আবু রায়হান মিকাঈল :: ‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’ স্বামী বিবেকানন্দের এই বাণী নানা সময়ে নানান মানুষের মধ্যে প্রতিফলিত হতে দেখেছি আমরা। তবে বিশাল এ পৃথিবীতে এই মানুষগুলোর সংখ্যা একেবারেই যৎসামান্য। তারপরও এই মানুষগুলি আছে বলেই আহাজারি পৃথিবীটা এখনও বাঁচার স্বপ্ন দেখে। হৃদয়হীনা দরিয়ায় ভালোবাসার মেলবন্ধন তৈরি করা এক মহীয়সী নারীর গল্প বলব আজ।

জি.এম স্পর্শ। সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তিনি। মাত্র ১ বছর হলো জনপ্রতিনিধি হিসেবে তার দায়িত্ব গ্রহণের। এই ১ বছরে তিনি দায়িত্বের গন্ডি পেরিয়ে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের হৃদয় স্পর্শ করেছেন।
‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’ এই দায়িত্ববোধ থেকেই করোনার সংকটময় মুহূর্তে তিনি ক্লান্তিহীনভাবে সকাল-সন্ধ্যা ছুঁটে বেড়াচ্ছেন ক্ষুধার্ত মানুষের খোঁজে। দাঁড়াচ্ছেন পাশে, দিচ্ছে নানা সহায়তা, জোগাচ্ছেন সাহস আর প্রেরণা। দেশে মহামারি করোনা সনাক্ত হওয়ার পরপরই জনসচেতনতায় তৎপর হন এই জনপ্রতিনিধি।

শুধুই কি জনপ্রতিনিধি হিসেবেই তার এই দায়িত্ববোধ? না, তার সুবিশাল কর্মজ্ঞ সে কথা বলে না। তিনি একজন নারী হয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন ইচ্ছাশক্তি মানুষকে কোথায় পৌঁছে দিতে পারে। করোনার মধ্যে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিম্নবিত্ত মানুষের সঙ্গে তৈরি করেছেন ভালোবাসার এক মেলবন্ধন।

সম্প্রতিকালে ত্রাণ বিতরণে অনেক জনপ্রতিনিধি যেখানে অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন সেখানে তিনি অন্যান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দেখিয়ে দিয়েছেন- তিনি শাসন নয়, জনগণের সেবক হতে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। রোদ বৃষ্টি উপেক্ষা করে উপজেলার এ প্রাপ্ত থেকে ওই প্রান্ত অসহায় দুস্থ মানুষের দ্বারে দ্বারে তার ছুঁটেচলা দিনে দিনে যেন এক স্বপ্নময় সমাজ বুনন করে চলেছে।

জি.এম স্পর্শ একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে সরকার থেকে যে সম্মানি ভাতা পান সেটার ৩ মাসের পুরো অর্থ এখন ব্যয় করছেন দেবহাটাবাসীর কল্যাণে। সরকারি সহায়তার অপেক্ষা না করে নিজ উদ্যোগে তিনি সাহায্য কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের নিম্নবিত্ত মানুষের ঘরে ঘরে নিজ হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন খাদ্যসহায়তা।

করোনার এই সংকটকালীন মুহূর্তে খাদ্যসহায়তা ছাড়াও তিনি অসুস্থ মানুষগুলোর জন্য বাড়িয়েছেন সাহায্যের হাত। ইতোমধ্যে অনেককে নগদ অর্থসহায়তাও প্রদান করেছেন। এই দুঃসময়ে সর্বদা তাদের পাশে থাকার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেছেন তিনি।
করোনায় মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে ইজিবাইকে করে তিনি নিজেই মাইকিং করে বেড়াচ্ছেন উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত জুড়ে। কখনো কখনো হ্যান্ড মাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন বাজার ঘাট ও রাস্তার মোড়ে মোড়ে, চালাচ্ছেন সচেতনতামূলক প্রচারণা। একজন নারী হয়েও একদিনও থেমে থাকেনি তার এই কর্মযজ্ঞের ধারাবাহিকতা।

হিন্দু ধর্মালম্বী এই জনপ্রতিনিধি করোনার সংকটময় মুহূর্তে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও এতিমখানার নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছেন এবং সহায়তাও করছেন। নিজে রান্না করে নিয়ে গেছেন এতিমখানায় থাকা বাচ্চাদের জন্য। এছাড়াও দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের ঘরেও পৌঁছে দিয়েছেন এসব খাদ্যসহায়তা। রমজানের প্রথম দিন থেকেই নিজের বাড়িতে দাওয়াত করে প্রতিদিন বেশ কিছু রোজাদারদের ইফতার করাচ্ছেন তিনি। পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় বিতরণ করছেন ইফতার সামগ্রী। এভাবে অসাম্প্রদায়িক একটি সেতুবন্ধন তৈরি করে চলেছেন এই মহীয়সী নারী।

বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রীর পাশাপাশি নানা সময়ে গাড়ি ভর্তি টাটকা সবজি ও তরকারি নিয়ে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে ঘুরে পৌঁছে দিয়েছেন মানুষের ঘরে ঘরে। ঘামঝরা দুপুরে এভাবে অবিরাম ছুটে চলেছেন দুস্থ মানুষগুলির মুখে একফালি চাঁদের হাসি ফুটাতে। একজন খোদ জনপ্রতিনিধির এরূপ ভালোবাসা দেবহাটাবাসীকে যেন নতুন রূপে প্রাণসঞ্চার করেছে।

জি.এম স্পর্শ’ জানান, স্বামী নাট্যনির্মাতা ও মানবতার কল্যাণ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জি.এম সৈকত তার পথচলার বড় অনুপ্রেরণা। শুধু জনপ্রতিনিধি হিসেবে নয়, একজন মানবিক মানুষ হিসেবে তিনি মানুষের স্বপ্ন সারথি হয়ে বেঁচে থাকতে চান।

হিন্দু-মুসলিম সহ সব ধর্মের মানুষের কাছে তিনি একজন মহীয়সী নারী। শুধু জনপ্রতিনিধি নয়, মানবসেবায় যেন তিনি আজ দেবহাটাবাসীর কাছে আকাশরাজির নক্ষত্র। তার ক্লান্তিহীন কর্মজ্ঞ মানুষের মাঝে আস্থা, ভরসা আর ভালোবাসার একটি জায়গা তৈরি করে নিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here