ষ্টাফ রিপোর্টার :: ‘আমি তোমাদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। মানুষ কতটা অমানবিক হতে পারে, তা জানা ছিলোনা। যে সন্তানরা আজ নিরাপদ সড়কের দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছে সেই কোমলমতি শিশুদের নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে!

ভাবতেও ঘৃণা হয়। চারদিকে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে সুযোগসন্ধানীরা। আমি তোমাদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত, আমি চিন্তিত চিন্তিত…….।’

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য প্রদানকালে কথাগুলো বলতে বলতে অঝরে ডুকরে কেঁদে উঠলেন নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্র নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। কাঁদলেন কাঁদালেন উপস্থিত সবাইকে। তাঁর কান্নায় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সাংবাদিক ও নিসচার অন্যান্ন নেতৃবৃন্দও।

আজ সোমবার (৬ আগস্ট ২০১৮) বিকাল ৫টায় নিরাপদ সড়ক চাই কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নিসচার জরুরী সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপেক্ষিতে মন্ত্রিসভায় সড়ক পরিবহন আইন অনুমোদন এবং অন্দোলন এর দিকনির্দেশনা মুলক নানা বিষয়ে বক্তব্য পাঠ করেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’র প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি শির্ক্ষার্থীদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানাব, তারা নিরাপদ সড়কের দাবিটি মানুষের প্রাণের দাবিতে রূপান্তর করেছে। এক সপ্তাহ ধরে তারা লাগাতার আন্দোলন করছে। অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, সড়কে কত নৈরাজ্য রয়েছে, কত বিশৃঙ্খলা রয়েছে। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরও টনক নড়েছে।’

‘তবে এখন আমি শিক্ষার্থীদের এই যৌক্তিক আন্দোলন নিয়ে চিন্তিত। যা শুরু হয়েছে নোংরা রাজনীতি। যারা এ আন্দোলন নিয়ে ফায়দা লুটতে চান তা কতটা অমানবিক হতে পারে, তা আপনাদের অজানা নয়। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে রাজনীতি করতে পারে, সেটা ভাবতেও ঘৃণা হয়। চারদিকে নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে সুযোগসন্ধানীরাও। ইতিমধ্যে যা শুরু হয়েছে, যা করা হচ্ছে, সেটি যেই করুক না কেন তা অত্যান্ত জঘন্য এবং ঘৃণিত। যা আমরা মেনে নিতে পারছিনা। লক্ষ্য করছি ইতিমধ্যে অনেক শিক্ষার্থী ঘরে ফিরেছে। কিছু সংখ্যক এখনও রাজপথে আছে। আমি তোমাদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। তোমাদের জীবনের জন্য তোমরা ঘরে ফিরে যাও। যদি জীবন থাকে আর আমাদের দাবী আদায় না হয় তাহলে আমরা আবার রাস্তায় নামব।’

উল্লেখ্য, ২৫ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রীকে হারিয়ে ইলিয়াস কাঞ্চন স্ত্রী বিয়োগের শোককে শক্তিতে পরিণত করে গড়ে তোলেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নামে এক আন্দোলন। যে আন্দোলন আজ প্রতিটি ঘরে ঘরে প্রতিটি মানুষের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

শুরু থেকে শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে এসেছেন নিসচা চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চন। তাদের পাশেই আছেন। যে কারণে সন্তান সম্ভবা মেয়ে ইমাকেও দেখতে যাননি।

একমাত্র কন্যা হাজার হাজার মাইল দূরে লন্ডনে সন্তান সম্ভবা। এসময় মেয়ের পাশে বাবা হিসেবে তার থাকাটা ভীষন জরুরী কিন্তু এরপরও তিনি তার মেয়ের কাছে গেলেন না শুধু এই আন্দোলনের কারণে।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘লন্ডনে আমার একটা মেয়ে। আর এই দেশে বর্তমানে নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নে রাস্তায় আন্দোলনে হাজার হাজার সন্তান। এই কোমলমতি সন্তানদের রাস্তায় রেখে আমি কি করে মেয়ের কাছে যাই?’

‘যারা সড়কের নির্মমতায়, চালকের বেপরোয়া আচরণে হারিয়েছে কয়েকজন সহপাঠী। স্বজন হারানোর বেদনায় আজ তারা আমার তৃতীয় সন্তানকে হৃদয়ে ধারণ করে হয়ে উঠেছে প্রতিবাদী। পুরো বাংলাদেশ এখন নিরাপদ সড়কের দাবীতে চিৎকার করছে। নিয়মের বৈঠা হাতে অনিয়মকে বিদায় দিতে বদ্ধ পরিকর। থাকনা আমার এক মেয়ে ওখানে। আমি আছি সমগ্র বাংলাদেশের সন্তানদের নিয়ে।’

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here