Joint venturesকামরুল হাসান (মিতুল) ::

শিক্ষা প্রক্রিয়ায় কোন ব্যক্তির অন্তর্নিহিত গুনাবলির পূর্ণ বিকাশের জন্য উৎসাহ দেওয়া হয় এবং সমাজের একজন উৎপাদনশীল সদস্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভের জন্য যে সকল দক্ষতা প্রয়োজন সেগুলো অর্জনে সহায়তা করা হয়।

খবরের কাগজে পড়েছি, শিক্ষিত মানুষের গ্রামের কথা।গ্রামটি দুর্গম, কিন্তু সব মানুষ অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন, বিবাদ-বিসংবাদ না থাকায় গ্রামটি অপরাধমুক্ত, সেকারণে নেই মামলা-মোকাদ্দমার ঝামেলাও। এই গ্রামে স্বাধীনতার পর কখনও পুলিশ এসেছে কিনা তা মনে করতে পারেনি সেখানকার প্রবীণ বাসিন্দারাও।

লেখাপড়া ছিল অনেকটা বাধ্যতামূলক, এ কারনে অভাব-অনটন এবং নানা প্রতিকূলতার সত্ত্বেও গ্রামের সন্তানদের অভিভাবকরা স্কুলে পাঠাতেন আর না হলে বিভিন্ন ধরনের চাপ অথবা উপহাসের পাত্র হতেন তারা। এতে করে লেখাপড়ার প্রতি গ্রামের মানুষের আগ্রহ ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পায়।

শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই গ্রামটি এগিয়ে তা নয়। শান্তিপূর্ণ সহবস্থানের ক্ষেত্রেও এ গ্রামটি আদর্শ। গ্রামটির নাম ‘দেওয়ান তারাটিয়া’।

এখানকার গ্রামবাসীর উদ্যোগেই শতভাগ প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত হয়েছে। দুর্গম এই গ্রামে এলাকার বিদ্যানুরাগীরা যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা অনুকরণীয় এবং অন্য গ্রামের জন্য তা অনুপ্রেরণার বলেছেন শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

সাত বিলিয়ন মানুষ এখন বাস করছে পৃথিবীতে। মনে হয় বাংলাদেশে ‘লুজিয়ানার’ মত একটা জায়গায় এর অর্ধেকটা ঠেঁসে দেওয়া হয়েছে। আমাদের রয়েছে অনেক প্রতিকূলতা, তা সত্ত্বেও আমরা থেমে নেই।

সঙ্কটের পর সঙ্কট মোকাবেলা করে নিজেকে সমৃদ্ধশালী প্রমাণ করেছে বাংলাদেশ। আছে আমাদের নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মত চরম সম্মান।চূড়ান্ত মুহূর্ত আসার আগ পর্যন্ত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে অবিচল আমাদের তরুণরা।

আমরা জানি এবং বিশ্বাস করি আমাদের দেশ সেদিকেই যাবে, যেদিকে তরুণরা তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবো। ছড়িয়ে থাকা অগণিত মেধাবী মুখ প্রতিদিন আমাদের মনে করিয়ে দেয় দেশটা আমাদের একার না। তরুণরা যার যার জায়গা থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছে দেশের জন্য কিছু একটা করার।

যারা দেশের জন্য কিছু একটা করতে চান এবং একটি প্লাটফর্ম খুঁজছেন তাদের পাশে আমরা থাকতে চাই।নিজেদের দিয়ে যতটুকু সম্ভব ততটা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পথটা মিশ্রণ করতে চাই।এ পর্যন্ত আমরা বেশ কিছু উদ্যোগ স্বল্প আঙ্গিকে বাস্তবায়ন করেছি।

তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য, ইয়ুথ সম্মেলন, ঈদ পুনর্মিলনী, শিক্ষা সফর, ফিলিস্তিনি সমর্থনে মানববন্ধন, ফ্রি ব্লাড গ্রুপিং, ইফতার অনুষ্ঠান, বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি, নদী ভাঙ্গনরোধে ব্যাপক প্রচারণা ও জনসমর্থন সৃষ্টি করা, জেএসসি-জেডিসি- এসএসসি- দাখিল- এইচএসসি ও আলিম এ জিপিএ ৫ প্রাপ্ত এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট এবং প্যাড প্রদান করা হয়।

