ইলিশ ‘নিখোঁজ’!শিপুফরাজী, চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি:: মৌসুম শুরু হলেও চরফ্যাশনের মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে কাঙ্খিত ইলিশের দেখা মিলছে না। মাছের আকালের কারণে জেলে পরিবারে চলছে চরম দুর্দিন। এতে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাদের দাদনের বোঝা। আর টানা লোকসানের মুখে দিশেহারা মাছ ব্যবসায়ীরাও।

জুন মাস থেকে মৌসুম শুরু হলেও এখনো ইলিশ শূন্য ভোলার নদ-নদীগুলো। এসময় ইলিশ সহজলভ্য হওয়ার কথা থাকলেও জেলেদের ভাগ্যে মিলছে না কাঙ্খিত মাছ। তারপরও প্রতিদিন আশায় বুক বেঁধে নৌকা- ট্রলার নিয়ে নদীতে যাচ্ছেন হাজার হাজার জেলে।

ইলিশ না পাওয়ায় লোকসানে পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। আগের দাদন ফেরত দূরে থাক, নতুন করে আবারো জেলেদের দাদন দিতে হিমসিম খাচ্ছে তারা।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভরা মৌসুমওে মিলছেনা ইলিশ। এমন দাবি ইকোফিশ (এ্যান্স কোষ্টাল ফিসারিজ) প্রকল্পের ম্যানেজারের জহিরুল ইসলামের। তবে জুলাইর শেষেএবং আগস্টে প্রথম দিকে মাছ ধরা পড়বে বলে মনে করনে চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ।

ইলিশ ‘নিখোঁজ’!মেঘনা-তেঁতুলিয়ার কোল ঘেষা দেশের বৃহৎ দ্বীপ উপজেলা চরফ্যাশনের সাগরকুলের ২লাখ মৎস্যজীবীর আয়ের প্রধান উৎস মেঘনা-তেঁতুলিয়ার রূপালী ইলিশ। ইলিশকে ঘিরে চরফ্যাশনের দক্ষিন উপকুলে গড়ে উঠেছে শতাধিক মৎস্যকেন্দ্র। চরফ্যাশন সংলগ্ন মেঘনার মৎস্যকেন্দ্রের মধ্যে চর কচ্ছপিয়া, বেতুয়া, ঢালচর, চর নিজাম, সামরাজ, বেড়ী ভাঙ্গা, খেজুর গাইচ্ছা, আটকপাট, বাসির দোন, বকসীর ঘাট, ঢাল চর, কুকরী মুকরীসহ বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে প্রায় শতাধিক মৎস্যকেন্দ্র । এসব মৎস্যকেন্দ্র কে ঘিরে গড়ে উঠেছে অর্ধশত বরফকল। নদীতে মাছ ধরা না পড়ায় কলগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

গতকাল উপজেলার চরমাদ্রাজ ইউনিয়নের মেঘনা নদীর পাড়ে মাছ ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকটি জেলে নৌকা নদী থেকে শূন্য হাতে তীরে ভিড়ছে। দু-একটি নৌকায় কিছু রুপালি ইলিশ ধরা পড়লেও তা ছোট আকারের। ওই মাছ নিয়ে জেলেরা ঘাটে আসা মাত্র আড়তদাররা ছুটে আসছে। বহু মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার ঘাটে বাঁধা রয়েছে। জেলেরা ঘাটে অলস সময় কাটাচ্ছে। আবার কেউ কেউ নৌকায় বসে জাল বুনছে। ঘাটের আড়তদাররাও হতাশ হয়ে বসে রয়েছে। আর তাকিয়ে রয়েছে মেঘনা নদীর দিকে। যদি কোনো জেলে বড় বড় সাইজের ইলিশ নিয়ে আসে এ আশায়।

ঘাটে কথা হয় জাহাপুর গ্রামের বাসিন্দা জেলে মালেক মাঝির (৫০) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় নদীতে জাল ফেলে ছোট-বড় মিলে চারটি ইলিশ পেয়েছি।যা মাত্র এক হাজার টাকায় বিক্রয় হয়েছে।’

ইলিশ ‘নিখোঁজ’!সে জানান, এবার নদীতে মাছ কম। তাই জালে ইলিশ ধরা পড়ছে না। বেশির ভাগ জেলে মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে নৌকা নিয়ে মোহনায় গিয়ে খালি হাতে ফিরে আসছে। জোবায় (পূর্ণিমার জো) নদীতে সারা দিন জাল ফালাইয়াও একটা মাছ ধরা পড়ে নাই।’

উপজেলার অন্যতম বৃহৎ মৎস্যকেন্দ্র ঢালচর মাছ ব্যবসায়ী ইসরাফিল বলেন, ‘গত বছরে এই সময়ে প্রতিদিন এ মৎস্যকেন্দ্র থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকার ইলিশ বেচাকেনা হত। এখন দিনে এক লাখ টাকার মাছও বেচাকেনা হচ্ছে না। মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে জেলেরা বেড় জাল ও বিন্দি জাল দিয়ে অবাধে ইলিশের পোনা ধ্বংস করার কারণে বড় মাছ কমে যাচ্ছে।’ এ ছাড়া রেণু পোনা ও বাগদা পোনা ধ্বংসকারী জালের কারণে অন্য প্রজাতির মাছেরও সংকট দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে চরফ্যাশন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ হালদার বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নদনদীতে চর পড়ার কারণে আর আগের মতো মাছ ধরা পড়ছে না। এ ছাড়া উপযুক্ত সময় ও যথেষ্ট বৃষ্টি এখনো হয়নি। তবে আশা করা যায়, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পুরোদমে বর্ষা শুরু হবে। নদীতে জেলেদের জালেও রুপালি ইলিশ ধরা পড়বে।’

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here