এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রীর প্রাক্-বাজেট আলোচনাস্টাফ রিপোর্টার :: রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) এনজিও প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রাক্-বাজেট (২০১৭-১৮) আলোচনা করেছেন অর্থমন্ত্রী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

আলোচনা সভায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার (এনজিও) কর্মকর্তারা বাজেট বিষয়ে বিভিন্ন দাবি ও পরামর্শ তুলে ধরেন। সভায় ৩৭টি এনজিওর প্রধান কর্মকর্তা ও প্রতিনিধি অংশ নেন।

অর্থমন্ত্রী বলেন, যেসব সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ করে মেডিক্যাল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন ও টিউশন ফি ১২ থেকে ২০ টাকার মধ্যে সেগুলো বাড়িয়ে আগামী বাজেটে চার থেকে পাঁচগুণ করা হবে। বেতন ও টিউশন ফিতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খরচ বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।

তিনি বলেন, ২০৩০ সালের আগেই বাংলাদেশ এসিডিজি অর্জনে সক্ষম হবে। তবে এক্ষেত্রে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দেবে। এজন্য জেলা পরিষদগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

অলোচনা সভায় টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যকে (এসডিজি) সামনে রেখে ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়ণের আহ্বান জানান বক্তারা। এজন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পানি, স্যানিটেশন, পরিবেশ, অবহেলতি জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী ইত্যাদি খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন।

সভায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোর বেতন ও টিউশন ফি ১২ থেকে ১৬ টাকা। হোস্টেল ফিও অনেক কম। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেতন ও আবাসিক হলের চার্জও দীর্ঘদিন ধরে অনেক কম। অথচ একই সময়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-টিউশন ফি অনেক বেশি। তাই যৌক্তিকভাবে এগুলো বাড়ানো উচিত।

তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্যখাতে আইসিইউর নামে যে বাণিজ্য চলছে, তা বন্ধ হওয়া উচিত। দেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর আইসিইউর ভাড়া ফাইভ স্টার হোটেলের চেয়েও বেশি। দেশের সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়ন হেলথ সেন্টারে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের অতিরিক্ত এক বছর সেবাদান বাধ্যতামূলক করা এবং চিকিৎসাসংক্রান্ত যন্ত্রপাতির ওপর কর কমানো উচিত।

গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় জাতীয় আয়ের ৬ শতাংশ অথবা মোট জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা এখন সময়ের দাবি। এজন্য সরকারের রূপকল্প ২০২১ ও জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০-এর বাস্তবায়নের বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখে একটি রোডম্যাপ প্রণয়ন করতে হবে এবং তার ভিত্তিতে শিক্ষা খাতে ক্রমান্বয়ে মোট বাজেটের ২০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দের জন্য দিকনির্দেশনা দিতে হবে।

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন সংস্থার প্রধান নির্বাহী শাহীন আনাম বলেন, সরকার ইতোমধ্যে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচি চালু করেছে। প্রতিবন্ধী, দলিত, হিজড়া, বেদেসহ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।

ডরপ এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এএইচএম নোমান বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় দরিদ্র মাদের জন্য ‘মাতৃত্বকালীন ভাতা’র পরিমান ৫০০শ টাকা থেকে ১০০হাজার টাকায় উন্নিত করা এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ‘স্বপ্ন প্যাকেজ’ কর্মসূচীটি সম্প্রসারণের জন্য আগামী বাজেটে জনপ্রতি এক লক্ষ টাকা করে, একশত জন করে, ১০০টি উপজেলার জন্য মোট ১০০কেটি টাকা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব করেন। এ ছাড়া তিনি, পানি ও স্যানিটেশন খাতকে আলাদা খাত হিসেবে চিহ্নিত করা এবং বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ উপজেলায় ৭৫ ভাগ পরিবারে সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে- নদীর পানি শোধন করে গ্রাম পর্যায়ে সরবরাহের ব্যবস্থা ও প্রতিটি গ্রামে অন্ত:ত ২টি করে পুকুর খনন করারও দাবী করেন।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক আবু নাসের খান বলেন, অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মতো পরিবেশ মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তর প্রকল্প বাস্তবায়ন নিয়েই ব্যস্ত থাকে। অথচ তাদের কাজ হওয়া উচিত অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশ-প্রতিবেশের ওপর দীর্ঘমেয়াদে কী প্রভাব পড়বে তা মূল্যায়ন করা।

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here