জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি :: পায়ে প্লাস্টিকের স্যান্ডেল, পরনে লুঙ্গি, গায়ে পাঞ্জাবি আর মাথায় টুপি, কাঁধে গামছা। মসজিদে ইবাদতের জন্য হউক আর উপজেলা পরিষদের সভায় উপস্থিতির জন্য হউক, উনার পোষাকের হেরফের হয় না। বলছি লক্ষ্মীপুরের এক ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহর কথা।

সাদামাটা আলেম ও জনদরদী চেয়ারম্যান হিসেবে এলাকায় পরিচিত তিনি। বয়সে প্রবীণ এ আলেম মানুষের কাছে ‘মিরপুরী হুজুর’ হিসেবেই পরিচিত।

তিনি শুধু সহজ সরল আলেমই নন লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর উপজেলার ৮নং চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যানও বটে।

চাল-চলন, পোশাক-আশাকে তিনি একজন সাদামাটা মানুষ হলেও চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে খুবই সচেতন। এ যেন সততার এক জীবন্ত উদাহরণ।

করোনার প্রাদুর্ভাবে সারাদেশে যখন লকডাউন পরিস্থিতি বিরাজ করছে তখন তিনি ঘরে আটকা পড়া গরিব-অসহায় মানুষের দ্বারে দ্বারে নিজ দায়িত্বে খাদ্য সহযোগিতা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। দেশব্যাপী লকডাউন পরিস্থিতি চলাকালীন সময়ে তিনি ঘোষণা দেন-‘৮নং চরকাদিরা ইউনিয়নে অভাবের কারণে কারও যদি না খেয়ে থাকতে হয়, তবে আমি সাইফুল্লাহ সর্ব প্রথম না খেয়ে থাকব। কারো ঘরে ভাতের চাল না থাকলে, কারো পকেটে সদাই করার টাকা না থাকলে, সরাসরি আমার সাথে সাক্ষাৎ করবেন। আমার পকেটে টাকা থাকতে, আমার ঘরে একমুঠো চাল থাকতে, চরকাদিরায় কেউ না খেয়ে থাকবে না। ইনশাআল্লাহ।’

মিরপুরী হুজুর নামে পরিচিত মাওলানা সাইফুল্লাহ ঢাকাস্থ মাদানীনগর মাদরাসার সাবেক মুহাদ্দিস। মিরপুরের মুসলিম বাজার মাদরাসার মুহতামিমও ছিলেন তিনি। এ প্রবীণ আলেম হাফেজ্জী হুজুরের মেয়ের জামাই।

ব্যক্তি জীবনে ঢাকায় সেটেল্ড হলেও করোনাভাইরাসের কারণে দেশের মানুষের পাশে থাকতে তিনি কমলনগরের ৮নং চরকাদিরার নিজ ইউনিয়নে চলে আসেন। সিএনজি চালিত আটোরিকসা বোঝাই করে খাদ্য সামগ্রী নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে নিজ হাতে ঘরে ঘরে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করছেন। হেঁটে হেঁটে সবার খোঁজখবর নিচ্ছেন।

চরকাদিরা ইউনিয়নের মানুষের কাছে শুধু চেয়ারম্যান হিসেবেই নয় প্রবীণ আলেম হিসেবেও তার অনেক খ্যাতি রয়েছে। তবে তার সম্পর্কে এলাকার মানুষের একটা বাড়তি বিশেষণ রয়েছে, যেটি মানুষের কাছে বড় সমস্যাও মনে হয়। তার ইউনিয়নের মানুষের ভাষায়- হুজুরের একটাই সমস্যা, তিনি মিথ্যা বলেন না। তাদের কথা হলো, ‘এ যুগে কি (দু-একটা) মিথ্যা না বললে হয়!’

সবচেয়ে বড় বিষয় এ লাকাবাসী এটা বিশ্বাস পোষণ করেন যে, এ ইউনিয়নে কোন বরাদ্দ আসলে তিনি তা মেরে খাবেন না। কম আসলে তাদেরকে কম দিবেন, এটা তারা অন্তর থেকে বিশ্বাস করেন।

সাদামাটা পোশাকে তিনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘরে ঘরে খাদ্য-সামগ্রী পৌঁছে দেয়াকে তিনি এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব মনে করছেন। তার পুরো মনোযোগ করোনায় ঘরে আটকে পড়া গরিব অসহায় মানুষের দিকে।

প্রবীণ এ আলেম চেয়ারম্যান বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় অন্যান্য চেয়ারম্যানসহ সমাজের সব বিত্তবানদের জন্য হতে পারেন সুযোগ্য আইডল।

সমাজসেবায় তিনি সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি, আলেম-ওলামা ও জনসাধারণের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তিনি পুরো সমাজে এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, ‘চেয়ারম্যান হলেই আমল-ইবাদত ও সত্যবাদিতা থেকে দূরে সরে যেতে হয় না। বরং সত্যবাদিতার সঙ্গেই সমাজের দায়িত্ব পালন করতে হয়। সমাজের উন্নয়নে সত্যবাদী ও ন্যায়-নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদেরই জনপ্রতিনিধি হওয়া উচিত। যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সাদামাটা আলেম মাওলানা খালেদ সাইফুল্লাহ।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here