গাজী হানিফ মাহমুদ, নরসিংদী প্রতিনিধি :: এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডে সবাইকে চমকে দিয়েছে নরসিংদীর আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ। বরাবরের মত কলেজটি সাফল্যের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে আসছে। কলেজটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এবারও শত ভাগ পাস করে ধারাবাহিকতা সুনাম অক্ষুন্ন রেখেন কলেজটি।
শনিবার দুপুরে ফলাফল ঘোষণার পর থেকে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এইচ এসসি পরীক্ষায় এ বছর কলেজ থেকে ৪৪৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে সবাই পাস করেছেন। তাঁদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৩৮০ জন। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশ নেওয়া ১৯২ জনের মধ্যে ১৮১ জন, ব্যবসায় শিক্ষা থেকে ১৭৩ জনের মধ্যে ১৫৭ জন ও মানবিক বিভাগের ৮২ জনের মধ্যে ৪২ জন। তবে কলেজটিতে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া ২৭৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করলেও শিক্ষকদের প্রচেষ্ঠায় ৩৮০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
নরসিংদীতে মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের অঙ্গীকার নিয়ে বিশিষ্ট শিল্পপতি থার্মেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল কাদির মোল্লা ২০০৬ সালে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে প্রতিষ্ঠা করেন আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ। বর্তমানে ৪৭ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার সার্বিক তত্ত্বাবধানে কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে কলেজটি পরিচালিত হচ্ছে।
কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর এ পর্যন্ত ৬ষ্ঠ বারের মত শত ভাগ পাসসহ ২০০৯ সালে ঢাকা বোর্ডে পঞ্চম ও সারা দেশে ষষ্ঠ, ২০১০ সালে নরসিংদী জেলার সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ২০১১ সালে ঢাকা বোর্ডে মেধা তালিকায় সপ্তম ও শত ভাগ পাসে চতুর্থ স্থান দখল করে, ২০১২ সালে পাশের শতভাগ পাশ করে টপ টুয়েন্টিতে সেরা বিশে দ্বিতীয় স্থান অর্জন, ২০১৩ সালে ঢাকা বোর্ডে সেরা বিশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান ও ২০১৪ সালে ঢাকা বোর্ডে সেরা বিশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান দখলের গৌরব অর্জন করে ছিলেন কলেজটি।
এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে ২০১৫ সালে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় ঘোষিত উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফলে প্রতিষ্ঠানটি এবারও শত ভাগ পাস করে গৌরব অর্জন করে নেয় মফস্বল শহরের এই কলেজটি। তাদের এ সাফল্যে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা হেসে গেয়ে আনন্দ ও উল্লাসে মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা।
জিপিএ-৫ পাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আশফাক ইবনে মিল্লাত শুভ বলেন, আমার এ সাফল্যের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান আমার মা ও কলেজের শিক্ষকদের। তাঁরা কখনো পিতা-মাতা, কখনো বড় ভাইবোনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আমাদের পাঠদান করেছেন। আমার এ সাফল্য তাঁদের উৎসর্গ করতে চাই।
বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থী আবিদা সাইমা বিন সফিক জানান,এ সাফল্যের কারণ হিসেবে আমার আব্বু ও কলেজের শিক্ষকদের সঠিক দিকনির্দেশনা, নিয়মিত ক্লাস, বিশেষ ক্লাস, হোম ভিজিট, টিউটোরিয়াল ও মাসিক পরীক্ষার কথা। এছাড়া কলেজের শিক্ষকেরা নিয়মিত বাসায় এসে খোঁজখবর নিতেন। এ কারণে প্রতিনিয়ত লেখাপড়ায় ব্যস- থাকতে হয়েছে। তাই আজ আমাদের এ সাফল্য।
