পাহাড়ী জেলা বান্দরবানের একটি আদর্শ উপজেলা আলীকদম। এ উপজেলার পাহাড়ী বাঙ্গালী অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। একটা সময় ছিল রবিশস্যের ব্যাপক ফলন হতো আলীকদমে। কৃষদের উৎপাদিত রবিশস্যের ফসল চিনাবাদাম, আলো, মরিচ, সরিষা, ডাউলসহ ইত্যাদি ফসল এলাকার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় রপ্তারি করে অর্থের পাশাপাশি প্রচুর সুনাম অর্জন করতো।

কিন্তু দুই যুগের ব্যাবধানে আলীকদম উপজেলার আবাদি কৃষি জমির প্রায় ৭৫-৮০ শতাংশ দখল করে নিয়েছে পরিবেশ বিধ্বংসী আগ্রাসী তামাক চাষ। কৃষি জমির পাশাপাশি সরকারী সংরক্ষিত রিজার্ভ এলাকায়ও তামাক চাষের ভয়াল বিস্তার, চির সবুজ পাহাড় আজ মরুভূমি। তামাক চাষে অসম মাত্রায় ইউরিয়ার উদ্বেগজনক প্রয়োগ, বিষাক্ত ও নিষিদ্ধ বালাইনাশকের এলাপাথাড়ি ব্যবহারের ফলে আজ ভারসাম্যহীন পরিবেশ, প্রাণীবৈচিত্রহীন প্রায় মুরুময় পাহাড়, উর্বরা শক্তিহীন মাটি, নব্যতাহীন নদী-খাল।

প্রতিবছর লামা বন বিভাগের মাতামুহুরী রিজার্ভের বিসিত্মর্ণ বন ভূমিতে বন আইন উপেক্ষা করে তামাক চাষ হচ্ছে। গত বছর বন বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারীর কারণে মাতামুহুরী রিজার্ভে তামাক চাষ অনকটা নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও চলতি মৌসুমে পূনরায় সরকারী সংরক্ষিত রিজার্ভ অঞ্চলে তামাক চাষের জন্য স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট উদ্যোগ নিয়ে বৈঠক করেছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উদ্যোগ দাতাদের একজন। রিজার্ভ এলাকায় তামাক চাষ হলে উৎপাদিত হাজার হাজার মণ তামাক কিউরিং করতে সংরক্ষিত বনভূমির ভেতর নির্মাণ করা হয় শত শত তন্দুর (চুল্লী)। এসব চুল্লীতে জ্বালানী হিসেবে পোড়ানো হয় হাজার হাজার মণ কাঠ। এসব কাঠ স্থানীয় বনভূমি থেকে সংগ্রহ করা হয়। ফলে বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ছে বনাঞ্চল।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, তামাক চাষের কারণে কৃষকরা বার্জাস-সহ নানা রোগে ভূগছে। তামাক ক্ষেতে অতিরিক্তক ইউরিয়া সার, নানা ধরণের বিষ ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়। এতে তামাক চাষীরা চর্মরোগ, হাপানীসহ নানা রোগে ভূগেন। অপরদিকে, ধান চাষে তামাকের তুলনায় পরিশ্রমও তেমন একটা নেই।

ইউনাইটেড নিউজ ২৪ ডট কম/জসিম সরওয়ার/আলীকদম

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here