উপকূলে গো-খাদ্যের সংকট: ১শত মহিষের মৃত্যুশিপুফরাজী, চরফ্যাশন প্রতিনিধি :: ভোলা জেলার চরফ্যাশনের উপকূলীয় এলাকায় সুপেয় পানির ও গো খাদ্যের সংকটে গত এক মাসে ১শত মহিষ মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে । পানিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ও পর্যাপ্ত চারণভূমি না থাকায় গো খাদ্যের সংকটে মহিষ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মালিক ও বাতানরা। বিশেষ করে সাগরপাড়ের চর এলাকায় গত কয়েক বছর ধরে আশংকাজনক হারে লবণের পরিমাণ বেড়ে চলছে।

চরফ্যাশন উপজেলার উপকূলীয় এলাকার কৃষি অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ খাত মহিষ পালন। এ খাত থেকে বাথান মালিকরা বছরে আয় করেন কয়েক কোটি টাকা । চরফ্যাশন বিভিন্ন চর ও বনাঞ্চলে খোলা আকাশের নীচে প্রাকৃতিক ঘাস খেয়েই মহিষ বেঁচে থাকে।

বর্তমানে খাদ্যের সংকটে দুধ উৎপাদন কমে যাওয়ার আর্থিক ভাবে সংকটে পরেছে মহিষ মালিক ও বাতানরা । খাদ্য সংকটে মহিষ ও মহিষের বাচ্চা মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে অহরহ। গত এক মাসে চরফ্যাশন উপজেলার বিভিন্ন চরে অন্তত ১শত টি মহিষ মারা গেছে বলে প্রাণি সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মালিকরা মহিষ পালনে অনাগ্রহী হয়ে পড়েছেন।

প্রাণি সম্পদ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী ভোলা জেলার সাত উপজেলায় ৮৩টি চরে ৯১ হাজার মহিষ আছে। তার মধ্যে চরফ্যাশন উপজেলার ১৬টি দুর্গম চরাঞ্চলে রয়েছে ৩৮ হাজার ৯শত ৯০ টি মহিষ। চরগুলি হল- চরবাংলা, হিয়ালিয়ারচর, পাতারচর, পূর্বঢালচর, চররিউলিন, মজিবনগর, চরইসলাম, চরহাসিনা, ঢালচর, তারুয়ারচর, চরপাতিলা, চরকুকরি, সিকদারচর, বয়ারচর, মেম্বারেরচর, চর কলমি ।

ঢালচর এলাকার মহিষের বাতান ইসমাইল জানান, এসব চরগুলোতে মহিষ চরানো হলেও মহিষের খাদ্য সরবরাহ করা যাচেছ না। খাবার না পেয়ে মহিষগুলো রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে, এতে দুধ কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি মহিষের বাচ্চারা সুপেয় পানি ও দুধ না পেয়ে প্রতিদিনেই ২/১টি মারা যাচ্ছে বাচ্চা ।

মহিষ মালিক জাহাগির ফরাজী, হেলালউদ্দিন বলেন, চরে ঘাষ নেই, মহিষ পালনের জন্য নেই সুপেয় পানির ব্যবস্তা,ঝড় বাদলে মহিষ থাকার জন্য নেই মাটির কিল্লা। সামান্য জোয়ারে চরে পানি উঠে যায়, এতে নানা অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে মহিষ ও মহিষের বাচ্চা।

চরফ্যাশন উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা বলেন, চরফ্যাশনের ১৬টি চরে গত এক মাসে ১শত টি মহিষ মারা গেছে। তবে এসব মহিষ কোন অসুখে মারা যায়নি, মারা গিয়েছে খ্যাদ্য সংকট ও সুপেয় পানি না থাকার কারণে। এদিকে বাণিজ্যিকভাবে ঘাষের চাষ না করা এবং জমির স্বল্পতা থাকায় চরগুলোতে প্রকৃতিকভাবে নতুন করে কোনো গো-খাদ্য তৈরি হচ্ছে না।

জেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা আলমগীর হোসেন বলেন, জেলায় যেটুকু চারণভূমি রয়েছে সেখানে উন্নত জাতের নেপিয়ার, পারা, জার্মান ঘাষ চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ প্রকল্পের আওতায় আছে; চরে ঘাষ চাষ, সুপেয় পানি এবং মহিষের বাসস্থান নির্মাণ। এটি বাস্তবায়ন হলে মহিষের মৃত্যু অনেকটা কমে যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here