জিপিএ-৫ পাওয়া মানবিক বিভাগের অপর এক শিক্ষার্থী সোহানা আহম্মেদ বলেন,আমি এসএসসিতে জিপিএ ৪.২৫ পয়েন্ট নিয়ে এ কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম। আমার পিতা-মাতার অনুপেরনা ও এ কলেজের উপাধ্যক্ষ মাহমুদুল হাসান স্যারের বিশেষ উৎসাহে আমি সাফল্যের দ্বার প্রান্তে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি।
জিপিএ-৫ পাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবর মন্জিল এ মিল্লাত বলেন, পিতা-মাতার কাছে সন্তানে সাফল্য সবচেতে আনন্দের। আমার এ ছেলে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল। এবার এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছে, আমি মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া প্রার্থনা করছি। এর সাথে সাথে তার কলেজের শিক্ষককে নিকট কৃতজ্ঞ প্রকাশ করছি তাদের অনুপেরনাই এ সাফল্যের অর্জন।
কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুল কাদির মোল্লা কলেজের সাফল্যে উচ্ছাসে বলেন,নরসিংদীতে মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের অঙ্গীকার নিয়ে কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। আজ স্বপ্ন পূরণ হয়েছে, সার্থক হয়েছে আমার জীবন।
এ সাফল্য সামনে এগিয়ে চলতে আরও অনুপ্রাণিত করবে। সরকারের নীতি মালার কারেণ এখন আরটপ টুয়েন্টি নির্ধারণ করা হচ্ছে না। তাতে আমাদের কোন দু:খ নেই। আমাদের সন্তানেরা রাত-দিন নিরলস প্রচেষ্ঠা করে আমাদের জন্য ভালো ফলাফল বয়েএনেছে। যদি এবারও টপ টুয়েন্টি নীতিমালা থাকত তাহলে আমি আশা করি আমার এ কলেজ প্রথম স্থান অধিকার করত।
আবদুল কাদির মোল্লা বলেন, এ সাফল্য আমার একা নয়, শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নয়, পুরো নরসিংদীবাসীর। এ সাফল্য পুরো মফস্বল এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। আমরা আবারও প্রমাণ করতে পেরেছি, মফস্বলের খেটে খাওয়া মানুষের সন্তানেরা অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকলেও তাদের পক্ষে ভালো ফল করা সম্ভব।
কলেজের অধ্যক্ষ ড.মশিউর রহমান মৃধা বলেন, আমরা প্রতিবছরের মতো এ বছরও আমাদের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছি। ঢাকা বোর্ডে সে খানে পাশের হার ৬৮.১৬% এবং গত বছর পাশের হার ছিল ৮৪.৫৪% সে খানে আমাদের পাশের হার শতভাগ অব্যাহত আছে। অপরদিকে জিপিএ-৫ এর সংখ্যায় যে খানে ঢাকা বোর্ডে গত বছরের তুলনায় এবার অর্ধেকে নেমে এসেছে, সে খানে আমাদের ৪৪৭ জন শিক্ষার মধ্যে ৩৮০জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। আমাদের এ সাফল্যের পিছনে একঝাক তরুর শিক্ষক ও প্রতিশিক্ষার্থীর পেছনে রয়েছে গাইড শিক্ষক।
আমি মনে করি একজন প্রতিষ্ঠান প্রধান যদি সকাল সন্ধা ও মধ্যরাত পর্যন্ত পরিশ্রম করে তবে সেই প্রতিষ্ঠানের সাফল্য আসবেই।
তিনি আরো বলেন, এ সাফল্য শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বিত প্রচেষ্টার ফল। দেশের সব কলেজের শিক্ষকেরা যদি সৎ ইচ্ছা ও আন্তরিকতা নিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দান করেন, তাহলে সাফল্য অর্জন করা মোটেও কঠিন কিছু না। সরকার যে সৃজনশীল প্রদ্ধতি চালু করেছে তার জন্য শিক্ষকদের কে প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করে নিলে শিক্ষার্থীরা আরো ভালো ফলাফল করতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস।
কলেজের উপাধ্যক্ষ মো: মাহমুদুল হাসান রুমি বলেন, তুলনা মূলক ভাবে এবারও আমাদের ফলাফল ভালো। আমাদেও অতিতের সাফল্যতার ধওে রাখতে পেরেছি। তাই মহান আল্লাহর নিকট কৃতজ্ঞ।