বৃহৎ পরিসরে শুরু করতে না পারার ব্যর্থতা কিছু অংশে কমে গেছে ক্ষুদ্র পরিসরে শুরু করতে পারার আনন্দে। যার জন্য প্রাথমিকভাবে আমাদের স্থানীয় উপজেলাকেন্দ্রিক কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে।

সদ্য সমাপ্ত ২০১৪-১৫ সেশনে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় গৌরবময় কৃতিত্ব অর্জন করেছে রামগতির ছাত্ররা। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী চান্স প্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছে রামগতি স্টুডেন্ট কমিউনিটি ঢাকা এর সদস্য মোঃ নজরুল ইসলাম পিতা – নুরুল ইসলাম গ্রাম রঘুনাথপুর , এস এস সি রামগতি বি বি কে পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় , এইচ এস সি ঢাকা বিজ্ঞান কলেজ , ভর্তি কোচিং রেটিনা।

ফলাফল প্রকাশের পর তাৎক্ষনিক চান্স প্রাপ্তদেরকে R.S.C.D পরিবারের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানানো হয়। এইসব শুধুমাত্র সম্ভব হয়েছে তাদের নিজেদের দৃঢ় বিশ্বাস,ধ্যানধারণা, ভাবনাচিন্তা, জীবনবোধের প্রতি গভীর আস্থা এবং আমাদের নামান্তর প্রচেষ্টার কারণে।

সাফল্য অর্জন আর জীবন আনন্দময় করতে আত্মবিশ্বাসকে দৃঢ় রেখে এগিয়ে যেতে হবে।তারাটিয়া গ্রামের সেই শিক্ষিত মানুষগুলো আমাদের শিখিয়েছে, সম্মিলিতভাবে পূর্ণশক্তিতে উদ্যোগী হয়ে কিভাবে সফল হওয়া যায়। নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে প্রতিনিয়ত নতুন কিছু সৃষ্টির ইতিহাস তো আমাদেরই।

জীববিজ্ঞানী চার্লস রবার্ট ডারওয়িন বলেছিলেন, ”FITTEST ARE SURVIVE”. অর্থাৎ যারা পৃথিবীতে টিকে থাকার যোগ্য, শুধু তারাই টিকে থাকবে। টিকে থাকার প্রচেষ্টা চলছে আমাদের মাঝেও। তার উক্তিটি বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে কোন ভিন্ন অর্থ বহন করে না হয়তো।

একা হয়তো অনেক কিছুই করতে পারব না কিন্তু সবাই এক হলে অনেক বড় স্বপ্ন সত্যি করা সম্ভব। আমরা শুধু সমস্যা নিয়েই কথা বলছি না, বরং সবাইকে সাথে নিয়ে সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। যেখানে কেউ দেশের জন্য ভালো কিছু করার চেষ্টা করবে,রামগতি স্টুডেন্ট কমিউনিটি ঢাকা(RSCD) তাদের পাশে দাঁড়াবে। যেখানে আপনারা থাকবেন আমাদের সাথে।

RSCD এখন তৃতীয় বছরে পদার্পণ করছে, we dream, we plan, we change এই স্লোগানকে সামনে রেখে একঝাঁক মেদাবী তরুণ প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই কাজ করে যাচ্ছে নিরলসভাবে।

কেউ ভুলত্রুটির উর্ধে নয়। আমরা মনে করি, সবার মধ্যেই কোন না কোন ত্রুটি বিচ্যুতি থাকে। তবে সেই ত্রুটি বিচ্যুতিকে অতিক্রম করে এগিয়ে যাবে RSCD, আমাদের উদ্দেশ্য সমাজের সার্বিক উন্নয়নের জন্য নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।

আপনাদের অংশগ্রহণই আমাদের এই সংগঠনের মূল লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করবে। হয়তো একদিন এইভাবেই সম্মিলিত ছোট ছোট উদ্যোগ গুলোর কারণে সত্যিকারের অর্থে এগিয়ে যাবে আমাদের সমাজ,আমাদের দেশ।

আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে MITOCHONDRIA(কোষের শক্তিঘর)-র মতো অবিচল কাজ করে যেতে হবে দেশ তথা জাতির মুক্তির জন্যে।

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, রামগতি স্টুডেন্ট কমিউনিটি ঢাকা,

মোবাইল: 01677849728, ইমেইল: Mktkamrul@gmail.com

 

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here