ডেস্ক রিপোর্ট :: বিশ্ব ফুটবলের জীবন্ত কিংবদন্তি দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। ফুটবল ইতিহাসে হ্যান্ড অব গড কিংবা গোল অব দ্য সেঞ্চুরি, দুটোরই কারিগর তিনি। পুরো ক্যারিয়ারে চারটি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে খেলেছেন দুটি বিশ্বকাপের ফাইনাল। বয়সভিত্তিক দলেও তার প্রতিভার দুত্যি দেখেছে ফুটবল বিশ্ব। ছোটদের বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদও আছে তার ঝুলিতে।

১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর। বুয়েন্স আইরেসের লানুস শহরে জন্ম দিয়েগো আর্মান্দো ম্যারাডোনার। চিতরো দিয়েগো ম্যারাডোনা ও দোনা তোতা দালমা সালভাদর ফ্রাঙ্কোর তিন কন্যা সন্তানের পর ঘর আলো করে জন্ম নেয় এক পুত্র সন্তানের। দরিদ্র পরিবারটি সে সময় ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি, এই ছেলেই একদিন বিশ্বজয় করবে। তার হাত ধরেই বিশ্বকাপ ফুটবল জিতবে আর্জেন্টিনা।
শুরুটা বলবয় হিসেবে। একটু আনন্দের পাশাপাশি সামান্য অর্থও মিলতো তাতে। অর্থের খোঁজেই বনে গেলেন ফুটবলার। ১৯৬৮ সালে এসত্রেয়া রোজার হয়ে শুরু। এরপর সিনিয়র দলে ম্যারাডোনার যাত্রা শুরু আর্জেন্টিনোস জুনিয়র্স হয়ে। ১৯৭৭ সালে খুলে যায় জাতীয় দলের দরজা। ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৬ বছর বয়সে হাঙ্গেরির বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। ১৯৭৯ সালে আর্জেন্টিনার হয়ে ১৮ বছর  বয়সে ফিফা অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপে অংশ নেন। ফাইনালে সোভিয়েত ইউনিয়নকে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় আর্জেন্টিনা। আসরে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়ে সবার নজর কেরে নেন ম্যারাডোনা।

১৯৮২ সালে ক্যারিয়ারের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নামেন ম্যারাডোনা। তবে, খুব বেশি আলো ছড়াতে পারেননি। ব্রাজিলের সঙ্গে লাল কার্ড দেখে দ্বিতীয় পর্ব থেকেই বিদায় নেয় ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা।

চার বছর পর বিশ্বকাপের মঞ্চে আবারো আর্জেন্টিনা। এবার আগের চেয়ে বেশি পরিণত ম্যারাডোনা। মেক্সিকোর সে বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্ব থেকেই দুর্দান্ত খেলতে থাকে আলবিসেলেস্তেরা।কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। দু’দেশের মধ্যে ফকল্যান্ড যুদ্ধের কারণে খেলায় ছড়িয়ে পড়ে বাড়তি উত্তেজনা। ক্ষণে ক্ষনে রং বদলায় ম্যাচের ৫১ মিনিটে শূন্যে লাফিয়ে উঠে হাত দিয়ে গোল করেন ম্যারাডোনা। হেডের ছলে তার হাতের টোকায় করা গোল এতটাই নিখুঁত ছিলো যে মাঠে থাকা রেফারি আলী বিন নাসেরও তা দেখতে পাননি। ইতিহাসে সে গোলেরই পরে নাম দেয়া ‘হ্যান্ড অব গড’। ম্যাচে এরপর আরো একটি গোল করেন ম্যারাডোনা। যা ইতিহাসের গোল অব দ্য সেঞ্চুরি হিসেবে পরিচিত।

সেমিফাইনাল ফাইনাল সব জায়গাতেই ম্যারাডোনা ছিলেন অনন্য। ফাইনালেতো পশ্চিম জার্মানির ফুটবলাররা তাকে শুরু থেকেই কড়া মার্কিংয়ে রাখে। কিন্তু তারপরও তার বাড়িয়ে দেয়া পাসে জয়সূচক গোল করেন বুরুচাগা। ৩-২ গোলের জয়ে বিশ্বকাপ জিতে নেয় আর্জেন্টিনা। আসরে আর্জেন্টিনার ১৪টি গোলের ১০টিই অবদান ছিলো ম্যারাডোনার। আসরে সেরা ফুটবলারের পুরস্কার গোল্ডেন বলও জিতে নেন তিনি। এর আগে অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপেও গোল্ডেন বল জিতেছিলেন ম্যারাডোনা।

১৯৯০ বিশ্বকাপে আবারো সুযোগ এসেছিলো বিশ্বকাপ জয়ের। কিন্তু ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির বাধা অতিক্রম করতে পারেনি আলবিসেলেস্তেরা। রানার্সআপ হয়েই শেষ হয় ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ যাত্রা। ১৯৯৪ বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনা ও ম্যারাডোনার জন্য হয়ে থাকবে কলঙ্কময় এক অধ্যায়। নিষিদ্ধ মাদক এফিড্রিন নেয়ার দায়ে বিশ্বকাপ থেকে ম্যারাডোনাকে বহিস্কার করে ফিফা। দ্বিতীয় পর্ব থেকে বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা। এ বিশ্বকাপের পর ১৭ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন ম্যারাডোনা। পুরো ক্যারিয়ারে তিনি ৯১টি ম্যাচে ৩৪টি গোল করেন।

ক্লাব ক্যারিয়ারে খেলেছেন বোকা জুনিয়র্স, বার্সেলোনা, নাপোলি, সেভিয়া, নিউওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে। ম্যারাডোনা বিশ্ব একমাত্র ফুটবলার যিনি দলবদলে রেকর্ড গড়েন। একবার বার্সেলোনায় যাওয়ার সময় আরেকবার নাপোলিতে গিয়ে। কোচিং ক্যারিয়ারে আর্জেন্টিনা জাতীয় দল ছাড়াও তিনি দুবাইয়ের ক্লাব আল ওয়াসলের কোচ হিসেবে কাজ করেছেন।

পুরো ক্যারিয়ারে কখনোও নন্দিত আবারো মাদক নিয়ে হয়েছেন নিন্দিত। প্রেমিকার গায়ে হাত তোলা। এরপর গ্রেফতার হওয়া। গণমাধ্যমের ওপর চড়াও হওয়া এ সব মিলেই ম্যারাডোনা। তারপরও বিশ্ব ফুটবলে তিনি এক জীবন্ত কিংবদন্তি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here