আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধরবীন্দ্র নাথ পাল: ১৯৭১সাল। এর আগে ৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিশাল জয়। ক্ষমতা হস্তান্তর হবে কি না এ নিয়ে টান টান উত্তেজনা চলছে। কি হবে, ক্ষমতা শান্তিপুর্ন হস্তান্তর করবে কিনা ইয়াহিয়া সরকার। এরকম উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে একমাত্র বিবিসি ও আকাশ বানী কোলকাতা কেন্দ্রই সাধারনে মানুষের ভরসা। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্সের সভায় এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম। বঙ্গবন্ধু’র এ ঘোষনার পর সর্বত্র স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য সাধারন মানুষের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

আমি তখন ক্লাশ নাইনে পড়ি। ময়মনসিংহ শহরের মধ্যে তখন নামকরা স্কুল মৃত্যুঞ্জয় হাই স্কুল। এর লাগোয়া রাধা সুন্দরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। সে সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন শ্রদ্ধেয় গোপী নাথ দত্ত।

৭ই মার্চের ভাষনের পর ঢাকায় ২৫মার্চ হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী গভীররাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র বাঙ্গালীর উপর। সেইরাতেই বঙ্গবন্ধুকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানে। এ ঘটনার পর শহরের রাস্তাঘাট খালী হয়ে যায়। অফিস পাড়া খালী হয়ে যায়। শহরের বিহারী অর্থাৎ পাকিস্তানী পন্থীরা ও মুসলীমলীগের লোকজনের পদচারনা বেড়ে যায়। আমাদের এলাকা ছিল পন্ডিতপাড়া। আওয়ামীলীগের জাদরেল এমপি মরহুম শামসুল হকের বাসা লাগোয়া।

পাকিস্তানী দালাল ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের আনাগোনা ছিল পন্ডিতপাড়ায়। ২৫মার্চের পর এলাকা জন শুন্য হতে থাকে। মুসুলমান সমপ্রদায়ের গন্যমান্য ব্যক্তিরা তাদের পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ী চলে যেতে থাকলে হিন্দুরাও নিরাপদ স্থান বেছে নেয় পার্শ্ববর্তী মুসুলমান সমপ্রদায়ের গ্রামের বাড়ীতে। এরই মধ্যে ময়মনসিংহে ইপিআর ক্যাম্পে হানা দিয়ে বাঙ্গালী ও ইপিআরের বাঙ্গালী সিপাই মিলে পাকিস্তানী ইপিআরদের হত্যা করে দখল নেয় ইপিআর ক্যাম্প। আমিও সেসময় ইপিআর ক্যাম্পে হামলা সরজমিনে প্রত্যক্ষ করার জন্য খাগডগর ইপিআর ক্যাম্পে উপস্থিত ছিলাম।

আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে, বাঙ্গালী সাধারন মানুষ ও ইপিআরের বাঙ্গালী সেনাদের তীব্র আক্রমনের মুখে পাঞ্জাবী ও বেলুচ সেনাদের অনেকেই ক্যাম্পে মারা যায়। ৫/৬ জন পার্শ্ববর্তী রেললাইন ধরে পালাবার সময় জনতার হাতে ধরা পড়ে। পরে তাদের কুপিয়ে ও বল্লম দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে জনতা। এটা মার্চ অথবা এপ্রিলের প্রথম দিকের ঘটনা। এর ক’দিন পরেই হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী বোমারু বিমান দিয়ে শম্ভুগঞ্জ গোদারা ঘাটে বেশ কটি বোমা ফেলে আতংক সৃষ্টি করে। বেশ ক’টি বাস বোমায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আমাদের

পরিবার তারাকান্দায় আগেই চলে যায়। বাসা পাহাড়া দেবার জন্য আমি পন্ডিতপাড়া বাসায় অবস্থানকালীন সময়ে দেখি বোমা ফেলার পর পাকিস্তান বাহিনীর দালালরা ও বিহারীরা একজোট হয়ে গুজব ছড়িয়ে দেয় রেল পথে গফরগাঁও এসে গেছে মিলিটারীরা।এই গুজবে পর পাকিস্তান পন্থীরা তাদের আনুগত্য দেখানোর জন্য বাড়ীতে পাকিস্তানী পতাকা উড়িয়ে রাখে।

সম্ভবত মধ্য এপ্রিলে পাক হানাদার বাহিনী যখন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ে আসে,তখন আমি শহর ছেড়ে তারাকান্দা রওনা দেই। ওখানে গিয়ে শুনি আমার পরিবারের লোকজন নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য চলে গেছে বাট্রা কলহরি গ্রামে আদম আলীর বাড়ীতে আশ্রয় নিয়েছে। আমরা ৯ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে একমাত্র মেজভাই এমপি শামসুল হকের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সে আগেই হালুয়াঘাট দিয়ে শামসু ভাইয়ের সাথে ভারতের তোরা শহরে চলে যায়।

