় চাহিদার পর্যায়ে সঠিক সমন্বয় এবং লক্ষ্য অর্জনে প্রযুক্তিগত দক্ষতার অভাবকেও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে প্রতিবেদনে উলেখ করা হয়েছে। এসডিজি অর্জনে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে তিনটি বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে জিইডির প্রতিবেদনে। এগুলো হচ্ছে, ব্যবসা খাতকে উৎসাহিত করতে ব্যবসাসহায়ক পরিবেশ তৈরি, কর ও ভর্তুকি নীতিমালার মাধ্যমে বেসরকারি খাতকে প্রণোদনা দেওয়া এবং বহুজাতিক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here