মুজাহিদুল ইসলাম সোহেল, নোয়াখালী প্রতিনিধি:: সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) এক গবেষক করোনাভাইরাসের চিকিৎসা ইথানল বা অ্যালকোহল দিয়ে সম্ভব বলে দেশের বিভিন্ন প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেক্ট্রনিকস মিডিয়াকে অবহিত করেছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষকের এমন মতামতের ঘোর বিরোধিতা করেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ও ফার্মাকোজিনমিক্স এবং ক্যান্সার জিনোমিক্স গবেষক ড. মো. শফিকুল ইসলাম।

অ্যালকোহল বা ইথানল মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে বলে মনে করেন এই গবেষক। তিনি বলেন, অ্যালকোহল যেমন ইথানল, আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল, ক্লোরিন, পারক্সিএসিটিক এসিড বেইজড ডিসিনফেক্টেন্ট বা অ্যান্টিসেপটিক ভাইরাস বা অন্যান্য মাইক্রোঅর্গানিজম মারতে সক্ষম। আর সে জন্যই আমরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে ইথানল বা আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল ব্যবহার করি। সাধারণ ভাষায় অ্যালকোহল বলতে আমরা ইথানলকেই বুঝি। ৭০% ইথানল সব সময়ই অ্যান্টিসেপ্টিক হিসাবে ব্যবহার করা হয়। আর ১৩৬৩ সাল থেকেই অ্যালকোহল অ্যান্টিসেপ্টিক হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। অর্থাৎ অণুজীবের বিরুদ্ধে ব্যবহার হয়ে আসছে।

সুতরাং, অ্যালকোহল যে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া মারতে পারে তা নতুন কোনো আবিষ্কার নয়। আমাদের এখানে মনে রাখতে হবে যেকোনো পদার্থ করোনাভাইরাস মারতে পারলেই আমরা তা শরীরের ভেতর ব্যবহার করতে পারি না। শরীরের ত্বকে ইথানল ব্যবহার ও শরীরের ভেতর ইথানল ব্যবহার করা এককথা নয়। আমরা যদি ইথানল দিয়ে কুলকুচি করি তাহলে তা পেটের ভেতর চলে যেতে পারে এবং তা পরবর্তীতে রক্তে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। আর ইথানলের বাষ্প আমাদের জন্য ইথানলের চেয়েও বেশি ক্ষতিকর। কারণ ইথানলের বাষ্প সরাসরি ব্রেইন ও ফুসফুসে যায়। বারবার ব্যবহারের ফলে এটি ব্রেইনে গিয়ে তীব্র নেশার সৃষ্টি করে। অন্যদিকে ফুসফুসে গিয়ে ফুসফুসকে ধীরে ধীরে ড্যামেজ করে দেয়।

তিনি আরো বলেন, অ্যালকোহল ব্যবহারের ব্যাপারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কতা রয়েছে। কুলকুচি বা বাষ্পের মাধ্যমে যে অ্যালকোহল আমাদের শরীরে যাচ্ছে তা লিভার সিরোসিস ও ক্যান্সারসহ প্রায় ২০০ রোগের সৃষ্টি করতে পারে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রেইনের বিচার বুদ্ধি কমে হয়ে যাওয়া, বোধশক্তি বিকৃত হওয়া, মনোযোগ কেন্দ্রিভূত করার বা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, আত্ম নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা নষ্ট হওয়া, পিত্তাশয়, মাংসপেশী ও হাড়ের ক্ষতি সাধন করা। তাই আমি ত্বকে অ্যান্টিসেপ্টিক হিসাবে ইথানলের ব্যবহার সমর্থন করি কিন্তু কুলকুচি বা বাষ্প নেবার তীব্র বিরোধিতা করছি।

ড. শফিকুল বলেন, ইথানল খেলেই যদি করোনাভাইরাস থেকে বাঁচা যেত তাহলে পশ্চিমা দেশগুলোতে যারা নিয়মিত ইথানল বা অ্যালকোহল পান করে এত লোক মারা যেত না কোভিড-১৯ রোগের কারণে। সম্প্রতি ইরানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচার গুজবে অ্যালকোহল পান করে ৬০০ লোক মারা গেছে যা মিডল ইস্ট মনিটর ও ডেইলি মেইলে প্রকাশিত হয়েছে। তা ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতিবছর বিশ্বে ৩ মিলিয়ন লোক মারা যায় অনিরাপদ অ্যালকোহল পান করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাস সম্পর্কে সতর্ক করে বলেছে। অ্যালকোহল পান কোভিড-১৯ থেকে রক্ষা তো করতেই পারবে না বরং শরীরের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনবে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ছাড়া ইথানলের বাষ্প করোনাভাইরাস থেকে মুক্তি মিলবে এই মতামতের আমি তীব্র বিরোধিতা করছি। এই ক্ষেত্রে শরীরের বাইরে ভাইরাস মারার ফলাফলের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কিন্তু মানবদেহে ইথানলের ক্ষতিকর প্রভাব উপেক্ষা করা হয়েছে। আর ইথানল দিয়ে শরীরের বাইরে ভাইরাস মারা এটা কোনো নতুন আবিষ্কার নয়, যুগ যুগ ধরে আমরা এভাবেই ক্ষতিকর অণুজীব থেকে রক্ষা পেয়েছি।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here