অতিথি পাখিতাহমিনা শিল্পী ::

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ। এর অপরূপ সৌন্দর্য কেবল আমাদেরকেই সিক্ত করে না বরং পৃথিবীর অনেক দেশ থেকেই ভ্রমন পিপাষুরা প্রতিবছরই এদেশের নয়নাভিরাম রূপ উপভোগ করতে আসেন।

শুধু মানুষই নয়, দূর-দূরান্তের দেশ থেকে পাখিরাও এদেশে আসে। তবে তারা পর্যটকদের মতো ভ্রমনের আনন্দে আসে না।

শীতপ্রধান দেশের তাপমাত্রা অধিকাংশ সময়ই শূণ্যের নিচে থাকে। তারপর তুষারপাত, তুষারঝড় তো আছেই। তাই প্রচন্ড ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য নভেম্বব্রের দিকে উত্তরমেরু, সাইবেরিয়া, ইউরোপ, হিমালয়ের আশেপাশের কিছু অঞ্চলের পাখিরা দলবেঁধে ঝাঁকে, ঝাঁকে চলে আসে অপেক্ষাকৃত কম ঠান্ডা অঞ্চলে।

এই পাখিদেরকেই বলে পরিযায়ী পাখি বা Migratory Bird.আমরা অতিথি পরায়ন বাঙালী জাতি অবশ্য এদেরকে বলি অতিথি পাখি। বাংলাদেশের অতিথি পাখিদের মধ্যে বেশীর ভাগই আসে হিমালয়ের পাদদেশের তিব্বতের লাখাদ থেকে সেন্ট্রাল ইন্ডিয়ান ফ্লাইওয়ে দিয়ে।

এসব পাখিদের মধ্যে বালিহাঁস, বুনোহাঁস, চখাচখি, হেরন, সারস, ডাহুক, কাদাখোঁচা, গায়ক রেন পাখি, ডুবুরি পাখি, রাজসরালি, গ্যাডওয়াল, পিন্টেইল, নীলশীর, পিয়াং, চীনা, পান্তামুখি, গিরিয়া, খঞ্জনা, পাতারি, জলপিপি উল্যেখযোগ্য।

পৃথীবিতে প্রায় ৫ লাখ প্রজাতির পাখি আছে। শুধু ইউরোপ ও এশিয়াতে আছে ৬০০ প্রজাতির পরিযায়ী পাখি। এসব পাখির মধ্যে প্রায় ১৫০ প্রজাতির পাখি আমাদের দেশে প্রতিবছর বেড়াতে আসে।

আর কয়েক মাস কাটিয়ে আবার বসন্তের সময়ে, মানে মার্চ-এপ্রিলের দিকে যখন শীতপ্রধান অঞ্চলের বরফ গলতে থাকে। তখন অতিথি পাখিরা নিজ দেশে ফিরে যায়।

মজার বিষয় হল, হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিলেও পাখিদের নিজের বাড়ি চিনতে ভুল হয় না। পরিষ্কার মেঘমুক্ত রাতের আকাশে যখন নক্ষত্র দেখা যায়। তখন অতিথি পাখিরা নির্বিঘ্নে পথ চলতে পারে। পাখিদের দেহে নাকি জন্মগত ভাবেই এমন কিছু আছে, যার সাহায্যে তারা কম্পাসের কাঁটার মত দিক চিনতে পারে।

প্রাকৃতিক ভাবেই আমাদের দেশে শীতকাল অসাধারন রূপবৈচিত্রে ভরা। আর তাতে বাড়তি মাত্রা এনে দেয় অতিথি পাখির আগমন। শীতকালে আমাদের দেশের জলাশয়,পুকুর,বিল ও হাওড় এলাকা পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠে। আকাশ জুড়ে নানা রঙের পাখির ঝাঁক বেঁধে উড়ে যাওয়া।

ঝিলের জলে শাপলা-শালুকের ফাঁকে ফাঁকে চলে পাখিদের জলকেলি আর ডুব সাতারের খেলা। সে এক অদ্ভুত মোহনীয় পরিবেশ। চোখে না দেখলে উপলব্ধি করা যায় না।

আমাদের দেশের অতিথি পাখিদের আবাসস্থল গুলোর মধ্যে ঢাকার মিরপুরের চিড়িয়াখানা,জাতীয় উদ্যান ও সিরামিক লেক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেক, মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওড়, সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়া হাওড়, দিনাজপুরের রামসাগর ও বরিশালের দূর্গাসাগর অন্যতম।

অসংখ্য পর্যটকসহ প্রতিদিন অনেকেই এদের দেখতে ভীড় করে এসব অঞ্চলে। হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে শুধুমাত্র একটু আশ্রয়ের জন্য আমাদের দেশে আসা এই পাখিরা আমাদের বন্ধু। এরা প্রাকৃতিক ভারসম্য রক্ষায় যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। পাশাপাশি পর্যটন শিল্পেও অর্থনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। অথচ শুধুমাত্র টাকার লোভে আর শখে শিকারের আনন্দে আমরা পাখি শিকার করি।

সরকারের উচিত সঠিক আইন প্রনয়ণ ও এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে পাখি শিকারি ও ক্রেতা উভয়কে এধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা নিশ্চিত করা।

অবশ্য পরিবেশ অধিদপ্তর ইতিমধ্যে হাকালুকি হাওড়ের ৫টি বিলকে অতিথি পাখির অভয়াশ্রম ঘোষনা করেছে। কিন্তু শুধুমাত্র সরকারী পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে থাকলেই চলবে না। বরং আমাদেরকেও সচেতন হতে হবে এবং অতিথি পাখিদের অভয়াশ্রম নিশ্চিত করতে হবে।

 

tahmina_shilpi@yahoo.com

 

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here