নাজমুল হক শামীম, ফেনী
ফেনীর সোনাগাজীতে শত বছরের প্রচীন দক্ষিন পূর্ব চর চান্দিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পাঁচ মাস আগে ফেনী নদীর ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে গ্রামের একটি বেসরকারী ফোরকানীয়া মক্তবে স’ানান-রিত হয়ে গাদাগাদি করে কোন রকমে শ্রেণী কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তাও দুই শত ৪২ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক মাত্র দুই জন।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার ৬ নং চর চান্দিয়া ইউনিয়নের দক্ষিন পূর্ব চর চান্দিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি গ্রামের জিনাত আলী মসজিদ ও বহদ্দার হাট এলাকায় ১৯০০ সালে স’াপিত হয়। শত বছরের পুরানো এ বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ফেনী নদী। সোনাগাজীসহ ফেনী জেলা ও পাশ্ববর্তী মিরসরাই উপজেলাবাসীর কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে এ ফেনী নদীর থাক খোয়াজের লামছি গ্রাম এলাকায় একটি রেগুলেটর নির্মান করা হয়। এতে জোয়ারের সময় রেগুলেটরের গেট বন্ধ করে সাগরের লোনা পানি আটকিয়ে দেওয়া হয় এবং শুস্ক মৌসুমে রেগুলেটরের গেট বন্ধ করে উজানের পানি আটকিয়ে বিশাল এলাকায় বরো চাষাবাদ করা হয়। রেগুলেটর নির্মানের সময় নদীর গতিপথ কিছুটা পশ্চিমে বাঁকিয়ে দেওয়া হলে রেগুলেটরের ভাটি এলাকার মানুষের দূর্ভোগ শুরু হয়। প্রতি বছর নদীর পশ্চিম উত্তর তীরে তীব্র ভাঙ্গন শুরু হয়।
বাঁকা নদী সোজা করনের জন্য ও নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে এলাকাকে রক্ষার জন্য এলাকাবাসী সভা সমাবেশ, মানববন্ধন, প্রশাসনের কাছে স্বারকলিপি প্রদান করেও কোন ফল পায়নি। উল্টো প্রতি বছর নদী ভাঙ্গনে গ্রামের বহু বাড়ী ঘর, দুটি ঘুর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, মাদ্রাসা, মোক্তব, বিদ্যালয়সহ বিশাল অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
২০১১ বছর সেপ্টেম্বরের শুরুতে নদী ভাঙ্গনে দক্ষিন পূর্ব চর চান্দিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়টি সম্পূর্ন নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে বিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবরা তাদের লেখাপড়া নিয়ে বিপাকে পড়েন। তখন বিদ্যালয় কমিটির সভাপতি মাওলানা জিয়াউল হকের মালিকীয় জমির ওপর স’াপিত পাশের একটি মোক্তব ঘরে বিদ্যায়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণী কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান- নেওয়া হয়। গত সাড়ে পাঁচ মাস ওই ১৫-৩৫ ফুটের ছোট টিনের ছাউনী ও বাঁশের বেড়ার মোক্তব ঘরে বিদ্যালয় চলছে। ঘরের মধ্যে দুটি শ্রেণী কক্ষ ও একটি ছোট শিক্ষক কক্ষ তৈরী করা হয়েছে। এছাড়া মোক্তবের পাশেই আরও একটি বেড়া (ছাপরা) দিয়ে শ্রেনী কক্ষ করা হয়েছে। শ্রেণী কক্ষ গুলো এতই ছোট যে, প্রতিটি বসার টেবিলে ৭-৮ জন শিশুকে গাদাগাদি করে বসতে হয়।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোঃ ইব্রহিম ভূঁঞা জানান, বিদ্যালয়ে ৬ জন শিক্ষকের পদ থাকলেও বর্তমানে তিনিই একমাত্র নিয়মিত শিক্ষক। অন্য একজন শিক্ষক থাকলেও তিনি উপজেলার ওলামা বাজার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পেষনে নিয়োজিত। বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে নিমজ্জিত হওয়ার আগে সেখানে শিক্ষার্থী ছিল তিন শতাধিক। বর্তমান মোক্তবে স’ানান-রিত হওয়ার পর বেশ কিছু শিক্ষার্থী অন্যত্র চলে গেছে। তা ছাড়া প্রশাসনিক কোন কাজে একজন শিক্ষক উপজেলায় গেলে তখন শিক্ষক থাকে মাত্র একজন। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ব্যাপক ভাবে ব্যাহত হয়।
চর চান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সামছুদ্দিন আহম্মদ খোকন জানান, শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় যাতে কোন ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি না হয় সে জন্য বিদ্যালয়ের জন্য একটি নিজস্ব ভবন খুবই জরুরী। এলাকার সুলতান আহম্মদ নামে একজন বিদ্যুৎসাহী ব্যাক্তি ইতিমধ্যে বিদ্যালয় ভবন নির্মানের জন্য ৩৩ শতক জমি দান করেছেন।