3-1বাংলা সাহিত্যের মহানায়ক সর্বাধিক জনপ্রিয় ও পঠিত নন্দিত লেখক, চলচ্চিত্রকার এবং নাট্যকার-নির্মাতা হুমায়ূন আহমেদের ৬৮তম জন্মদিন আজ।

১৯৪৮ সালের এই দিনে ময়মনসিংহের কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হওয়ার সুবাদে তাকে দেশের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে থাকতে হয়েছে। এ কারণে তাকে স্কুল ও কলেজও পাল্টাতে হয়েছে ঘন ঘন। তিনি গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারপর পলিমার ক্যামিস্ট্রির ওপর পিএইচডি ডিগ্রি নিয়ে যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি বিভাগে শিক্ষকতায়।

দীর্ঘদিন সম্পৃক্ত থাকার পর তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে পুরোমাত্রায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন। তার সাহিত্যিক জীবনে অসংখ্য জনপ্রিয় উপন্যাস রয়েছে। বাংলাদেশের পাঠককে ধরে রাখার ক্ষেত্রে তার যে অবদান তা সাহিত্যপ্রেমীমাত্রই বুঝতে পারেন। তার রচিত প্রতিটি বই পাঠক গ্রহণ করেছেন সাদরে।

বাংলাদেশের মিডিয়া অঙ্গনে অন্যতম শক্তিশালী একটি জায়গা দখল করে আছেন বাংলা সাহিত্যের এ মহানায়ক। তার রচিত উপন্যাস ও গল্প নিয়ে টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। বিশেষ করে হিমু, মিসির আলী আর বাকের ভাইয়ের মতো চরিত্র তৈরিতে তিনি যে লেখনীর দক্ষতা দেখিয়েছেন তাতে তাকে ও তার সৃষ্টিকে আজীবন মনে রাখবেন পাঠক।

হিমু সিরিজের বই, মিসির আলী সিরিজের বইসহ শ্রাবণ মেঘের দিন, অপেক্ষা, রুপার পালঙ্ক, লীলাবতী, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক রচনা জ্যোস্না, জননীর গল্পসহ অসংখ্য সুপাঠ্য বই তিনি উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য। তার বেশ বড় মাপের অবদান রয়েছে বাংলাদেশের নাট্যজগতে। তার রচিত অনেক উপন্যাস ও গল্প নিয়ে রচিত হয়েছে নাটক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক তার চিত্রনাট্যে তৈরি হয়েছে। এসব ধারাবাহিক ও একক নাটকের মধ্যে রয়েছে ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘অয়োময়’, ‘বহুব্রীহি’ ‘কোথাও কেউ নেই’ প্রভৃতি। যেগুলোর কথা পাঠক চিরদিন মনে রাখবেন। তার রচিত উপন্যাস অবলম্বনে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে ‘আগুনের পরশমণি’, ‘আমার আছে জল’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘চন্দ্রকথা’, ‘দুই দুয়ারি’, ‘দূরত্ব’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’, ‘নন্দিত নরকে’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’, ‘প্রিয়তমেষু’।

তার সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ঘেটুপুত্র কমলা’। হুমায়ূন আহমেদ তার অনবদ্য রচনা, চিত্রনাট্য ও পরিচালনার জন্য অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন বিভিন্ন মাধ্যম থেকে। এর মধ্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, শিশু একাডেমি পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, বাচসাস পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, জয়নুল আবেদীন স্বর্ণপদক প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তার অন্ত্রে ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০১২ সালের ১৯শে জুলাই আমেরিকার নিউ ইয়র্কে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। এদিকে, বরাবরের মতো এবারও নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উপলক্ষে থাকছে বিশেষ নানা আয়োজন। এদিন সকালে নুহাশ পল্লীতে তার কবরস্থানে পুস্পস্তবক অর্পণ করার পাশাপাশি দোয়া পাঠ করবেন তার পরিবারের সদস্য, সহকারী এবং ভক্তরা। এছাড়া এখানে আয়োজিত হবে মিলাদ মাহফিল। পাশাপাশি দিনটি উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পৃথকভাবে নানা আয়োজনের পরিকল্পনা নিয়েছে। সেই সঙ্গে হুমায়ূন আহমেদের নানাবাড়ি (জন্মস্থান) মোহনগঞ্জ ও নিজ গ্রাম কেন্দুয়ার কুতুবপুরেও আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন স্থানীয়রা।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here