শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদরা কে কোথায় ঈদ উদযাপন করবেন তা জানার কৌতূহল অনেকেরই। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা কে কোথায় কোরবানি দিচ্ছেন, তা জানতে উৎসুক নিজ নিজ দলের নেতা-কর্মীরাও।

বরাবরের মতো এবারও ঢাকায় ঈদ উদ্যাপন করবেন শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া। তবে কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী-এমপিদের বড় একটি অংশ নিজ নিজ এলাকায় ঈদের জামাতে শরিক হবেন। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতেই তাঁরা এলাকায় ঈদের কুশল বিনিময় করবেন বলে অনেকে জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগ:

আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতাই এবার ঈদের নামাজ পড়বেন নিজ নির্বাচনী এলাকায় গ্রামের বাড়িতে। ইতিমধ্যে অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতা ঢাকা ছেড়েছেন। কেউ কেউ আবার ঢাকায় ঈদের নামাজ আদায় করবেন বলে জানিয়েছেন।

সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ মন্ত্রী-এমপি এবং শীর্ষস্থানীয় নেতা ঢাকায় বসবাস করছেন। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে অনেকেরই সাংগঠনিক দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। সম্পর্কের এই ঘাটতি কমিয়ে ইমেজ ধরে রাখতে ঈদের সময়টায় নেতা-কর্মীদের মধ্যে থাকার পরিকল্পনা নিয়েছেন তারা।

প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনা ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৯টায় গণভবনে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

সকাল ১০টায় আমন্ত্রিত অতিথি ও সর্বস্তরের লোকজনের সঙ্গে এবং সকাল সোয়া ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত বিচারপতি ও কূটনীতিকদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।

দলের অন্য নেতাদের মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ঈদ করবেন ঢাকায়, আবদুর রাজ্জাক লন্ডনে, তোফায়েল আহমেদ ভোলায়, আবদুল জলিল নওগাঁয়, কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ ঢাকায়, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সিলেটে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন ঢাকায়, আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ঢাকায়, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ঢাকায়, অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন ঢাকায়, ওবায়দুল কাদের নোয়াখালীতে, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ ঈদ করবেন ঢাকায়।

সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন নেত্রকোনায়, মিসবাহউদ্দিন সিরাজ সিলেটে, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম মাদারীপুরে, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী নিজ নির্বাচনী এলাকা দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জে ঈদ করবেন।

ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ ঢাকায়, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াও থাকবেন ঢাকায়। ঢাকা সিটি করপোরেশন দুই ভাগে বিভক্ত হওয়ায় আসন্ন মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য গণসংযোগ করছেন মায়া। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাওছার গোপালগঞ্জে এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খোকন সৌদি আরবে ঈদ করবেন।

বিএনপি:

চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশানের ভাড়া বাসায় ঈদ করবেন। বরাবরের মতো তিনি বিশিষ্ট নাগরিক, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন রাজধানীর লেডিস ক্লাবে।

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে কুশল বিনিময়ের পর তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে যাবেন। ওই দিন জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস থাকায় অঙ্গ-সংগঠনের নেতারাও ঢাকায় থাকছেন বলে জানা গেছে।

দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রয়েছেন সুইডেনে। ঈদের আগের দিন কিংবা ঈদের দিন সকালে তার দেশে ফেরার কথা। ঢাকায় ঈদের দিন কাটিয়ে পরের দিন নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে তার।

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, তরিকুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক এম এ মান্নান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লাহ বুলু, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলী, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আ ন ম এহছানুল হক মিলন, স্বনির্ভরবিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নিজ নিজ এলাকায় ঈদ উদ্যাপন করবেন বলে জানা গেছে।

প্রতিবছরের মতো অধ্যাপক এম এ মান্নান এবারও দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নামে গাজীপুরে কোরবানি দেবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে বিএনপি নেতাদের মধ্যে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আমানউল্লাহ আমান ও ফজলুল হক মিলন।

মেয়ের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে আমেরিকায় গেছেন বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা মহানগরের সদস্যসচিব আবদুস সালাম।

অন্যদিকে কারাগারেই ঈদ কাটাতে হচ্ছে দলের নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আবদুস সালাম পিন্টু, নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবরকে।

তবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম শামসুল ইসলাম, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, বেগম সরোয়ারী রহমান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া ঢাকায় ঈদ উদ্যাপান করবেন বলে দলীয় সূত্র জানায়।

এ ছাড়া বিএনপির সহযোগী সংগঠন যুবদলের সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, ছাত্রদলের ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলীম, মহিলা দলের সভাপতি নূরে আরা সাফা, সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানাসহ অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা দলীয় নির্দেশনায় ঢাকায় ঈদ পালন করছেন বলে জানা গেছে।

জাতীয় পার্টি:

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ স্ত্রী রওশন এরশাদসহ সপরিবারে পবিত্র হজ পালনে সৌদি আরবে অবস্থান করছেন।

মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার স্ত্রী রত্না হাওলাদারসহ লন্ডনে ঈদ উদযাপন করবেন।

দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী জি এম কাদের, কাজী জাফর আহমদ, অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা রাজধানীতে ঈদ উদ্যাপন করবেন বলে জানা গেছে।

জামায়াতে ইসলামী:

কোরবানির ঈদে কারাগারের ভেতরেই কাটাবেন জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। দলের আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও আবদুল কাদের মোল্লা ঈদ করছেন কারাগারে।

দলের অন্য নেতারা গ্রেপ্তার আতঙ্কে থাকায় তারা কে কোথায় ঈদ করবেন তা জানা যায়নি।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/ঢাকা

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here