‘ই-ইহার্ট’ অ্যাপে এক ক্লিকেই হৃদযন্ত্রের চিকিৎসাস্টাফ রিপোর্টার :: হৃদরোগ মারাত্মক রোগ। হৃদযন্ত্রের একটু এদিক সেদিক হলেই মানুষ পরকালের ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের বেশিরভাগই বয়স্ক। তারা প্রায়ই ভুলে যান কখন কোন ঔষধ খাবেন, কখন কোন তারিখে কোন চিকিৎসকের কাছে যাবেন, কখন কোন রির্পোট কোন চিকিৎসকে দেখাবেন। যদি রোগীকে ঔষধ খাওয়া, চিকিৎসকের কাছে যাবার সময় এলার্ম দিয়ে জানিয়ে দেয় কেমন হয়? এখন থেকে হৃদরোগীরা ‘ই-হার্ট’ নামে এক অ্যাপসে এক ক্লিকেই এসব সুবিধা পাবেন।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের হৃদরোগীদের জন্য ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন (এনএইচএফ), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহায়তায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির আরবান ল্যাব এ অ্যাপ তৈরি করেছে।

আজ মঙ্গলবার (২৫ জুলাই) রাজধানীর মিরপুরে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অডিটোরিয়ামে ‘হৃদরোগ চিকিৎসা ব্যবস্থাকে মানুষের কাছে আরো উন্নত ও সহজতর করার’ লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির (বিইউ) আরবান ল্যাবের উদ্ভাবিত ‘ই-হার্ট অ্যাপ’ এর উদ্বোধন করা হয়।

প্রধান অতিথি হিসেবে অ্যাপ এর উদ্বোধন করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র জনাব আনিসুল হক।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আজমেদ পলক এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, প্রফেসর সৈয়দ হোসাইনী, বায়ো ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোনিয়া, বার্কলি, ইউএসএ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টি চেয়ারম্যান কাজী জামিল আজহার।

সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রেসিডেন্ট জাতীয় অধ্যাপক বিগ্রেডিয়ার (অব:) আব্দুল মালিক।

উল্লেখ্য; গবেষণার জন্য বাংলাদেশ ইউনিভর্সিটিতে দেশের প্রথম আরবান ল্যাব প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ল্যাব ইতোমধ্যে ডিএনসিসিকে ‘নগর’ নামে একটি তৈরি করে দিয়েছে। শহরের বায়ূতে কি পরিমাণ ধুলাবালি ও রোগ সংক্রমণ হচ্ছে, দূষণের মাত্রা কত, এর ফলে কি কি রোগ হয় তা নিয়ে গবেষণা করে বেশ সুনাম কুটিয়েছে এ ল্যাব। এছাড়া আরো কিছু গবেষণা সম্পন্ন ও বেশ কিছু গবেষণা নিয়ে কাজ করছে।

অনুষ্ঠানে ই-হার্ট অ্যাপ সম্পর্কে বলা হয়, এ অ্যাপ কেবল ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের রোগীরা ব্যবহার করতে পারবেন। এ অ্যাপে পেশেন্ট প্রোফাইল, রিস্ক স্কোর, অ্যাপয়েনমেন্ট, প্রেসক্রিপশন, রেস্ট রেজাল্টস, রিস্ক ট্রেন্ড, ফলোআপ, হার্ট রেইট অপশন রয়েছে।

হার্ট ফাউন্ডেশনের রোগীরাদের হাসপাতাল কর্তৃক হাসপাতাল আইডি বা নিজেরা অ্যাপ ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন করে লগইন করতে হবে। রোগীর প্রোফাইলে রোগীর নাম, বয়স, উচ্চতা, ওজন, রক্তের গ্রæপ, রোগের ধরণ ইত্যাদি থাকবে।

