গোলাম মোস্তাফিজার রহমান মিলন, হিলি প্রতিনিধি :: ”হারা গরিব মানুষ, হামার ছাউ কেউ তাকায় না। মোক এন্যা কেউ ঠেলাগাড়ি (হুইল চেয়ার) দেন বাহে। মুই এ্যান্নাও চলবার পারছু না। খুব কষ্ট হচে চলবার।” চলতে চলতে এমনি কথা বলেন দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার নওপাড়া গ্রামের প্রতিবন্ধি আহাদ আলী (৬৫)।

তার চাহিদা সামান্য একটা হুইল চেয়ারের। একটি হুইল চেয়ারের স্বপ্ন দেখেন আহাদ আলী। খুব বেশি বা খুব বড় স্বপ্ন নয়। একটি হুইল চেয়ার পেলে তার জীবনটা অনেক সহজ হয়ে যায়। সহজেই এক যায়গা থেকে অন্য যায়গায় যেতে পারবেন। চলাচলের কষ্ট অনেক কমে যাবে।

জীবনে সুস্থ স্বাভাবিক ভাবে কারনা বাঁচতে ইচ্ছা হয় ? একেক জনের কাছে ভালো ভাবে বাঁচতে চাওয়া একেক রকম হয়ে থাকে। ভালোভাবে বাঁচতে কেউ চায় কোটি কোটি টাকা, বাড়ী গাড়ি আবার কেউ দুবেলা ভলো ভাবে খেয়ে বাঁচতে চায়।

আহাদ আলী শারীরিক প্রতিবন্ধী। বয়সের ভারে সোজা হয়ে দাঁড়াতে বা হাঁটতে পারেন না। দুহাতে ভরকরে ছেঁচড়ে চলেন। বয়সের ভার আর রোগে নুয়ে পড়া শরীর। কানে কম শোনেন। চোখেও কম দেখেন। তবুও জীবন ও জিবিকার তাগিদে ছুটছে বিভিন্ন স্থানে। এক ছেলে, তিন মেয়ে আর স্ত্রীকে নিয়ে তার স্বপ্নের সোনার সংসার। স্ত্রী মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে। ছেলেটা ছোট। একজনের মুরগির খামারে কাজ করে। টানাটানির অভাবের সংসারে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া কেরাতে পারেননি তিনি।

অসুস্থ শরীর নিয়ে সকাল থেকে শুরু হয় আহাদ আলীর জীবিকার জন্য জীবন যুদ্ধ। দুহাতে ভর করে ছেচড়ে ছেচড়ে পথ চলেন তিনি। হিলি বন্দরের অলিগলিতে তার হাতের ছাপ পড়ে রয়।

দিনশেষে অন্যের দেওয়া সামান্য সহায়তা সম্বল করে বাড়ি ফেরেন তিনি। অসহায় এই মানুষটি তাতেই সন্তুষ্ট। মেনে নিয়েছেন জীবনের কঠিন বাস্তবতা। জীবনের অনেক চাওয়া পুরণ হয়নি তার। আরও অনেক আশা হয়তো পুরণ হবে না। কেবল একটি আশা বুকে লালন করে ফেরেন এই অসহায় মানুষটি। যেটি পুরণ হওয়ার স্বপ্ন লালন করেন বুকে। হিলি বন্দরের রাস্তায় তাকে দুহাতে ভর করে পথ চলতে দেখা যায়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here