এরপর আমি আমার পরিবারের সাথে কলহরি গ্রামে দেখা করি।আদমআলীর পরিবার আমাদের যথেষ্ট সাহায্য করে। তার স্ত্রী অনেক সময় রান্না করে আমাদের ভাইবোনদের খাবার দিয়েছে।ঐখানে আমার জ্যাঠা মারা যান।দাহ করার সময় ওরা আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করে। জুন মাসের শেষ দিকে কলহরি গ্রামে পাক বাহিনী আমাদের বাবা দুর্গা মোহন পালকে ধরার জন্য রাজাকারদের সাহায্য নিয়েছে।

আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধ৬৫ সনে পাক ভারত যুদ্ধের সময় আমার বাবা পাকিস্থান সরকারের নজর বন্দী ছিলেন প্রায় ১ বৎসর।বাবাকে ধরবে এ খবর আদম আলীর ছেলে জেনে আমাদের জানালে আমরা পরিবার নিয়ে কলহরি গ্রাম ছেড়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দেই গোয়াতলা হয়ে।তাই আমরা বাবাকে নিয়ে চিন্তায় ছিলাম। তার উপর বাবার সামনেই তার বড়াভাই (আমার জ্যাঠা) মারা যান। পথে আমুয়াকান্দা বাজারে কয়েকদিন থাকার পর আমাদের পরিবারে বন্ধু আলী হাসান ভাইয়ের বাবা আমাদের খাওয়ার ব্যবস্থা করে।

আমার পিতা উকালতি করতেন, তার মহুরী ছিল যার বাড়ী আমুয়াকান্দায়। নাম তার সুরুজ মুহুরী। হঠাৎ একদিন সে আমুয়াকান্দা যার বাড়ী থাকি তার বাড়ী ঘেরাও দিয়ে আমাদের সোনাদানা লুটে নেয়। কারন সে ছিল ঐ এলাকার রাজাকার কমান্ডার। এরপর আর আমুয়াকান্দা থাকা নিরাপদ নয় মনে করে ভারতে যাবার পরিকল্পনা করি। বাবাকে ধরার জন্য বেশক’বার দালালরা পাকবাহিনী নিয়ে হানা দিলেও বাবা বাইরে থাকায় এবং পরিবারের লোকজন মুসুলমান ভাইদের সহায়তায় পাট ক্ষেতে আশ্রয় নেয়।

যার জন্য পাঞ্জাবীরা পরিবারের কাউকে খুঁজে পায়নি।এমন পরিস্থিতিতে জীবন বাঁচানোর তাগিদে আমরা ফুলপুরের আমুয়াকান্দা এসে বাবার মহুরী রাজাকারের হাতে সব হারিয়ে নি:স্ব হয়ে যাই। আমুয়াকান্দা যে কয়দিন ছিলাম সেখানে থাকা অবস্থায় পরিবারের বন্ধু আলী হাসান ভাইয়ের পিতার সহায়তায় ক’দিন থাকা ও খাবার ব্যবস্থা করেন এবং ভারতে যাবার জন্য ব্যবস্থা করে দেন। আমুয়াকান্দা থেকে গোয়াতলা হয়ে ঘোষগাঁও বাজার হয়ে ভারতের মেঘালয়ের শিববাড়ী ক্যাম্পে পৌঁছি।

সেটা জুনমাসের শেষ দিকের কথা। মেঘালয়ের শিববাড়ী ক্যাম্পে পৌঁছার পর ভারতের বিএসএফ আমাদের পরিচয় এবং ঐখানে ময়মনসিংহের যারা ছিলেন,তাদের ডেকে পরিচয় নিশ্চিত করে। সেখানে শম্ভুগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা শামছু ভাই ছিলেন। তিনি ও আমাদের পরিচয় নিশ্চিত করার পর শিববাড়ী ক্যাম্পে আমাদের আশ্রয় দেয়া হয় একটি স্কুল ঘরে। আমার বড় বোন ৬৯ সনে ঢাকা ইউনিভারসিটি থেকে অর্থনীতিতে প্রথম শ্রেনীতে পাস করায় তাকে স্কুলঘরের সামনের কোঠায় শরনার্থীদের জন্য বরাদ্ধ করা রেশন সরবরাহের দেখভালের দায়িত্ব দেয়া হয়।৫/৭ শরনার্থী ছিল শিববাড়ী ক্যাম্পে।