রিস্ক স্কোরে রোগীর ঝুঁকির হিসাব থাকবে। প্রধানত এ রোগীর কোলেস্টেরল, এইচডিএল কোলেস্টেরল, সিস্টোলিক রক্তচাপ, রোগীর বয়স, লিঙ্গ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপানের ক্ষেত্রের তথ্য ঝুঁকি স্কোর গণনা করতে ব্যবহৃত হবে। স্কোর অনুযায়ী রোগীর একটি গ্রাফ তৈরি হবে। রিস্ক স্কোরে মডিউলে ক্লিক করে রোগী তার ঝুঁকি স্কোর দেখতে পাবেন। অ্যাপয়েন্টমেন্ট মডিউলে কোন হৃদরোগী নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবেন।

এখানে হার্ট ফাউন্ডেশনের চিকিৎসকদের বিস্তারিত তথ্য সংরক্ষিত থাকবে। রোগী যে চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে চান তার অ্যাপয়েন্টমন্ট নিতে পারেন। টেস্ট রেজাল্ট মডিউলে চিকিৎসক রোগীকে যেসকল টেস্ট দেবেন তার রিপোর্ট দেখতে পাবেন। হার্ট ফাউন্ডেশনে রোগী টেস্ট করালে তা সার্ভার থেকে অটো অ্যাপে রোগীর আইডি অনুযায়ী জমা হয়ে যাবে। প্রেসক্রিপশন মডিউলে এ অ্যাপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে রোগীর রোগ অনুযায়ী চিকিৎসক ঔষধ খাবার পরামর্শ দেবেন। কোন ঔষধ কখন খেতে হবে তা থাকবে। রোগী ঔষধ সেবনের সময় অনুযায়ী গুগল ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে এলার্ম অপশনে গিয়ে এলার্ম দিয়ে রাখলে তা রোগীকে এলার্ম দিয়ে জানিয়ে দেবে। প্রতিটি ঔষধের সাথে এলার্ম সেট করার সুযোগ থাকবে।

তবে এনএইচএফ নিবন্ধিত ব্যবহারকারী কেবলমাত্র হাসপাতাল আইডি দ্বারা লগইন করলে হাসপাতাল থেকে নির্ধারিত ঔষধের তালিকা দেখতে পাবেন। ফলোআপ মডিউলে রোগী কখন কোন চিকিৎসকের সাথে সাক্ষাত করবেন তা উল্লেখ থাকবে। গুগল ক্যালেন্ডার থেকে তারিখ, সময় সেট করে দিলে এলার্ম দিয়ে রোগীকে তা জানিয়ে দেবে। অর্থাৎ এক ক্লিকেই হার্টের রোগীরা সব ধরণের চিকিৎসাসহ সেবা পাবেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র আনিসুল হক বলেন, হৃদযন্ত্রের রোগীরা অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে থাকে। তাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটু এদিক ওদিক হলে সমস্যা হয়ে যায়। রোগীরা এ ডিজিটাল অ্যাপ ব্যবহার করে নিয়মিত চিকিৎসা, ঔষধ সেবন করতে পারবেন। এতে রোগীর সময় সাশ্রয়ী হবে, হয়রানির হাত থেকে মুক্তি পাবেন, চিকিৎসকদের সাথে ভালো একটি সম্পর্ক তৈরি হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছেন তা বাস্তবায়নে সরকার অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ অনেক খানি বাস্তবায়ন করে ফেলেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণের ধারাবাহিকতায় এখন আমরা স্বাস্থ্যসেবা ডিজিটাল করায় নজর দিয়েছি। কারণ বাংলাদেশের জনগোষ্ঠির বিশাল একটি অংশ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত, বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত। সুস্থ জাতি গড়ে তুলতে হলে ভালো ও উন্নত মানের স্বাস্থ্যসেবা দিতে হবে। ভালো স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারলে আমরা একটি সুস্থ ও আর্দশ জাতি পাবো।

 

অনুষ্ঠানে বুয়েট, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, আইসিটি বিভাগ, ইউনিভার্সিটি অব কার্লিফোনিয়া ব্রাকলি এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here