'আগামী চার বছর দেশ চালানো সরকারের পক্ষে অনেক কঠিন হবে'fইউনাইটেড নিউজ ডেস্ক :: দেশে চলমান রাজনৈতিক সংকট চলতে থাকলে আগামী চার বছর দেশ চালানো ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষে অনেক কঠিন হবে।

এজন্য সরকার ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় বসা উচিত এবং চলমান পরিস্থিতি থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করা।

শনিবার সন্ধ্যায় বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপে আলোচক ও দর্শকদের মধ্য থেকে এসব কথা উঠে এসেছে। রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটির ১০৫তম পর্ব হয়।

এতে প্যানেল সদস্য ছিলেন আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফারুক খান এমপি, বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল অব. মাহবুবুর রহমান, সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন এবং বাংলাদেশ অ্যালায়েন্স ফর উইমেন লিডারশিপ’র নির্বাহী পরিচালক নাসিম ফিরদৌস।

অনুষ্ঠানে খাইরুন তামান্না নামের এক দর্শক জানতে চান- বর্তমান সংকটের একটি রাজনৈতিক সমাধান না করে বাংলাদেশের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশে সরকারের পক্ষে কি সুষ্ঠুভাবে আগামী চার বছর দেশ পরিচালনা করা সম্ভব? তার মতে, জনগণের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত।

কিন্তু রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ।  উত্তরে ফারুক খান স্বীকার করেন, “বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে রাষ্ট্র পরিচালনা করা সরকারের পক্ষে আসলেই কঠিন হবে।” তিনি দাবি করেন, “মূলত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্বের বাইরে কোনো কাজ করছে না। গত দেড় মাসে দেশের পরিস্থিতির অনেক উন্নয়ন হয়েছে।”

ফারুক খান বলেন, “শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হলেই সংলাপ হতে পারে। আর বিএনপি- জামায়াত তাদের অবরোধ হরতাল তুলে নিলেই দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হতে পারে। বিরোধীদল হরতাল-অবরোধ তুলে নিলে আমরা আলোচনায় বসবো সে নিশ্চয়তা আমি দিতে পারবো না, কিন্তু আমরা সব সময়ই আলোচনায় বসতে রাজি ছিলাম।”

এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “বর্তমান অবস্থায় আগামী চার বছর দেশ চালানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা যদিও দেশ স্বাভাবিকভাবে চলবে বলছেন, তারাও জানেন আসলে কতদিন এভাবে চলা সম্ভব।”

তিনি বলেন, “সাধারণভাবেও আমাদের দেশে একটি পারফেক্ট নির্বাচন হলে তিন বছর পর সরকারের জনপ্রিয়তা থাকে না। আর বর্তমান সরকার আইনগতভাবে অবৈধ নয়। তবে এ সরকারে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিও নয়।১০ থেকে ১৫ ভাগের বেশি ভোট নির্বাচনে পড়েনি। যদিও কাগজে-কলমে বেশি দেখানো হয়েছে…।

সাবেক এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, “পেট্রলবোমার মারার বিষয়টির সঙ্গে খুব বিপজ্জনক কিছু উপাদান চলে আসছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে, যা দেশের রাজনীতির জন্যও খুব মারাত্মক হবে।”

মাহবুবুর রহমান বলেন, “বর্তমান অবস্থায় খুব দ্রুতগতিতে ধস নামছে। তাই চার বছর কেন, এক সপ্তাহ, এক মাস টিকে থাকাও সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। আর এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ জনগণ। দেশকে সরকার গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলের উদ্যোগকে সরকারের স্বাগত জানানো উচিত।”

নাসিম ফিরদৌস বলেন, “ বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি এখন চলছে, ইয়েমেন বা সোমালিয়ার মতো দেশগুলোতে কিন্তু এভাবেই ধস নেমেছে।

তিনি বলেন, “এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সরকার যেমন ভূমিকা রাখতে পারে, তেমনি বিরোধীদলও। তারা হরতাল-অবরোধ তুলে নিক, এরপর সহিংসতা হলে আমরা সরকারের জবাবদিহিতা চাইবো। আমাদের দেশে কি লোক নেই, যাদেরকে নিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে। বিদেশীদের চাপ লাগবে কেন?”

অনুষ্ঠানে দর্শকরা বলেন, আর কত লোক মারা গেলে রাজনীতিবিদদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে? এভাবে সাধারণ জনগণকে ভোগান্তির শিকার না করে সরকার ও বিরোধীদলের উচিত আলোচনায় বসে সংকটের সমাধান করা।

অনুষ্ঠানটির প্রযোজনা করেন ওয়ালিউর রহমান মিরাজ এবং উপস্থাপনা করেন আকবর হোসেন। বিবিসি মিডিয়া অ্যাকশন এবং বিবিসি বাংলার যৌথ আয়োজনে অনুষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। এতে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত বিষয়ে দর্শকরা সরাসরি প্যানেল সদস্যদের কাছে প্রশ্ন বা মতামত প্রকাশ করতে পারেন।

Print Friendly, PDF & Email

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here