তার পাশে ছিল বারেঙ্গাপাড়া শরনার্থী শিবির ও তোরা শরনার্থী শিবির। আমাদের রেশনে দেয়া হতো ২৭কেজি চাল, ৩কেজি ডাল,দেড়কেজি সোয়াবিন, ৫কেজি আলু, কাপড় ধোয়ার সাবান ও কেরোসিন তেল। মেঘালয়ের গারো অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় গারোরাই মুলত ক্যাম্পে মাতুব্বরী করতো। তবে শরনার্থীদের সাথে খারাপ আচরন করতে পারতো না।কারন ছিল বিএসএফ তদারকি করতো শরনার্থী শিবির। ভাগ ভাগ করে ক্যাম্পে শরনার্থীদের রেশন দেয়া হতো বিধায় সবাই লাইন ধরে রেশন নিতো।বিএসএফ প্রহরায় থাকতো।

কারো গলযোগ করার সাহস হতো না। সপ্তাহে ৭দিনই সকাল থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত লাইন ধরে রেশন দিতো। কে কবে রেশন পাবে, সেটা নির্দ্ধারিত ছিল। আমি রেশন মাপার কয়েলের কাজ করতাম। রেশন ৭/৮ টি ভাগে বিভিন্ন লোকজন দিতো। ভারতীয় একজন অফিসার ও আমার বড় বোন (পরে তিনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক ছিলেন) দেখভালের দায়িত্ব ছিল।

আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধবড় বোন কল্যানী পাল ঢাকা ভার্সিটিতে পড়া অবস্থায় ছাত্র ইউনিয়ন করতো। পরে দেশ স্বাধীনের পরে সরকারী চাকুরী হবার পর আগ পর্যন- বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ময়মনসিংহ জেলা শাখার সেক্রেটারী ছিলেন। ভারতে শরনার্থী থাকার সময় শরনার্থী বিধায় বাস-ট্রেন,এমনকি লঞ্চে চলাচলে শরনার্থী সুবাদে আমাদের কোন টিকিট লাগতো না। হামলোগ বাঙ্গাল ছে আয়া বললেই আর ভাড়া চাইতো না।

সে কারনেই রেশন দেয়া শেষ করেই পাশের বারেঙ্গা পাড়া ও তোরা শরনার্থী শিবিরে চলে যেতাম। প্রায় সবখানেই একই অবস্থায় রেশন বিলি হতো বিধায় এবং তদারকি ব্যবস্থা ভাল থাকায় কোথাও গলযোগের কোন সুযোগই ছিল না। বিনা পয়সায় পাহাড়ী পথে দুপুরে রওনা দিতাম প্রায় প্রতিদিনই। এ নিয়ে গারো বাস কন্ডাক্টররা মাঝে মাঝে হাঁসাহাঁসি করতো। শিববাড়ী ক্যাম্পে একজন গারো ছিল যার বয়স ৪০ এর মত।

অথচ তার স্বাস্থ্য অত্যন্ত মজবুত। কাঠাল বাঙ্গালীদের প্রিয় হলেও গারোরা কাঠাল একদমই পছন্দ করতো না।পাহাড়ে অজস্ত্র কাঠাল গাছে কাঠাল পেকে থাকতো। বাঙ্গালীরা গাছ থেকে কাঠাল পেড়ে খেলে গারোরা খুব হাসাহাসি করতো। আর বলতো বাঙ্গাল কাঠাল খায়। গারাদের মামা বলে ডাকলে খুব খুশী হতো বিধায় আমরা বাঙ্গালীরা মামা বলে ডেকে গাছ থেকে অনায়াসে কাঠাল পেড়ে খেতাম।আর ওরা হাসতো।লাল মাটির সবুজ উঁচু পাহাড় ঘেরা মাঝে সমতলে ছিল শিববাড়ী শরনার্থী ক্যাম্প। স্কুলের লাগোয়া একটি খরস্রোতা পাহাড়ী নদী থাকায় শরনার্থীদের গোসল কাপড় ধোয়ার কোন সমস্যা ছিলনা।

খাবার পানির জন্য বেশ কয়েকটি টিউবওয়েল থাকায় খাবার পানির সংকট হয়নি। তবে পাহাড়ী নদীতে স্নান করায় প্রায় সবারই চর্ম রোগে আক্রান্ত ছিল। খুঁজলী -প্যাঁচরা, ডায়রিয়া, আমাশয় রোগ থাকলেও মেডিকেল ক্যাম্প তাদের যথাসাধ্য সেবা দেবার চেষ্টা করেছে। এরমধ্যে অনেকেই মারা গেছেন। তাদের কারো দাহ,কারো দাফন হয়েছে। প্রায়ই সন্ধ্যায় মুক্তিবাহিনী অপারেশনে যেত বিধায় রাত ৯/১০টার পর শরনার্থীরা বাইরে বের হতো না।

