ঢাকা: রাজধানীতে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ব্যবস্থা জোরদার করতে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সঙ্গে সহজ শর্তে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার ঋণ চুক্তি করেছে বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন ও এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর কাজুহিকো হিগুচি। এ সময় ঢাকা ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খান উপস্থিত ছিলেন।

এডিবি ছাড়াও এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছে আরও দুটি সংস্থা। দাতা সংস্থা ও সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মেঘনা নদী থেকে পাইপলাইনে পানি এনে তা শোধন করে রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় পূরণ করা হবে বিশুদ্ধ পানির চাহিদা।

ইআরডি সচিব বলেন, এ প্রকল্প বাস্তবায়নে এডিবির ঋণের পাশাপাশি ফরাসি উন্নয়ন সংস্থা (এএফডি) দেবে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা ও ইউরোপীয় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (ইআইবি) দেবে আরো ৮০০ কোটি টাকা। এ ঋণে সুদের হার ২ শতাংশ। ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২৫ বছরে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হিগুচি বলেন, রাজধানীতে পানি সরবরাহ করার মধ্য দিয়ে পানির নতুন একটি উৎস হিসেবে ব্যবহার হবে মেঘনা নদী। অন্যদিকে ভূ-গর্ভস্থ পানির চাপও কমবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ২৪৮ কোটি ৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে এডিবির প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ঋণের সঙ্গে অন্য দুটি দাতা সংস্থার ১ হাজার ৬০০ কোটি, সরকারি নিজস্ব তহবিলের ১ হাজার ৭৩৮ কোটি ৮২ লাখ ও ঢাকা ওয়াসার ১০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে ঢাকা ওয়াসা। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হবার কথা রয়েছে।

চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ঢাকা মহানগরীর পুরান ঢাকা, মতিঝিল, পুরানা পল্টন, উত্তরা, গুলশান, বনানী, নিকুঞ্জ, খিলখেত, বাড্ডাসহ পুরো মিরপুর ও এর আশপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনের তুলনায় পানি সরবরাহ কম। এসব এলাকায় পানি সরবরাহের মূল উৎস গভীর নলকূপ। প্রতিনিয়ত নলকূপগুলোর পানি উত্তোলনের ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। তা ছাড়া শীতলক্ষ্যা নদীর পানির মান প্রতিনিয়তই খারাপ হচ্ছে। ফলে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে পানি পরিশোধন।

নতুন এই প্রকল্পের আওতায় মেঘনা নদী থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি নারায়ণগঞ্জ জেলার বিশনন্দী, আড়াইহাজার ও রুপগঞ্জ হয়ে গন্ধার্বপুর এলাকায় ট্রিটমেন্ট প্লান্টের মাধ্যমে পরিশোধন করা হবে। এতে প্রতিদিন ৫০০ এমএলডি পানি পরিশোধন করে সরবরাহ করা যাবে। এ কারণে একদিকে যেমন ঢাকা মহানগরীর বিশুদ্ধ পানির সংকট দূর হবে, অন্যদিকে মাটির নিচ থেকে পানি উত্তোলন কমে গেলে পরিবেশ বিপর্যয় রোধে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে এ বিষয়ে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত বছরের ১৯ আগস্ট ও ১৫ সেপ্টেম্বর দুই দফায় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সম্প্রতি প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনেতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here