রাড়ুলী ভূবন মোহিনী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়মহানন্দ অধিকারী মিন্টু, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি:: দেশে প্রথম ও ভারতীয় উপ-মহাদেশের দ্বিতীয় নারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রাড়ুলী ভূবন মোহিনী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। যার বয়স এখন ১৬৮ বছর। অবহেলিত ভূবন মোহিনীতে আজও লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। করা হয়নি জাতীয়করণ।

জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের (পিসি রায়) পিতা স্ত্রী ভূবন মোহিনীর নামেই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৬৮ বছরের পুরাতন নারী শিক্ষা জাগরণীর বিদ্যাপীঠ হিসেবে খ্যাত। যা খুলনা জেলার দক্ষিণে পাইকগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের কোল ঘেষা বিজ্ঞানী পিসি রায়ের জম্ন ভূমি রাড়ুলী ইউনিয়নে অবস্থিত।

জানা যায়, উপজেলার রাড়ুলী গ্রামে রত্নাগর্ভা মা ভূবন মোহিনীর গর্ভে ও রত্ন পিতা হরিশ্চন্দ্রের ঔরষে জন্মগ্রহণ করেন ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (পিসি রায়)। তার জন্মের ১১ বছর পূর্বে নারী শিক্ষা জাগরণীর জন্য পিতা হরিশ্চন্দ্র রায় ১৮৫০ সালের ৩ মার্চ উপজেলার রাড়ুলী গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেন নিজ স্ত্রীর নামে রাড়ুলী ভূবন মোহিনী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। যার প্রথম ছাত্রী হিসেবে ভর্তি হন ভূবন মোহিনী নিজে।

এলাকাবাসী জানায়, এই বিদ্যালয়টি বাংলাদেশের প্রথম নারী শিক্ষার বিদ্যাপীঠ। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর প্রায় ১শ বছর বৃটিশ শাসন ব্যবস্থা, ২৩ বছর পাকিস্তানী শাসন ব্যবস্থা এবং স্বাধীনতার ৪৭ বছরে আজও কারও নজরে পড়েনি এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠটি।

দেশের শতশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ হলেও কারোর নজর পড়ছে না এই পুরাতন বিদ্যাপীঠের দিকে। প্রতি বছর ভূবন মোহিনীর গর্ভজাত সন্তান আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের (পিসি রায়) জন্ম ও মৃত্যু দিবস আড়ম্বরের সাথে পালনের জন্য এমপি, মন্ত্রী সহ সরকারের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা রাড়ুলীতে আগমন করে থাকেন। অথচ যে পিতা-মাতা লালন-পালন করে স্যার পিসি রায়কে জগদ্বিখ্যাত বিজ্ঞানী তৈরী করলেন তাদের দিকে নজর রাখেন না। জানার চেষ্টা করেন না তারা আমাদের জন্য কি রেখে গেছেন। কার নামে কি রয়েছে।

রাড়ুলী ভূবন মোহিনী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়আরো জানা যায়, ভারতীয় উপ-মহাদেশের প্রথম সাখাওয়াত মেমোরিয়াল গার্লস স্কুল-এর পরেই দ্বিতীয় রাড়ুলী ভূবন মোহিনী বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। যা বাঙালী তথা বাংলাদেশের জন্য প্রথম বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সহ সকল দপ্তরে পরিচিত নাম।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় হয়ত ভুলেই গেছে এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠের নাম বা কেউ হয়তো চিন্তাও করেননি নারী জাগরণের জন্য প্রথম বিদ্যাপীঠটি আজও অবহেলিত রয়েছে। গতানুগতিক দৃষ্টিকোন ছাড়া কেউ ভিন্ন নজর দেননি এই বিদ্যাপীঠটির দিকে। বর্তমানে প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত ও ২০জন শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছে এই বিদ্যালয়ে।

বিদ্যালয়ের সভাপতি ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল মজিদ গোলদার জানান, বাংলা নারী জাগরণের প্রথম বিদ্যাপীঠে সভাপতি হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজও বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ হয়নি বা উল্লেখযোগ্য উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। মনে করি সারা বাংলাদেশে যত বালিকা বিদ্যালয় রয়েছে প্রথমে এটিই জাতীয়করণের আওতা আসা উচিত ছিল; তা হয়নি। এটা আমাদের তথা সমস্ত বাঙালীর জন্য হতাশাজনক। আমি শিক্ষাবান্ধব প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট অত্র বিদ্যালয়টি জাতীয়করণের জন্য তার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

গত ২ এপ্রিল বিদ্যালয়টি উন্নয়নের জন্য আসেন নবলোক, খুলনা জোনের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রেজাউল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন খুলনার দৌলতপুর মেট্টো থানার উপ-সহকারী প্রকৌশলী গৌতম মজুমদার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও শিক্ষক মন্ডলী।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here