স্টাফ রিপোর্টার :: ঈদুল আজহার আগে ও পরের মোট ১২ দিনের যাত্রায় সড়ক, রেল ও নৌপথে ২৪৪টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৫৩ জন। সেই সাথে আহত হয়েছেন আরও ৯০৮ জন।

রবিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতি বছরের মতো এবারও প্রকাশ করেছে ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০১৯।

তাদের তথ্য অনুযায়ী, ঈদযাত্রা শুরুর দিন ৬ আগস্ট থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরা ১৭ আগস্ট পর্যন্ত ২০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২২৪ জন নিহত ও ৮৬৬ জন আহত হয়েছেন।

উল্লেখিত সময়ে রেলপথে ট্রেনে কাটা, ছাদ থেকে পড়ে, অন্য গাড়ির সংঘর্ষে ও ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনায় মোট ১৩ জন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছেন। সেই সাথে নৌপথে ২৪টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত, ৫৯ জন নিখোঁজ ও ২৭ জন আহত হয়েছেন।

দেশের বহুল প্রচারিত ও বিশ্বাসযোগ্য ৪১টি জাতীয় ও আঞ্চলিক দৈনিক এবং ১১টি অনলাইন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ বিশ্লেষণ করে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল।

প্রতিবেদন উপস্থাপনকালে সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী জানান, এবারের ঈদে বিগত বছরের তুলনায় সড়ক দুর্ঘটনা ৬.৪০ শতাংশ, নিহতের সংখ্যা ৬.২৫ শতাংশ ও আহত ১.৫০ শতাংশ কমেছে।

তিনি বলেন, এবার ২০৩টি সড়ক দুর্ঘটনার ৬৭টি ঘটেছে মোটরসাইকেলের সাথে অন্যান্য যানবাহনের সংঘর্ষে, যা মোট দুর্ঘটনার ৩৩ শতাংশ। অন্যদিকে পথচারীকে গাড়িচাপা দেয়ার ঘটনা ছিল দুর্ঘটনার ৫২.২১ শতাংশ। আগামী ঈদে এ দুটি ঘটনা এড়ানো সম্ভব হলে সড়ক দুর্ঘটনার প্রায় ৮৫.২১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সমিতির পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনার কারণগুলো হলো- বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও পণ্যবাহী গাড়িতে যাত্রী বহন, অদক্ষ চালক ও সরকারি গাড়ি চালানো, বিরামহীন ও বিশ্রামহীনভাবে চালানো, মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, নসিমন-করিমন ও মোটরসাইকেলের অবাধে চলাচল, সড়ক-মহাসড়কে ফুটপাত না থাকা, ঈদের পর ফিরতি যাত্রায় নজরদারি না থাকা বা শিথিলতা এবং মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা।

দুর্ঘটনা রোধে সংগঠনের পক্ষ থেকে দেয়া সুপারিশুগুলোর মাঝে আছে- চালকদের প্রশিক্ষণে সরকারি ও বেসরকারিভাবে ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ, ওভারলোড নিয়ন্ত্রণে মানসম্মত পর্যাপ্ত গণপরিবহনের ব্যবস্থা, মহাসড়কে গতি নিরাপদ করা, ধীরগতি ও দ্রুতগতির গাড়ির জন্য আলাদা লেন রাখা, মোটরসাইকেলে ঈদযাত্রা নিষিদ্ধ করা, ফিটনেসবিহীন যান বন্ধের আদেশ শতভাগ কার্যকর করা, সড়ক-মহাসড়কে নজরদারি ব্যবস্থা জোরদার রাখা, চালক-শ্রমিকদের যুগোপযোগী বেতন, বোনাস ও কর্মঘণ্টা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিরতি ও বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখা এবং যাত্রার আগে গাড়ির ত্রুটি পরীক্ষা করা।

রাস্তায় ফুটপাত-আন্ডারপাস-ওভারপাস নির্মাণ, জেব্রা ক্রসিং আঁকা, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও গবেষণা, ডিজিটাল ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রবর্তনসহ সড়ক নিরাপত্তায় ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করারও সুপারিশ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here