ছোট খাট অপরাধ হলেও ভারতীয় কর্মকর্তা ও বিএসএফ সবসময় তৎপর থাকায় বড় দুর্ঘটনা হতো না। আগষ্ট মাসের শেষ দিকে পাকবাহিনী সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের তোরা ক্যাম্পের শরনার্থী শিবিরে হামলা চালায় বলে শুনেছি। তখন বেশ ক’জন বিএসএফ ও শরনার্থী মারা যাবার খবর পাই শিববাড়ী ক্যাম্পে থেকে,যার সত্য মিথ্যার খবর আমার জানা নেই। পরবর্তীতে ঐ আক্রমনে আমার মেজভাই(সাবেক পিপি এড. বিশ্বনাথ পাল) ৭/৮টি গুলীতে বিদ্ধ হয়।

আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধতাকে পরে ধুবড়ী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়। খবর পেয়ে তোরা গিয়ে পাহাড়ের উপর স্থাপিত রাজকমল হোটেলে একদিন অবস্থান করে ফিরে আসি শিববাড়ী শরনার্থী শিবিরের। তোরা শহরে ময়মনসিংহ অঞ্চলের বেশ ক’জন এম এনএ ও এমপি অবস্থান করছিলেন।

সেখানে আমার সাথে দেখা হয় ভাষা সৈনিক বীর মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক রফিক উদ্দি ভুঞা, এমএনএ শামসুল হক, এড.ইমান আলী এমএনএ, মুক্তাগাছার খন্দকার আ: মালেক শহীদুল্লাহ এমপি’র সাথে। সবাই আমার মেজ ভাইয়ের সাথে খুবই পরিচিত থাকায় এমপি শামসুল হক জানান আমার ভাই গুলীবিদ্ধ হয়ে ধুবড়ী হাসপাতালে থাকায় আমার আর দেখা করার সুযোগ নেই। এমপি শামসুল হক আমাকে ভাইয়ের সুচিকিৎসার আশ্বাস দিয়ে শিববাড়ী ক্যাম্পে ক’টি টাকা দিয়ে ফেরৎ পাঠালেন।

আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধএরপর আমরা মামার সাথে প্রথমে চলে যাই আসামের ডিব্রুগড়ে,তারপর চলে যাই চীন সীমান্তের অরুনাচল প্রদেশে। আমার ধারনা চীনের সীমান্তবর্তী নেফা শহরে আমিই একমাত্র শরনার্থী বিধায় সেখানে যাবার পর সেখানের জেলা প্রশাসক ও সীমান্ত সেনাবাহিনীর মেজর বান্টা সিং জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে আমাকে দেখার জন্য ডাকেন এবং বাংলাদেশের ঘটনাবলী শুনেন।

আমাকে আর্থিকভাবে সহায়তা দেন। তাছাড়া মেজর বান্টা সিং সেনাবাহিনীর ক্যান্টিন থেকে আমাকে ট্যাক্স বিহীন খাবার কেনার ব্যবস্থা করে দেন। নভেম্বরে প্রথমে কোলকাতায় চলে আসি এবং সল্টলেক (বর্তমানে) যা বিধাননগর ক্যাম্পে উঠি। এখানেও রেশনের ব্যবস্থা ভাল থাকায় আমি রেশন তুলে এবং শরনার্থীদের বিক্রি করে দেয়া রেশন কিনে উল্টাডাঙ্গা ষ্টেশনের ব্রীজের নিচে বসে বিক্রি করে পরিবারের লোকজন নিয়ে বেলঘড়িযায় বাসা ভাড়া করে বসবাস শুরু করি। এ সময় যুদ্ধের তীব্র আকার ধারন করে। এ সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী সল্টলেক ক্যাম্প পরিদর্শনে আসেন। যুদ্ধের দামামা বেঁজে উঠে।

আমি সল্টলেক শরনার্থী ক্যাম্প থেকে রেশন নিয়ে ফিরে আসার সময় ইন্দিরা গান্ধীকে প্রথম ও শেষ দেখার সুযোগ পাই। এরপর কোলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে গিয়ে দিল্লী যাবার পথে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষনা দেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে, উল্টাডাঙ্গা ষ্টেশনের ব্রীজের নিচে বসে রেশনের প্রাপ্ত সামগ্রী বিক্রি করে বেলঘড়িয়ার পৌঁছে বাবার মুখে রাতেই যুদ্ধের ঘোষনা শুনতে পাই। এরপর দেশ স্বাধীন হবার ঘটনাতো সবাই জানেন।

তারিখ:৬/১২/১৫ইং

 

লেখক: বার্তা সম্পাদক, দৈনিক আজকের বাংলাদেশ, ময়মনসিংহ, ইমেইল: azkerbangladesh@gmail.com

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here